বাংলাদেশের বাজারে এখন ফলের সমারোহ। চারিদিকে নানা রকম ফলের সুবাস। গ্রামবাংলার এসব ফলে ছেয়ে গেছে শহরের অলিগলি ও বাজার। বছরের আর কোনো মাসে এত ফলের আগমন ঘটে না। তাই তো ভুল করে অনেকে জ্যৈষ্ঠ মাসকেই ‘মধুমাস’ বলে ফেলেন।
Advertisement
জ্যৈষ্ঠ মাসে আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, তরমুজ, ডেউয়া, লটকন, কালো জাম, গোলাপজাম, বেতফল, গাব, জামরুল, আতাফল, কাউ, পানিতাল, বেল, পেঁপে, করমচা, চালতা, কামরাঙা, জলপাই, আঁশফল, দেশি ড্রাগন ও শরিফাসহ নানা রকম ফল আসে বাজারে।
এ ফলকে কেন্দ্র করে গ্রামাঞ্চলে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে নিমন্ত্রণ থাকে। নিজের গাছের বিভিন্ন ফল নিয়ে বেড়াতে যান আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। পাশাপাশি শহরেও ফল উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ সময় নতুন নতুন ব্যবসায়ীর আগমন ঘটে। অস্থায়ী তাবু করেও বিক্রি হয় ফল। অনলাইনেও জমে ওঠে ফলের বেচাকেনা।
আরও পড়ুন: হলুদ তরমুজ চাষে কৃষকের মুখে হাসি
Advertisement
আম-লিচুর জন্য বিখ্যাত অঞ্চলগুলোতেও জমে ওঠে অস্থায়ী ব্যবসা। মৌসুমী ফলের ব্যবসা করতে দেখা যায় অন্য পেশার মানুষকেও। কারণ ফল পেকে গেলে তা আর বেশিদিন ঘরে রাখা যায় না। অন্য ফসলের পাশাপাশি দেশীয় ফলের চাষ করেন অনেক কৃষক। এ থেকে বাড়তি আয়ও করেন তারা।
অল্প সময়ের মধ্যে ফলের মৌসুম শেষ হয়ে যায় বলে অনেকেই ফল ব্যবসাকে পার্ট টাইম কাজ হিসেবে নিয়েও লাভবান হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ফল বিক্রি করতে দেখা যায় বিভিন্ন পেশার মানুষকে। অনেক সবজি বিক্রেতাকেও এ মৌসুমে ফল বিক্রি করতে দেখা যায়।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যালয়ে ফল উৎসবের আয়োজন করে। বাজার থেকে হরেক রকম ফল কিনে সহকর্মীদের নিয়ে এ উৎসব পালন করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও ফল উৎসব পালন করে। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও ফল উৎসবের আয়োজন করা হয়।
আরও পড়ুন: লিচুর ফলন ও দামে খুশি মেহেরপুরের চাষিরা
Advertisement
এই মৌসুমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ‘গ্রীষ্মকালীন ছুটি’ ঘোষণা করা হয়। যে কারণে ফলের রসে রঙিন করতে গ্রামের বাড়িতে ছুটে যান তারা। এমনকি গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের উদ্যোগেও ফল উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ বছরই দেশীয় ৭০ রকমের ফলের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে লক্ষ্মীপুরের একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের।
সারাবছর বিদেশি ফলে দাপট থাকলেও জ্যৈষ্ঠ মাসে পুরো বাজার থাকে দেশীয় ফলের নিয়ন্ত্রণে। এ সময়ে বিদেশি ফলের আনাগোনা কম লক্ষ্য করা যায়। কেননা বাঙালির পছন্দের ফলের প্রতি তীব্র আকর্ষণ লক্ষ্য করা যায় এ সময়। তাই তো আমরা কবির সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে পারি, ‘মামার বাড়ি ঝড়ের দিনে আম কুড়াতে সুখ/ পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ।’
এসইউ/এমএস