করোনা মহামারি পর ইউরোপে যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের বাজার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। জ্বালানি আমদানি নির্ভর দেশসমূহ পড়েছে চরম সংকটে। বিশ্ববাজারে মূল্য বাড়ায় দেশেও বাড়াতে হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। তবে আসছে বাজেটে এবার জ্বালানি তেলের মূল্য কমাতে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
Advertisement
জ্বালানি তেলের দাম স্বাভাবিক রাখতে ভ্যাট, ট্যাক্স প্রত্যাহারের দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে ১৩ ধরনের তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহার করা হতে পারে।
বর্তমানে জ্বালানি তেলের মূল্যের মধ্যে শুল্ক ১০ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ২ শতাংশ, অগ্রিম কর ৫ শতাংশসহ মোট শতকরা ৩৪ শতাংশ সরকারি শুল্ক ও কর বিদ্যমান। অগ্রিম ৫ শতাংশ কর উঠে গেলে এ হার ২৯ শতাংশে নেমে আসবে।
Advertisement
যে ১৩টি জ্বালানি পণ্য আগাম কর অব্যাহতি পেতে পারে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, পেট্রোলিয়াম তেল, অপরিশোধিত তেল, এইচবিওসি (হাই অকটেন ব্লেন্ডিং কম্পোনেন্ট) ধরনের মোটর গ্যাসোলিন, এভিয়েশন গ্যাসোলিনসহ অন্যান্য গ্যাসোলিন; জেট ফুয়েল, সাদা স্পিরিট, ন্যাপথা, জেট ফুয়েলের কেরোসিন টাইপের জেপি-১, জেপি-৪ ও অন্যান্য কেরোসিন; হালকা ডিজেল তেল, হাই স্পিড ডিজেল তেল এবং ফার্নেস তেল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিন ১০৯ টাকা, অকটেন ১৩০ টাকা এবং পেট্রোল ১২৫ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে। অগ্রিম কর কমে গেলে এর প্রভাবে পুরো অর্থনীতিতে পড়বে।
জানতে চাইলে রাজস্ব বোর্ডের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমলেও, বাংলাদেশে কিছুটা বেশি রয়েছে। সরকার জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি মূল্য বাড়ার জেরে দেশেও দাম বেড়ে যায়। এখন আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আগামী বাজেটে ভোক্তাকে কিছুটা স্বস্তি দিতে জ্বালানিতে অগ্রিম কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বাজেটে। এর ফলে জ্বালানির দাম না কমলেও স্থিতিশীল থাকবে।
Advertisement
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা এম শামসুল আলম জাগো নিউজকে জানান, জ্বালানির দাম যতটুকু দাম কমে সেটা দিয়ে স্থিতিশীল তহবিল করার কথা আমরা বার বার বলেছি। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বাড়লে দেশীয় বাজারে না বাড়িয়ে তহবিল থেকে সমন্বয় করা যায়। আর কমলে ফের তহবিলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। কিন্তু এই কাজ করা হয়নি। সরকার মানুষের সুরক্ষার কথা ভাবে না। সব জায়গায় অনিয়ম, দুর্নীতি ভর করায় যে কোনো উদ্যোগে মানুষ সুরক্ষা পাবে এমন প্রত্যাশা করার সুযোগ কম।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এটা আগেই তুলে নেওয়া দরকার ছিল। জ্বালানিতে ভ্যাট ছাড়া অন্য কিছুই থাকা উচিত না। কারণ আমরা জ্বালানি আমদানি করি।
তিনি বলেন, আমরা জ্বালানিতে ভর্তুকিও চাই না, ট্যাক্সও চাই না। এটা বহুল ব্যবহার্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এর ওপর কর বসানো ঠিক নয়। সব ট্যাক্স উঠিয়ে দিয়ে জ্বালানি তেলকে বাজারভিত্তিক করে দেওয়া দরকার।
এসএম/এসএনআর/জিকেএস