রাজধানীর উত্তরায় গত ১৭ মে রেললাইনের ওপরে পোষা দুই হাতিকে কলাগাছ খাওয়াচ্ছিলেন মাহুত। এমন সময় একটি দ্রুতগামী ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলে একটি হাতি মারা গেছে। নিহত হাতিটির বয়স আনুমানিক আট বছর।
Advertisement
আরও পড়ুন: মায়ের হাতে সম্মাননা, আবেগী জয়া আহসান
রাজধানীর উত্তরার ৮ নম্বর সেক্টর-সংলগ্ন কোটবাড়ী রেলগেট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া এ হাতির বাচ্চাটি নিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান।
আরও পড়ুন: নকশি কাঁথার জমিন শেষ করলেন জয়া আহসান
Advertisement
আজ ( ২৩ মে) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মারা যাওয়া হাতি নিয়ে স্ট্যাটাসে লেখেন, এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলো, কিন্তু উত্তরায় বেঘোরে মারা পড়া হাতির বাচ্চাটার কথা মন থেকে কোনোভাবেই সরিয়ে দিতে পারছি না। সেই কিশোরীবেলা থেকে হাতি আমার মনোরম কল্পনার প্রাণী।
জয়া আহসান
শুধু আমার কেন, হাতি ছানাকে যে ভালোবেসে বড় হয়নি? কোনো প্রাণীকে দেখে আমরা ভয় পাই, কোনো প্রাণীর সৌন্দর্যে বিস্মিত হই। কিন্তু হাতি? হাতি তো সব সময়ই আমাদের প্রাণী। হাতির ছানা তো আরও। রূপকথায়, মেঘের আকারে, অ্যানিমেশনে বন্ধু হিসেবে হাতিকে মনের রঙিন কল্পনায় মধ্যে জায়গা দিতে দিকে আমরা বড় হয়েছি।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হলেন জয়া আহসান
Advertisement
জয়া আরও লেখেন, এমন একটি আদুরে হাতির ছানা কী মর্মান্তিকভাবেই না মারা পড়ল গত ১৭ মে। উত্তরায় রেললাইনের পাশে মা হাতির সঙ্গে ছানাটিও কলাগাছ খাচ্ছিল। এমন সময় ট্রেন এসে পড়ে। ট্রেনের চালক কাওছার হোসেন বলেছেন, একশ মিটার দূরে থাকতে হাতিটি তাদের নজরে আসে। তখন তারা হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন থামানোর চেষ্টা করেন। ট্রেন থামতে দুইশ থেকে তিনশ মিটার জায়গা লাগে। ফলে দুর্ঘটনাটি এড়ানো যায়নি। হুইসেলের শব্দে হাতির শাবকটি ভয় পেয়ে দৌড় দিতে শুরু করে।
আবেগপ্রবণ হয়ে জয়া লেখেন, কিন্তু যন্ত্রসভ্যতার আইনকানুন বেচারা জানবে কোত্থেকে? সে দৌড়াতে শুরু করে রেললাইনেরই ওপর দিয়ে। ট্রেন ওর ওপরে এসে পড়ে। ওকে হিঁচড়ে নিয়ে যায় বহুদূর পর্যন্ত। শহরে অচেনা এই আগন্তুক লাশ হয়ে যায়। ট্রেনচালক কাওছার হোসেন প্রশ্ন করেছেন, ‘বন্যপ্রাণী কেন রেললাইনে থাকবে? হাতির তো লোকালয়ে আসারই কথা নয়।’ এটা আমাদেরও প্রশ্ন।
বন্যপ্রাণী আইন নিয়ে জয়া লেখেন, যার ঘুরে বেড়ানোর কথা অরণ্যের সবুজে, ওর আপন পৃথিবীতে, সেও কেন ওর অচেনা লোকালয়ে আসবে? আইইউসিএস বলছে, এশিয়ান হাতি তাদের লাল তালিকায় থাকা মহাবিপদাপন্ন প্রাণী। যত্ন না নিলে ম্যামথের মতো একদিন হারিয়ে যাবে তারা। হাতি টিকে থাকবে শুধু গল্পগাথার অস্পষ্ট স্মৃতির ভেতরে। তেমন পৃথিবীই কি আমরা চাই?
হাতি লোকালয়ে আসছে তার পেছনে আছে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২–এর ২ উপধারা। সেখানে বলা হয়েছে, সনদ নিয়ে হাতি লালন–পালন করা যাবে। তবে সনদ নেওয়ার আগে নিশ্চিত হতে হবে পালনকারীর হাতি পালন করার মতো পর্যাপ্ত জ্ঞানগম্যি এবং হাতির বেঁচে থাকার মতো পুরো সুযোগ–সুবিধা দেওয়ার সক্ষমতা আছে।
জয়া আহসান
তাই নাকি? সনদ দেওয়ার পরে কী হবে? এই যে হাতি হাতবদল হয়ে যাচ্ছে, শারীরিক যন্ত্রণা দিয়ে ওদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, চাঁদা তোলার কাজে শহরের প্রতিকূল রাজপথে চড়িয়ে বেড়ানো হচ্ছে, সেটা কে দেখবে? এসব দৃশ্য তো আমরা চলতে–ফিরতে হরহামেশা দেখতে পাচ্ছি। দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের কি মোটেই চোখে পড়ছে না? তারা কি ঠিকমতো সনদ দিচ্ছেন? সনদ দেওয়ার পর কি আদৌ খোঁজ করে দেখছেন, নিয়ম পালিত হচ্ছে কিনা? হচ্ছে যে না, পথে পথে আমাদের নিজ চোখে দেখা অভিজ্ঞতাই তার প্রমাণ। আমাদের গাফিলতিই অবশেষে এই হাতির মৃত্যুর কারণ হলো। দুর্ঘটনা একটা ছুতো মাত্র।
বন্যপ্রাণীদের নিয়ে পৃথিবীজুড়ে ভাবনা বদলে যাচ্ছে। আমরা কি একগুঁয়ের মতো পৃথিবীর বাইরে থাকতে চাই? মহাবিপদাপন্ন একটি প্রাণীকে কোনোভাবেই আমরা তাদের নিজস্ব পরিবেশের বাইরে এনে আটকে রাখতে পারি না। তাই এই আইনটি এখন বাতিল করার সময় এসেছে। এ ব্যাপারে আওয়াজ তোলার জন্য আমি দেশের প্রাণীবিদদের, প্রাণী অধিকারকর্মী আর সব সংবেদনশীল মানুষকে অনুরোধ করছি।
আরও একটি কথা বলা দরকার। মাঝেমধ্যেই আমরা হাতি আর মানুষের সংঘর্ষের কথা শুনছি। এর জের পড়ছে দুই দিকেই। মানুষও ক্ষতির শিকার হচ্ছে, মারা পড়ছে হাতিও। অথচ এর মূল দায় তো আমাদেরই। আমরা বন উজাড় করছি। হাতির বুনো চলাচলের পথ বন্ধ করে আবাস করছি। হাতির বেঁচে থাকার কোনো জায়গাই অবশিষ্ট রাখছি না। পৃথিবীর বিচিত্র প্রাণসত্তার রঙিন সৌন্দর্য টিকে থাকবে কিনা, সেটা নির্ভর করছে আমাদের দয়ার ওপর। আমাদের দয়ামায়া কি সব কর্পুরের মতো উবে গেল?
এমআই/এমএমএফ/এএসএম