চলতি বছরের গত ৪ এপ্রিল সকালে হঠাৎ রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ আগুন লাগে। আগুন যখন দাউ দাউ করে একের পর এক বঙ্গমার্কেট লাগোয়া কয়েকটি মার্কেটে ছড়িয়ে পড়তে থাকে তখন হঠাৎ কিছু দুষ্কৃতকারী হামলা চালায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের অফিসে। আগুনের সঙ্গে জীবন বাজি রেখে কাজ করা দমকল বাহিনীর কর্মীরা তখন দিশেহারা হয়ে পড়েন। অতর্কিত হামলায় অফিস থেকে বেরিয়ে আসেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
Advertisement
হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহিন আলম বাদী হয়ে বংশাল থানায় মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় জ্ঞাতনামা ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে। কিন্তু দেড় মাসের বেশি সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ২৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, মামলার তদন্ত প্রতিবেদন এখনো দাখিল করা হয়নি। তদন্ত এখনো চলমান। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় আরও আসামি আইনের আওতায় আনা হবে।
আরও পড়ুন>> বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড: হামলা-কাজে বাধা দেওয়ায় ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
Advertisement
ফায়ার সার্ভিস বলছে, আরও আসামি গ্রেফতার না করলে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব নয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের ওপর এমন হামলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। যাতে পরে এমন ঘটনা কেউ ঘটাতে সাহস না পায়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনার দিন আসামিরা সরকারি কাজে বাধা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, লোহার রড ও লাঠিসোঁটা দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। অতর্কিত এ হামলায় ভাঙচুর করা হয় ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন মডেলের ১৪টি গাড়ি, মেইন গেটের সেন্ট্রি পোস্ট, প্রশাসনিক ভবন ও সিনিয়র স্টেশন অফিসারের অফিস।
আরও পড়ুন>> গুলিস্তানের ‘রোজ মেরিনার্স ভবন’ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা
হামলায় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, হামলায় সিনিয়র কর্মকর্তাসহ আহত হন ফায়ার সার্ভিসের চার সদস্য। ঘটনাস্থলে থাকা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রুবেল খানও আহত হন।
Advertisement
মামলার এজাহারে বলা হয়, ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরে হামলায় সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। অতর্কিত এ হামলায় ভাঙচুর করা হয় ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন মডেলের ১৪টি গাড়ি, মেইন গেটের সেন্ট্রি পোস্ট, প্রশাসনিক ভবন ও সিনিয়র স্টেশন অফিসারের অফিস। হামলায় আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৯ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা। শুধু তাই নয়, হামলায় সিনিয়র কর্মকর্তাসহ আহত হন ফায়ার সার্ভিসের চার সদস্য।
আরও পড়ুন>> সায়েন্সল্যাবের শিরিন ম্যানশনকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা
মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করে বলেন, গত ৪ এপ্রিল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে জাতীয় জরুরিসেবা ৯৯৯ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অফিসার ও ফায়ারফাইটারদের সঙ্গে নিয়ে গাড়ি, পাম্প ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদিসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করি। আগুনের ভয়াবহতা দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশানুযায়ী বিভিন্ন স্টেশনের ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট, পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবক টিমের সহায়তায় আগুন নেভানোর কাজ চলছিল।
সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে সিদ্দিকবাজারে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে হামলার ঘটনা ঘটে। অজ্ঞাতনামা ২৫০-৩০০ জন হাতে লোহার রড, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। আরও পড়ুন>> ‘ক্ষতিগ্রস্তরা ঈদের আগেই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন’
উশৃঙ্খল জনতা একযোগে অফিসে প্রবেশ করে সরকারি কাজে বাধা দেয়। সেসময় তারা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের বিভিন্ন সদস্যকে মারধর শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম ও পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী জনতাকে থামাতে গেলে তারা তাদেরও হত্যার উদ্দেশ্যে ধাওয়া করে। তারা জীবন রক্ষার্থে দৌড়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অভ্যন্তরে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, অজ্ঞাতনামা আসামিরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ভেতরে প্রবেশ করে লোহার রড, লাঠি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ১৪টি বিভিন্ন মডেলের গাড়ি ভাঙচুর করে। তারা কইকা ভবন, মেইন গেটের সেন্ট্রি পোস্ট, প্রশাসনিক ভবন ও সিনিয়র স্টেশন অফিসারের অফিস ভাঙচুর করে।
আরও পড়ুন>> রাজশাহীর চার মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা
এসময় বাধা দিলে তারা ফায়ারফাইটার ইসলাম অন্তরকে লোহার রড দিয়ে ডান পায়ে আঘাত করে। উপ-পরিচালক বাবুল চক্রবর্তীকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠি দিয়ে তার মাথায় ও ডান হাতে সজোরে আঘাত করে গুরুতর জখম করে দুর্বৃত্তরা। চালক ইমন হোসেনকেও লাঠি দিয়ে পিঠে আঘাত করে জখম করা হয়। তারা সবাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সমীরণ মণ্ডল জাগো নিউজকে বলেন, মামলায় আসামির সংখ্যার তুলনায় গ্রেফতার আসামি কম বিষয়টি এমন নয়। অভিযান এখনো চলমান। আমাদের টিম সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ বিভিন্নভাবে আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন>> ঢাকার গাউছিয়া মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ: ফায়ার সার্ভিস
জানতে চাইলে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমান বলেন, বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অফিস ভাঙচুরের অভিযোগে ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলায় এখন পর্যন্ত ২৮ জন গ্রেফতার আছে। গ্রেফতাররা সবাই হামলা ও ভাঙচুরে জড়িত। এ ২৮ জনের ভেতরে বহিরাগত ও ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন। এ ঘটনায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক দিনমনি শর্মা জাগো নিউজকে বলেন, জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অপরাধীরা সরকারি ও জাতীয় সম্পদ ভাঙচুর করেছে।
আরও পড়ুন>> ‘আত্মীয়-স্বজনের ইফতারি-খাওন দিয়া কয়দিন চলুম’
ভাঙচুর করা গাড়ি ও অফিস মেরামতের বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, মামলাটি যেহেতু বিচারাধীন এ কারণে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। আদালত নির্দেশনার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হামলা-ভাঙচুরের বিষয়ে উপ-পরিচালক দিনমনি শর্মা বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণের সময় ৯৫ থেকে ৯৯ শতাংশ সাধারণ মানুষের সহযোগিতা পাই। কিন্তু কিছু অতিউৎসাহী লোক যাদের উদ্দেশ্য খারাপ ছিল- শুধু তারাই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
টিটি/এমএএইচ/এমএস