# ১৭০ টাকার আদা চট্টগ্রামের আড়তে ২৪০ টাকা খুচরায় ৩০০-৩৫০ টাকা# বাজারে সংকট থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণহীন, সুযোগ নিচ্ছেন আমদানিকারকরা
Advertisement
আন্তর্জাতিক বাজারে আদার দর বাড়তি। আমদানি হয়ে বাংলাদেশে এসে সেই দাম আরও বেড়ে হয়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ। আমদানি পর্যায়ে প্রতিকেজি ১৭০ টাকায় কেনা আদা চট্টগ্রামে আড়তে এসে হচ্ছে ২৩০-২৫০ টাকা। সেই আদাই খুচরা দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকায়।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) চট্টগ্রামের বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, পাহাড়তলী এবং মহানগরী ও আশপাশের খুচরা বাজার ঘুরে দামের এ বিস্তর ফারাক দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আদার মূল বাজার চায়না। এবার চীনে বুকিং রেট বেড়ে যাওয়ায় দেশে আদার সংকট তৈরি হয়েছে। সংকট তৈরি হওয়ায় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে আদার বাজার। আর এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে আমদানিকারক সিন্ডিকেট। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকটে ব্যাংকগুলো এলসি (ঋণপত্র) দিতে অনীহা প্রকাশ করছে। এতে মূল আমদানিকারকরা এলসি করার সুযোগ না পেলেও দলীয় প্রভাবশালীরা এলসি করার সুযোগ পাচ্ছেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এলসি খুলে আদা আমদানি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রভাবশালীরাই।
Advertisement
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, যারা নাটের গুরু তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। অথচ মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন অভিযানের নামে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দুপুরে পাহাড়তলী পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায় আদার সংকট। কয়েকটি দোকানে আদা থাকলেও দাম চড়া। বাজারটিতে মিলছে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করা আদা। কিছু দোকানে পাওয়া যাচ্ছে দেশি আদাও।
বাজারটির পাইকারি দোকানদার এলাহী ট্রেডার্সে ইন্দোনেশিয়ান ও দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা কেজিতে। পাশের আরেকটি দোকানে ইন্দোনেশিয়ান আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। বিএম ট্রেডার্সে ভিয়েতনামি আদা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়।
বাজারের পুরোনো ব্যবসায়ী ফারুক ট্রেডার্সের মালিক ফারুক সওদাগর বলেন, বাজারে চায়না আদা একেবারেই নেই। এখন বেশিরভাগ ভিয়েতনামি আদা পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিকেজি ২৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারের মেসার্স আল আরাফাত ট্রেডার্সের মালিক মো. অজিউল্লাহ বাবলু জাগো নিউজকে বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। আড়তে প্রতিকেজিতে দুই টাকা লাভ করা হয়। এখানে বেশি লাভের সুযোগ নেই। তবে পাইকারিতে বস্তা হিসেবে ২৪০-২৪২ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হলেও খোলা হিসেবে প্রতিকেজি ২৫০-২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
Advertisement
তিনি বলেন, আদার বাজার এখন আমদানিকারকদের হাতে। এমনিতে রিজার্ভ সংকট রয়েছে। যে কেউ চাইলে আমদানি করতে পারছেন না। যারা আমদানির সুযোগ পাচ্ছেন, তারা আমদানি করে বন্দরে থাকতেই পণ্যের দর নির্ধারণ করছেন। সংকট থাকায় এ সুযোগ নিচ্ছেন প্রভাবশালীরা। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে আদার দাম কমে যাবে।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ের আড়তগুলোতে বৃহস্পতিবার ২৫০-২৬০ টাকায় ইন্দোনেশিয়া ও বার্মিজ আদা বিক্রি হয়েছে। মধ্যম চাক্তাই এলাকার ব্যবসায়ী আবুল বশর জাগো নিউজকে বলেন, বুধবারের চেয়ে বৃহস্পতিবার আদার দাম ২০-২৫ টাকা বেড়েছে। বুধবার বার্মিজ আদা কিনেছি ২২৫ টাকা কেজিতে। বৃহস্পতিবার কিনেছি ২৩০ টাকায়। ইন্দোনেশিয়ান আদা কিনেছি ২৪০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও খাতুনগঞ্জে ভিয়েতনামি আদা কেজি ২০০ টাকা, ভারতীয় কেরালা আদা ২২০ টাকা, মিয়ানমারের বার্মিজ আদা ১৮০-১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তিনি বলেন, আদা আড়তে রাখলে প্রতিদিন এক বস্তায় এক থেকে দেড় কেজি কমে যায়। এটিও দামে প্রভাব তৈরি করছে। আবার বড় আমদানিকারকরা আমদানি করে বেশি দামে বিক্রি করছেন। তাদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনে চাক্তাই খাতুনগঞ্জের আড়তে আনছেন অন্য ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের লামার বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বৃহস্পতিবার মো. ইদ্রিস জাগো নিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে আদার বুকিং রেট বেড়ে গেছে। চায়নার বুকিং রেট সবচেয়ে বেশি। চায়না আদায় প্রতিটন আড়াই হাজার ডলারে ওপরে। এতে দেশে আসতে প্রতিকেজি ৩২০-৩৩০ টাকা খরচ পড়বে।
‘ইন্দোনেশিয়া আদার বুকিং রেট ১৩শ থেকে ১৪শ ডলার। এসব আদা দেশে আসতে ১৭০-১৯০ টাকার মতো কস্টিং পড়বে। ভিয়েতনামি আদার বুকিং রেট ১১শ থেকে ১৩শ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু দেশে আসতে এসব আদার দাম ১৭০ টাকা কস্টিং পড়ছে। কস্টিং বেড়ে যাওয়ার পেছনে ওজনে ঘাটতিও একটি প্রভাবক। আদায় ঘাটতি রয়েছে। এক বস্তা আদায় দিনের ব্যবধানে এক কেজি কমে গেলেও কস্টিং কেজিতে ২০ টাকার মতো বেড়ে যাবে।
‘আদা ঠিকমতো আসতে পারছে না। টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য খালাস খরচ বেশি। কম দামে কিনলেও টেকনাফ বন্দরে আসতে ১৯০ টাকার মতো কস্টিং পড়ছে।’
তিনি বলেন, মূল ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছেন না। অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদরা আদার ব্যবসায় জড়িয়েছেন। তারা ব্যবসা করছেন। তাদের কাছ থেকে কিনে আসল আদা ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে হচ্ছে। তবে যা আসছে, তাতে বাজার চড়া থাকার কারণে সব শ্রেণির ব্যবসায়ীই লাভবান হচ্ছেন।
এদিকে খুচরা বাজারে ৩শ টাকা নিচে কোনো আদা পাওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রামের পটিয়ার মুন্সেফ বাজারে ইদ্রিস স্টোরে ভিয়েতনামি আদা ৩শ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। আবার নগরীর কাজীর দেউড়ি বাজার এলাকার মুদির দোকানগুলোতে ৩শ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে আদা।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় আদায় আমদানি অর্ধেকের নিচে নেমেছে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের বৃহস্পতিবারের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আদা আমদানি হয়েছে চার হাজার ৮১৬ মেট্রিক টন। অথচ এক বছর আগে একই সময়ে আদা আমদানি হয় ১০ হাজার ২৬২ মেট্রিক টন।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার ব্যারিস্টার বদরুজ্জামান মুন্সী জাগো নিউজকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার আদা আমদানি কম হয়েছে। ফ্রেশ আদা ৮১ সেন্ট হিসেবে শুল্কায়ন হয়। এবার ডলারের দাম বাড়তি থাকায় আমদানি খরচ কিছুটা বেড়েছে। তবে তা আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণ হওয়ার কথা।
এমডিআইএইচ/এএসএ/জিকেএস