জাগো জবস

উৎসব ঘিরে ই-কমার্সে কেনাকাটা

ব্ল্যাক হলিডে, সাইবার মানডে-এমন অনেক নতুন শব্দের সঙ্গে আমরা ই-কমার্সের মাধ্যমে পরিচিত হয়েছি। বিশ্বব্যাপী বিশেষ অফার এবং উৎসব সেলের ক্ষেত্রে এখন প্রচলিত ব্যবসাকে অনেকাংশে ছাড়িয়ে গিয়েছে ই-কমার্স। অনলাইন ব্যবসায় এক ঘণ্টার একটি অফারে শত কোটি টাকার; এমনকি হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হতে পারে। তাই উৎসব কেন্দ্রিক ই-কমার্স সবসময় একটা বিশেষ স্থান দখল করে রাখবে।

Advertisement

কোনো জাতীয় উৎসবে ক্রেতাদের যেমন ব্যস্ততা থাকে তেমনি আবার প্রয়োজনও থাকে। এই দুটোকে এক করে নিজের প্রয়োজন মেটাতে হলে অনলাইনই তাদের ভরসাস্থল হয়ে উঠে। বাংলাদেশে ঈদ ছাড়াও পহেলা বৈশাখ, ভালোবাসা দিবসে কেনাকাটার হিড়িক পড়ে। তবে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিগত ২০১৮ সাল থেকে টেন-টেন বা দশ-দশ (১০-১০) নামে একটি বিশেষ ক্যাম্পেইন ডিজাইন করেছে। এটিও এখন দেশের অনলাইন ক্রেতাদের জন্য একটি উৎসব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সচরাচর সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা হয় ঈদের সময়। এই সময় ই-কমার্স খাতের মোট লেনদেন ৩০-৪০ শতাংশ বেড়ে যায় এবং ফেসবুক উদ্যোক্তাদের কারও কারও বেচাকেনা রমজান মাসে দ্বিগুণ বা তার বেশি বেড়ে যায়। তবে ২০২৩ সালে এই বিক্রি সবার ক্ষেত্রে আশানুরুপ হয়নি। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়াতে আমদানি কমেছে, কমেছে আমদানি নির্ভর পণ্যের বেচাবিক্রিও। আর দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়াতে মধ্যবিত্তরাও তাদের ঈদের বাজেটকে কাটছাট করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও অন্যান্যবারের মতো এবারও ঈদের বাড়তি চাপ সামলাতে কুরিয়ার কোম্পানিগুলো সেবা দিতে হিমশিম খায়। ২০২৩ এর রমজানেও অনেক কুরিয়ার কোম্পানি ঈদের ৪-৭ দিন আগে পণ্য নেওয়া বন্ধ করে দেয়। কারণ তাদের নিয়মিত কর্মী দিয়ে বাড়তি চাপ সামলানো সম্ভব হয়নি। তবে তারা চাইলে উৎসবকালীন রিজার্ভ ও পার্টটাইম কর্মী রাখতে পারেন।

আরও পড়ুন: রাফসান সাবাবের ‘হোয়াট এ শো’

Advertisement

বিগত দুই বছর ২০২০ এবং ২০২১ সালে করোনার প্রভাবে পূজায় বাজারে খুব সাড়া পড়েনি। ২০২০ সালে শপিং সেন্টারে ভিড় যেমন ছিল না, অনলাইনেও খুব বেশি সাড়া পড়েনি। কিছু বিক্রি বেড়েছে পোশাক ও গয়নায়। ২০২২ কিংবা ২০২৩ সালেও যারা পোশাক ও গয়না বিক্রি করে তাদের পূজার অফারে সাড়া পড়েছে তবে সেটা খুব উল্লেখযোগ্য নয়। বর্তমানে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এর একটি কারণ হতে পারে। অন্যান্য বছর দেশের অনেকে পূজার শপিং করতে কলকাতায় যান। এবছর এই হারও আগের মতো নয়। অনলাইন শপ ও মার্কেটপ্লেসগুলো পূজাকে ঘিরে নানারকম অফার দেয়। এসব অফারে তাদের ৫ শতাংশ পর্যন্ত বিক্রি বাড়তে দেখা যায়। বিশেষ করে ফ্যাশন বা পোশাক বিক্রি ব্র্যান্ডগুলোর ৫-৭ শতাংশ বিক্রি বেড়ে যায়। যেসব ব্র্যান্ড পূজা উপলক্ষে বিশেষ ডিজাইন নিয়ে আসে তাদের বিক্রি আরও বাড়ে।

পূজা সনাতন ধর্মের উৎসব যাদের অনুসারীরা সংখ্যাগুরু নয়, সেকারণে পূজা ও ঈদের চিত্র একইরকম হয় না। পূজাতে যতটা কেনাকাটা বাড়ে, তারচেয়েও বেশি কেনাকাটা হয় ব্ল্যাক ফ্রাইডে কিংবা টেন-টেন সময়ে। তবে পূজা সংস্কৃতির রঙিন ও মনোমুগ্ধকর আবহটা ই-কমার্স সাইটগুলোতে ভালোভাবেই ফুটে ওঠে।

পূজাতে পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজারসহ বিভিন্ন গহনার দোকানে বেচাকেনা চলে। তবে অনলাইনে যতসামান্য কেনাকাটা বেড়েছে তা মূলত গহনা এবং ব্র্যান্ডের নতুন ডিজাইনের পোশাকে। এগুলো আবার ক্রেতারা অনলাইন থেকে কিনতে এখনো ততটা অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি।

সামনে দুটো উৎসব আসছে। ঈদুল আজহা ও দূর্গাপূজা। আশা করা যাচ্ছে এই দুটোতে বিগত বছরের ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির কারণ নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশংকাও রয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘হারমিজন’ পায়ে রিফাতুল হকের এগিয়ে চলার গল্প

উৎসবের সময় পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে গহনা বিক্রি হওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এজন্য অনেকে চান সরাসরি দেখেশুনে ক্রয় করতে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ বিভিন্ন উপলক্ষে ২০ শতাংশ ক্যাশব্যাক অফার করে। এরমধ্যে বইমেলা এবং বাণিজ্য মেলাও রয়েছে।

বাঙালির অন্যতম বড় উৎসব পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ। পহেলা বৈশাকে লাল সাদার জামার পাশাপাশি বিক্রি হয় খেলনা। সংখ্যায় কম হলেও হয়, কারণ সারাদেশে এই সময় মেলা বসে। মেলাতে যেমন কারুপণ্য বিক্রি হয় তার কিছুটা প্রভাব অনলাইনেও পড়ে। এই সময় দম্পতিরা তাদের একে অন্যের পোশাকের রং মিলিয়ে কিনতে পছন্দ করে।

ভালোবাসা দিবস পশ্চিমা সভ্যতার অংশ হলেও আমাদের দেশের মানুষের একটা বড় অংশ একে আপন করে নিয়েছে। এসময় উপহার দেওয়ার প্রবণতা থাকে বলে বিক্রিতে প্রভাব পড়ে। এসময় গহনা এবং কাপল ড্রেসের বিক্রি বাড়ে।

ব্ল্যাক ফ্রাইডে কিংবা টেন-টেন এর ক্ষেত্রে মূলত ক্রেতারা দাম বা সুবিধার কারণে কিনতে আগ্রহী হয়, অপরদিকে এসময় বিক্রেতারা ক্লিয়ারিং সেল করেন। দুই মিলিয়ে এসময় ই-কমার্স বা অনলাইন মাধ্যমে বিক্রি অনেক বাড়ে। ই-কমার্স খাতে উৎসব কেন্দ্রিকে কেনাকাটা ক্রমশ জমে উঠবে বলে আশা করা যায়।

লেখক: পরিচালক, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।

কেএসকে/এএসএম