ধর্ম

বাংলাদেশি হজযাত্রীরা ইহরাম বাঁধবেন কোথায়?

হজ ও ওমরা পালনকারীদের কাবা শরিফ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্বে ইহরাম বাঁধতে হয়। কাবা শরিফের চারদিকের মানুষদের জন্য ইহরাম বাঁধার এসব স্থানকে মিকাত বলে। ইহরাম বাঁধার এ স্থানগুলো নবিজির হাদিস দ্বারা নির্ধারিত আছে। হারাম শরিফের চর্তুদিকেই মিকাত রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশি হজযাত্রীদের মিকাত কোনটি? তাঁরা কোথায় থেকে ইহরাম বাঁধবেন?

Advertisement

মিকাতের প্রকার

মিকাত ২ প্রকার। এক. সময়ের মিকাত; দুই. স্থানের মিকাত।

সময়ের মিকাত

Advertisement

হজের জন্য সময়ের মিকাত হল- শাওয়াল, জিলকদ এবং জিলহজ মাস। অনেকের মতে শাওয়াল মাস থেকে জিলহজের প্রথম ১০ দিন পর্যন্ত এ সময়গুলোকে হজের মাস বলা হয়। অপরদিকে ওমরার সময় হলো বছরের যে কোন মাস, দিন ও রাত।

স্থানের মিকাত

স্থানগত মিকাত ৫টি। তাহলো-

১. মদিনাবাসীদের জন্য ‘যুল হুলাইফা’

Advertisement

এস্থানটি এখন (أَبيَارِ عَلِيٍّ) ‘আবইয়ারে আলি’ নামে পরিচিত। এটি মসজিদে নববি থেকে ১৩ কিলোমিটার এবং মক্কা শহর থেকে ৪২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মদিনাবাসী এবং এ পথ দিয়ে যারা আসে তারা এখান থেকে ইহরাম বাধবে। মক্কা শহর থেকে এটাই সবচেয়ে দূরতম মিকাত।

২. সিরিয়াবাসীদের জন্য ‘আল-জুহফা’

এ জায়গাটি লোহিত সাগর থেকে ১০ কিলোমিটার ভেতরে (رابغ) ‘রাবেগ’ শহরের কাছে। জুহফাতে চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ‘রাবেগ’ নামক স্থান থেকে এখন লোকেরা ইহরাম পরে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ এখন এটি একটি বড় শহর। জম্মুম উপত্যকার পথ ধরে মক্কা শহর থেকে এ স্থানটি ১৮৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যেসব দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম পরিধান করেন- সিরিয়া, লেবানন, জর্দান, ফিলিস্তিন, মিশর, সুদান, মরক্কো, আফ্রীকার দেশসমূহ, সৌদি আরবের উত্তরাঞ্চলীয় কিছু এলাকা এবং মদিনার পথ ধরে যারা আসে না; তারাও এখান থেকে ইহরাম বাঁধে।

৩. নজদবাসীদের জন্য ‘কারনুল মানাযিল’

কারনুল মানাযিল (قَرْنُ الْمَنَازِل) স্থানটি এখন (السيل الكبير) ‘সাইলুল কাবির’ নামে প্রসিদ্ধ। সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালতসহ এটি এখন একটা বড় গ্রাম। মক্কা থেকে এর দূরত্ব ৭৮ কিলোমিটার। যেসব এলাকা ও দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম বাঁধেন- কাতার, কুয়েত, আরব আমিরাত, বাহরাইন, ওমান, ইরাক, ইরানসহ উপসাগরীয় রাষ্ট্রসমূহ, সৌদি আরবের রিয়াদ, দাম্মাম ও তায়েফ এবং এ পথ দিয়ে যারা আসে।

৪. ইয়ামানবাসীদের জন্য ‘ইয়ালামলাম’

‘ইয়ালামলাম’ শব্দটি একটি উপত্যাকার নাম বলে জানা যায়। এ জায়গাটি মক্কা শরীফ থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এলাকাটি السعدية ‘সাদিয়া’ নামেও পরিচিত। যেসব দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম বাঁধেন- ইয়ামেন, বাংলাদেশ, ভারতবর্ষ, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়াসহ পূর্বাঞ্চলীয়র দেশসমূহ।

৫. ইরাকবাসীদের জন্য ‘যাতুইরক’

পঞ্চম মিকাতটির নাম (ذات عرق) ‘যাতুইরক’। এটা মক্কা শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে। প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট না থাকায় এটি এখন আর ব্যবহৃত হচ্ছে না। এটা ছিল ইরাকবাসীদের মিকাত। তারা এখন তৃতীয় মীকাত কারনুল মানাযিল তথা ‘সাইলুল কাবির’ ব্যবহার করে থাকেন।

বাংলাদেশি হজ-ওমরাহ পালনকারীদের মিকাত

ইয়ামানবাসীদের মিকাত ‘ইয়ালামলাম’ নামক স্থান থেকে বাংলাদেশিরা ইহরাম বাঁধবেন। যারা আকাশ পথে বিমানে উক্ত মিকাতের কাছাকাছি পৌছে তখন বিমানের ক্যাপ্টেনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, তখনই ইহরাম বাঁধতে হয়। অথবা যারা ঢাকা থেকে সরাসরি পবিত্র নগরী মক্কায় গমন করবে তারা ঢাকা থেকেই ইহরামের কাপড় পড়ে নিয়ত করে যাবেন। আবার ইহরামের কাপড় পরে মিকাতের কাছাকাছি গিয়েও নিয়ত করা যাবে। মনে রাখতে হবে, ইহরাম বাঁধা ছাড়া মিকাত অতিক্রম করা যাবে না। ইহরাম বাঁধার অর্থ হলো- ইহরামের কাপড় পরে ওমরা বা হজের নিয়ত করা।

উল্লেখ্য, যেসব এলাকার হজ-ওমরা পালনকারীরা এ সব মিকাতের কোনো একটির ডান বা বাম পাশ দিয়ে যাবে, নিকটস্থ প্রথম মিকাতের পাশ দিয়ে যখন যাবে তখনই ইহরাম বাঁধবে। আর যারা বর্ণিত ৫টি মিকাতের সীমানার ভেতরে বসবাস করে যেমন- জেদ্দা, বাহরা, তায়েফ, শরাইয় ও মক্কার মধ্যবর্তী এলাকার বাসিন্দাগণ বা চাকুরীরত প্রবাসীরা তারা হজের জন্য তাদের নিজ নিজ ঘর থেকেই ইহরাম বাঁধবে। তাদের জন্য মিকাতে যেতে হবে না।

মিকাতের ভেতর ও বাহিরে উভয় জায়গায় যাদের বাড়ি আছে তারা যে কোন এক স্থান থেকে ইহরাম বাঁধলেই চলবে। এ বিষয়ে তারা স্বাধীন। আর মক্কাবাসীগণ হজের ইহরাম হলে নিজ নিজ ঘর থেকে, আর ওমরার ইহরাম হলে মসজিদে তানয়িমে যাবে অথবা হারামের হুদুদের (সীমানার) বাইরে যে কোনো স্থানে গিয়ে বাঁধবে। মক্কায় চাকরিরত প্রবাসীরাও তা-ই করবে।

এমএমএস/এএসএম