আমদানির খবরে বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা কমেছে। একমাসের ব্যবধানে ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকায় ওঠা পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি। তবে চিনি, ডিম, আদা, মাছ-মাংস চড়া দামেই রয়েছে। বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ ভালো হলেও দাম বেশি। বেশিরভাগ সবজির দামই কেজিতে ৮০ টাকার নিচে নয়। নিত্যপণ্যের দাম না কমায় দারুণ অস্বস্তিতে সাধারণ ক্রেতারা। ফলে পেঁয়াজের দাম সামান্য কমা তাদের কাছে কোনো সুখবর নয়।
Advertisement
শুক্রবার (২৬ মে) সকালে সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ক্রেতারা বলছেন, কয়েকমাসে বাজারে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির উত্তাপ সব কিছুতে ছড়িয়ে পড়ছে। অবস্থা এমন যে, মাছ-মাংস ছুঁয়ে দেখতেও ভয় পাচ্ছেন নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তরা।
সকালে শান্তিনগর বাজারে এসেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী এহসান আনসারী। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো হিসাব কষে চলা মানুষ আর ভালো মাছ বা মাংস খেতে পারছে না। কম দামে চাষের মাছ, ব্রয়লারও এখন কিনতে হচ্ছে বহু কষ্টে। সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। তাই সন্তানদের ভালো খাবার খাওয়াতে পারছি না। হিসাবের বাইরে গিয়ে কিনলে অন্য খরচে টান পড়ছে। সব পণ্যের দাম একসঙ্গে এভাবে বেড়ে যাওয়া কখনো দেখিনি।’
শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা দরে। খাসির মাংসের দাম প্রতি কেজি ১২৫০ টাকা। বকরির মাংস ১০০০ টাকা।
Advertisement
আরও পড়ুন>> খাতুনগঞ্জে গরম মসলার দামে কোরবানির ঈদের আঁচ
এদিকে, টানা কয়েক সপ্তাহ থেকে অস্থির ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাজার। প্রতি কেজি ব্রয়লার এখন ২৩০-২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি ডিমের দাম ৫০ টাকা। সেই উত্তাপ এখন ছড়িয়েছে মাছের বাজারেও। প্রকারভেদে সাধারণ চাষের মাছগুলোর দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত। ইলিশ-চিংড়ির পাশাপাশি দেশি (উন্মুক্ত জলাশয়ের) মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষের পাঙাস-তেলাপিয়া থেকে শুরু করে দেশি প্রজাতির সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। আগে বাজারে প্রতি কেজি পাঙাস বিক্রি হতো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, যা এখন ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় ঠেকেছে। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, যা আগে ১৮০-২০০ টাকায় কেনা যেতো।
আরও পড়ুন>> দারিদ্র্যসূচক কমেছে ভিখারি কমেনি
Advertisement
বাজারে সাধারণত গরিব ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা ব্রয়লার মুরগি এবং পাঙাস-তেলাপিয়া মাছের পরে বেশি নির্ভরশীল। তাদের মধ্যে অনেকে এসব নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
রামপুরা বাজারে রিকশাচালক কুদ্দুস মিয়া বলেন, ‘একটা দিন যে ভালো-মন্দ খাবো, সেই উপায় নেই। এগুলো দেখার কেউ নেই। গরিবকে নিয়ে কেউ ভাবে না। দিনে যে কয় টাকা আয় করি, তার মধ্যে যদি ২৫০ টাকার মাছ কিনি, অন্য খরচ কী দিয়ে হবে?’
আরও পড়ুন>> আদায় নৈরাজ্য, হাত ঘুরলেই বাড়ছে দাম
রামপুরা বাজারে মাছ বিক্রেতা এনামুল জানান, তিনি প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি করছেন ৬০০-১০০০ টাকায়। যা আগে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতেন। অন্যান্য চাষের মাছগুলোও বেশ বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাজা রুই, কাতলা, মৃগেল বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজিতে, যা আগে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা ছিল।
অন্যদিকে মুদি বাজারে তেল, চিনি, আটা, ময়দাসহ অন্যান্য বেশকিছু পণ্য বাড়তি দামে আটকে রয়েছে। প্রতি কেজি বোতলজাত সয়াবিন তেল ২০০ টাকা এবং চিনি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি।
আরও পড়ুন>> ফরিদপুরে পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমলো ২৫ টাকা
অন্যদিকে মসলার বাজারে আদার দামে অস্থিরতা কাটেনি। এক কেজি আদা কিনতে এখন গুনতে হচ্ছে ৩০০ টাকার বেশি। যা গত বছর এ সময় ছিল ৯০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে এখন আদার দাম তিনগুণ বেশি। ঈদুল ফিতরের পর থেকে বেড়েছে কেজিতে মানভেদে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। অন্যদিকে আমদানি করা চীনা রসুনের দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা ৩০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা।
বাজারে গ্রীষ্ম মৌসুমের সবজির সরবরাহ ভালো হলেও দাম চড়া। প্রতিকেজি বেগুন, করলা, বরবটি, ঝিঙা, পটল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মোটা দাগে ৬০ টাকার নিচে এক কেজি সবজি মিলছে না।
এনএইচ/এএএইচ/জিকেএস