আইন-আদালত

বাবার বকেয়া অর্থ পেতে প্রতিবন্ধী ছেলের আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশ

ব্যাংকার সরদার আব্দুর রাজ্জাকের বেতন-ভাতাসহ সমুদয় পাওনা অর্থের বিষয়ে তার সন্তানদের করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে রূপালী ব্যাংক চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তার বকেয়া ও পাওনা অর্থ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন আদালত।

Advertisement

বকেয়া বেতন ও সুবিধাদি পেতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবন্ধী ছেলে সরদার আসাদুজ্জামানসহ তিন সন্তানের করা আবেদনসহ এ-সংক্রান্ত দুটি আবেদন রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট উপব্যবস্থাপককে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (২২ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি মাহমুদুল হক ও বিচারপতি মাহমুদ হাসান (এমএইচ) তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. কাজল রশিদ বিশ্বাস। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমী।

রিটকারী আইনজীবী মো. কাজল রশিদ বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, একটি অভিযোগে ২০০৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি চাকরিচ্যুত হন খুলনার গড়ইখালী হাট শাখার সিনিয়র অফিসার (ব্যবস্থাপক) সরদার আব্দুর রাজ্জাক। এরপর নিয়ম অনুযায়ী চাকরি ফিরে পেতে আবেদন করেন। আবেদনের পরও রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো সাড়া দেয়নি।

Advertisement

এরই মধ্যে সরদার আব্দুর রাজ্জাক ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট মারা যান। এরপর যাবতীয় (পেনশন, গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড) পাওনাদির বিষয়ে তার তিন ছেলেমেয়ের পক্ষে গত বছরের ৬ নভেম্বর রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের পরও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত মার্চ মাসে রিট আবেদন করা হয়। রিট আবেদনটি নিষ্পত্তি করতে আজ রূপালী ব্যাংক চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

প্রতিবন্ধিতার কারণে কথা কিছুটা জড়িয়ে আসে সরদার আসাদুজ্জামানের। আসাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে বাবা চাকরিতে যোগ দেন। আদালতের রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর জীবিত অবস্থায় চাকরিতে যোগ দিতে ২০১০ সালে আবেদন করেছিলেন বাবা। কিন্তু বিফল হন। ২০১৪ সালে প্যারালাইসিস হওয়ার পর থেকে শয্যাশায়ী ছিলেন বাবা। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট মারা যান তিনি। বাবার বকেয়া বেতন ও মৃত্যু–পরবর্তী যাবতীয় পাওনা পেতে চাই।’ বোনদের পাঠানো খরচ দিয়ে জীবন চলছে বলে জানান খুলনা সিটি কলেজে স্নাতকপড়ুয়া এই প্রতিবন্ধী।

জানা গেছে, সরদার আবদুর রাজ্জাক সাতক্ষীরার বড়দল শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কর্মরত অবস্থায় নয় লাখ টাকা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে রাজ্জাকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ২০০২ সালের ১৩ জুলাই আশাশুনি থানায় মামলা করা হয়। ওই মামলায় রাজ্জাকের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়।

এর এক মাস আগেই ২ জুন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে ২০০৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তাকে বরখাস্ত করা হয়। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে করা মামলায় ২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রায় দেন খুলনার বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত। রায়ে আবদুর রাজ্জাককে খালাস দেন আদালত। অন্য দুজনকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

Advertisement

খালাসের রায়ের পর ২০১০ সালের ১৮ অক্টোবর রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বরাবর তিনি চাকরিতে যোগ দিতে আবেদন করেন। তবে তিনি সেই সুযোগ পাননি। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট মারা যান তিনি। আবদুর রাজ্জাকের বরখাস্তের শাস্তি মওকুফ করে তার বকেয়া বেতন–ভাতাদি ও মরণোত্তর পাওনা পেতে গত বছরের ৬ নভেম্বর রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন তার ছেলে সরদার আসাদুজ্জামান।

এফএইচ/বিএ/এমএস/এএসএম