দেশজুড়ে

থানা চত্বরের শোভা বাড়াচ্ছে বিষমুক্ত সবজি বাগান

পতিত থাকা একবিঘা জমিতে চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। ফলনও হচ্ছে আশানুরূপ। পুরো এলাকায় এখন সবুজের সমারোহ। মনোরম এই দৃশ্যের দেখা মিলবে বগুড়ার সোনতলা থানা চত্বরে।

Advertisement

পারিবারিক বিরোধের অভিযোগ জানাতে উপজেলার বালুয়াহাট গ্রামের বাসিন্দা আজমল হোসেন এসেছিলেন সোনাতলা থানায়। বাড়ি ফেরার সময় থানা থেকে তার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় বেগুনের পোটলা। পেশায় মুদি দোকানদার আজমল অভিযোগ দিতে এসে আইনি সেবার পাশাপাশি বিনা পয়সায় সবজি উপহার পেয়ে ভীষণ খুশি।

সোনাতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈকত হাসান থানা চত্বরে এই সবজি বাগানের উদ্যোক্তা।

পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’। এ ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহ দিতে থানা চত্বরে সবজির বাগান করা হয়েছে। এই সবজি কর্মরত পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি, আইনি সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষদেরও উপহার দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

ওসি সৈকত হাসান নিজ খরচেই থানার পতিত জমিতে বিষমুক্ত সবজি বাগান করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

সোনাতলা থানার কার্যক্রম পরিচালনায় এক একর জায়গা বরাদ্দ থাকলেও ব্যবহার হয়ে থাকে দুই বিঘার মতো। বাকি এক বিঘা জমি পতিত পড়ে ছিল। এই জমিতে গত মার্চ থেকে সবজির চাষাবাদ শুরু করে থানা কর্তৃপক্ষ। থানায় প্রবেশের শুরুতেই চোখে পড়বে এই সবজি বাগান।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইটের প্রাচীরে ঘেরা থানা চত্বরে শোভা পাচ্ছে সবজি বাগান। এ বাগানে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের বেগুন, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, লাউ, ঢ্যাঁড়শ ও মিষ্টিকুমড়া। শাকের মধ্যে রয়েছে লালশাক, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, পালংশাক ও ধনেপাতা।

পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা নিজেরাই এই সবজি বাগান পরিচর্যা করেন। থানায় সেবা নিতে আসা মানুষেরা এ সবজি বাগান দেখে জানালেন নিজ বাড়িতে সবজি চাষে আগ্রহের কথা।\

Advertisement

পেশায় অটোভ্যান চালক রোস্তম মিয়া জানান, মাসে অন্তত দেড় হাজার টাকার শাক-সবজি কিনতে হয়। স্বল্প পরিষরে নিজেই যদি এ চাষ করা যায় তাহলে অর্থ-স্বাস্থ্য দুইয়েরই উপকার হবে।

থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন মিঞা বলেন, পরিবারের জন্য ভালো সবজি কেনা ভেজালের যুগে অসম্ভব। আমরা নিজেরা থানা চত্বরে সবজি বাগান করায় এখান থেকে সবজির চাহিদা পূরণ করছি। পাশাপাশি সেবাপ্রার্থীদের বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে এ সবজি।

সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) সোহরাব হোসেন বলেন, এই বাগান থানায় সেবা নিতে আসা মানুষদের বাড়িতে শুধু জৈবসার প্রয়োগে এমন সবজি বাগান গড়ে তুলতে উৎসাহ জোগাবে। তাদের সবসময় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও পরামর্শ অব্যাহত থাকবে।

ওসি সৈকত হাসান জানান, থানা চত্বরে সবজি বাগান করার উদ্যোগ পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ও সহকারী পুলিশ সুপার (শিবগঞ্জ সার্কেল) তানভীর হাসানের দিকনির্দেশনায় করা হয়েছে। শুধু জৈবসার প্রয়োগে এবং কোনো রকম বিষ ছিটানো ছাড়াই সবজিগুলো চাষ করা হচ্ছে।

কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় এখোনো ৩৮৩ হেক্টর জমি অনাবাদি পড়ে আছে। এই জমিও সবজি চাষ করার উপযোগী।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) এনামুল হক বলেন, আমরা চেষ্টা করছি জেলায় যেন কোনো ধরনের অনাবাদি জমি পড়ে না থাকে। যেসব পরিত্যক্ত জমি অনাবাদি আছে সেখানে শাকসবজি চাষ করা যেতে পারে। আমরা এজন্য জমির মালিকদেরও উদ্বুদ্ধ করছি।

এফএ/জেআইএম