৩.৩ ওভারে, অর্থাৎ মোট ২১ বলের মধ্যে যদি একজন বোলার ১৭টি বলই ডট এবং মাত্র পাঁচ রান দিয়ে পাঁচটি উইকেট নেন, তাও আবার সেটা যদি হয় আইপিএলের মতো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে; তাহলে সেটা যে কতটা ভয়ের কথা তা ভাবতেও পারবে না কেউ। গাড়ওয়ালের আকাশ মাধওয়াল এই কাজটি করে দেখিয়েছেন বুধবার রাতে। এর ফলে ক্রিকেট মাঠে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তিনি।
Advertisement
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের দেওয়া ১৮৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পুরো লেজেগোবরে অবস্থা হয় লখনৌ সুপার জায়ান্টস ব্যাটারদের। এর মধ্যে মুম্বাইয়ের ডানহাতি পেসার আকাশ মাধওয়ালের দাপটে পুরো থরহরিকম্প দশা হয় লখনৌয়ের। ৩.৩ ওভারে ৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট তুলে নেন আকাশ মাধওয়াল। প্লে-অফে সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি ভাঙলেন অনিল কুম্বলের ১৪ বছর আগের রেকর্ডও।
আইপিএলের প্লে-অফের ম্যাচে এর আগে কোনও বোলারের বোলিং ফিগার এতটা ভালো ছিল না। এবং কেউ প্লে-অফে ৫ উইকেট নেওয়ারও রেকর্ড গড়তে পারেননি। আকাশ মাধওয়াল প্রথম ক্রিকেটার, যিনি আইপিএলের প্লে-অফে ৫ উইকেট নেওয়ার নজির গড়লেন।
পাশাপাশি তিনি ভেঙে দিলেন অনিল কুম্বলের ১৪ বছরের পুরনো রেকর্ড। সবচেয়ে ভালো ইকোনমি রেট রেখে আইপিএলে ৫ উইকেট নেওয়ার নজির গড়লেন আকাশ। বুধবার রাতে আকাশের ইকোনমি রেট ছিল ১.৪২। এত কম ইকোনমি রেটে ৫ উইকেট নেওয়ার নজির আর কারও নেই।
Advertisement
এর আগে এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন অনিল কুম্বলে। ২০০৯ সালে কেপটাউনে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। তার ইকোনমি রেট ছিল ১.৫৭। কুম্বলের এই রেকর্ডই বুধবার এলিমিনেটর ম্যাচে লখনৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে টপকে যান আকাশ মাধওয়াল।
২০২২ সালে আবার মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের জসপ্রিত বুমরাহ ২.৫০ ইকোনমি রেটে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। এটি রয়েছে তালিকার তিন নম্বরে।
কে এই আকাশ মাধওয়াল?
মাত্র চার বছর আগের কথা। তখনও উত্তরাখণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের এলাকাগুলোতে টেনিস বলে দাপিয়ে ক্রিকেট খেলতেন আকাশ মাধওয়াল। সাধারণত যাকে ‘খেপ’ খেলা বলে, সেখানেই। জীবনটা বদলে গেল ২০১৯-এ ওয়াসিম জাফরের চোখে পড়ে। একটি ট্রায়ালে আকাশকে প্রথম দেখেন জাফর। সঙ্গে সঙ্গে নজর কেড়ে নেন। সেই শুরু। বুধবার এলিমিনেটরে লখনৌয়ের বিরুদ্ধে ৫ রানে ৫ উইকেট নিয়ে আকাশ বুঝিয়ে দিলেন, তার উপর আস্থা রেখে ভুল করেননি কেউ।
Advertisement
২৪ বছর বয়স পর্যন্ত সাদা বলের ক্রিকেটের সঙ্গেও কোনো পরিচয় ছিল না আকাশের। তিনিই উত্তরাখন্ড রাজ্য দলের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে খেলে ফেললেন। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে উত্তরাখন্ডের কোচ মানিশ ঝা বলেছেন, ‘২০১৯ সালে সে ট্রায়ালে এসেছিল। প্রথম দেখাতেই আমাদের ভাল লেগেছিল। খুব মসৃণ বোলিং অ্যাকশন। ওর মধ্যে একটা এক্স ফ্যাক্টর ছিল। ওয়াসিম ভাই সঙ্গে সঙ্গে ওকে দলে টেনে নেন এবং সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে কর্ণাটকের বিরুদ্ধে খেলিয়ে দেন।’
উত্তরাখণ্ডের রুরকি জেলার বাসিন্দা ২৯ বছর বয়সী আকাশ মাধওয়াল। তার বাড়ি রিশাভ পান্তের বাড়ির কাছেই। ১৯৯৩ সালের ২৫ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। আকাশের বাবা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। পড়ালেখায় ছিলেন মনযোগি। যে কারণে ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পাশ করে ফেলেন তিনি। ২০১৩ সালে এক দুর্ঘটনায় মারা যান আকাশের বাবা। বাবার মৃত্যুর পর লেখাপড়া চালিয়ে যান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন।
ছোটবেলা থেকেই টুকটাক ক্রিকেট খেলতেন। টেপ টেনিস বলে স্থানীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টগুলোতে তিনি ছিলেন নিয়মিত খেপ খেলা ক্রিকেটার। ছোটবেলায় অবতার সিংহের কাছে ক্রিকেট শিখেছেন। এই অবতার পান্তেরও ছোটবেলার কোচ ছিলেন। পরে পান্ত দিল্লিতে চলে যান। অবতার বলেছেন, ‘রিশাভের বাড়ির উল্টো দিকেই আকাশের বাড়ি। ওরা একে অপরের প্রতিবেশী। রিশাভ ছোটবেলায় আমার কাছে কোচিং নিয়েছে।’
গত মৌসুমে অর্থাৎ ২০২২ সালে আহত সূর্যকুমার যাদবের বদলি হিসেবে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা হয় আকাশ মাধওয়ালকে; কিন্তু একটি ম্যাচও খেলার সুযোগ পাননি তিনি। এবার তাকে ২০ লক্ষ রুপির বেস প্রাইস মূল্যে দলে ধরে রাখে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।
সেই আকাশই এখন মুম্বাইয়ের হয়ে ব্যায়বহুল কর্মটি করে ফেললেন। যা রীতিমত রেকর্ড।
আইএইচএস/এএসএম