ক্যাম্পাস

বঙ্গবন্ধুর ‘জুলিও কুরি’ পদকপ্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত

বঙ্গবন্ধুর ‘জুলিও কুরি’ পদকপ্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিতে। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৩ মে) ঢাকার গ্রিন রোডে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসের অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা হয়। বঙ্গবন্ধুর ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকপ্রাপ্তির ৫০তম বছর পূর্তি ছিল মঙ্গলবার। এদিন সহকারী লাইব্রেরিয়ান মো. মাসউদ মিয়ার পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান।

Advertisement

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আবুল বাশার এবং প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর শামীম আরা হাসান, প্রাক্তন ট্রেজারার ও ব্যবসায় প্রশাসনের প্রফেসর মো. আল-আমিন মোল্লা।

আরও বক্তব্য দেন কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এম এ মাবুদ, সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান বুলবুল আহমেদ, এমই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো. মোস্তফা হোসেন, ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক কাজী জুলকারনাইন সুলতান আলম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন রেজিস্ট্রার এস, এম, নূরুল হুদা।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন তার বক্তব্যে ছাত্রছাত্রীদের জাতি, দেশ, পৃথিবীর রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করতে বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা বঙ্গবন্ধুকে ধরে রাখতে পারিনি। বিশ্বে আমরাই একমাত্র জাতি যেখানে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত খুব সামান্য টাকায় পড়াশোনা করা যায়। আমি ধন্যবাদ জানাই বেসরকারি ইউনিভার্সিটি পরিবারকে যারা করোনাকালে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস নিয়েছে। আমাদের সম্পদের পরিমাণ কম, যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হচ্ছে। নিজেরা দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আমরা জাতি হিসেবে মহৎ প্রমাণ করেছি।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছেন। যার কারণে অনেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আজ আমরা নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক। আমাদের হয়তো কিছু গ্যাপ রয়েছে, কিন্ত আমরা অনেক এগিয়ে যাচ্ছি। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত হতে হবে।

সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর শামীম আরা হাসান বক্তব্যের প্রথমেই অভিনন্দন জানান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেনকে।

Advertisement

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যদি আমাদের মাঝে উপস্থিত থাকেন তাহলে আমাদের কাজের উদ্দামতা বেড়ে যায়। সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিকে একটি উচ্চমাত্রায় নিয়ে যেতে আমরা আরও বেশি মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় উৎসাহিত হবো।

সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দেশপ্রেমিক শেখ মুজিব একজন সফল রাজনীতিবিদ, সফল রাষ্ট্রনায়ক, একজন মানবিক শান্তিকামী মানুষ ছিলেন। তিনি শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মানুষের শান্তি কামনা করেছেন। বঙ্গবন্ধু কখনোই তার রাজনৈতিক জীবনে সংঘাত চাননি। তিনি মানবতার অবমাননা সহ্য করেননি। নিজের ক্ষতি মেনে নিয়েও চিরদিন অন্যের সুখের জন্য আত্মোৎসর্গ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর শান্তির নীতি-আদর্শকে ধারণ করে যদি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটা ক্ষেত্রে শান্তি বজায় থাকে, এমন কাজের চর্চা করি তাহলে আমরা একটি শান্তিকামী বাংলাদেশ তৈরি করতে পারবো।

১৯৫০ সাল থেকে ‘জুলিও কুরি’ পদক দেওয়া শুরু হয়। মূলত সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা এবং মানবতা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, তারা এ পদকে ভূষিত হয়ে আসছিলেন। বঙ্গবন্ধু এ পদকপ্রাপ্তির আগে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো, ভিয়েতনামের সংগ্রামী নেতা হো চি মিন, চিলির গণআন্দোলনের নেতা সালভেদর আলেন্দে, ফিলিস্তিনের জনদরদি নেতা ইয়াসির আরাফাত প্রমুখ এ পদক পেয়েছিলেন।

১৯৭৩ সালের ২৩ মে বঙ্গবন্ধুর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। বিশ্বশান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভায় বিশ্বের ১৪০টি দেশের প্রায় ২০০ সদস্যের উপস্থিতিতে ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন, আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কত্বের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বঙ্গবন্ধুকে এ পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে শান্তি পরিষদের মহাসচিব রমেশ চন্দ্র বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভায় বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলন এবং বিশ্বশান্তির সপক্ষে বঙ্গবন্ধুর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রদানের জন্য বঙ্গবন্ধুর নাম প্রস্তাব করেন।

জেডএইচ/এমএস