ফিচার

কমছে খেলার মাঠ বাড়ছে অট্টালিকা

বিশাল অট্টালিকার ভিড়ে কমছে খেলার মাঠ, বাড়ছে অনলাইন আসক্তি। নতুন প্রজন্ম বেড়ে উঠছে স্মার্টফোন, ল্যাপটপে সময় কাটিয়ে। অথচ আমাদের শৈশব কেটেছে খেলার মাঠে দুরন্তপনায়। মহল্লার আনাচে-কানাচে ছিল খেলার মাঠ। ছিল কত স্মৃতি। বিকেলে স্কুল ছুটির পর ছুটে যেতাম খেলার মাঠে। আহা! সেই সোনালি অতীত।

Advertisement

শীতের সকাল-সন্ধ্যায় মাঠে চলতো দৌড় ঝাঁপ। দুপুরে-বিকেলে রৌদ্রের তেজে ক্রিকেট খেলার বিকল্প ছিল না। মাঠে আমাদের বিচরণ ছিল সর্বত্র। ক্রিকেট খেলায় কে কয়টা ছয় মারতে পারে চলতো তারই প্রতিযোগিতা। বর্ষায় খেলতাম ফুটবল। বৃষ্টিতে কাদা মাটিতে ঝাপাঝাপি করার আনন্দই ছিল অন্যরকম।

তখন পকেটে এতো টাকা থাকত না। বাসা থেকে দশ টাকা রোজ পেতাম। সিঙ্গেল বল কেনার টাকা না থাকায় সবাই মিলে বল কিনতাম। বল ফেটে গেলে কিছুদিন খেলা বন্ধ থাকত। দলের খেলা কিছুদিন বন্ধ থাকলেও অন্য দলের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খেলা চলতোই।

আরও পড়ুন: ঐতিহ্যবাহী বাহন গরুর গাড়ি বিলুপ্তির পথে 

Advertisement

এভাবেই কাটতো শৈশবের প্রতিটি দিন। শৈশবের সেই মাঠে গড়ে উঠেছে দালান। মহল্লায় ক্রিকেট খেলা এখন আর চোখে পড়ে না। দেখা যায় না সিনিয়র-জুনিয়র কিংবা এক মহল্লা বনাম অন্য মহল্লার ক্রিকেট ম্যাচ। নিজের মহল্লার সম্মান রক্ষার্থে জান প্রাণ দিয়ে খেলার প্রতিযোগিতা আর নেই।

কী যে উদ্দাম নেশা ছিল এই খেলার প্রতি, বলে বোঝানো সম্ভব নয়। রাতে ঘুমানোর সময় সেসব দিনের কথা মনে পড়ে খুব। স্কুল ছুটি শেষে বাড়ি ফিরতে দেরি করায় বাবা-মায়ের কাছে বকা খাওয়ার সেসব দিন কেবলই স্মৃতিকাতর। খেলতে গিয়ে হাতে পায়ে ব্যথা পেলেও ব্যথাকে ব্যথা মনে হতো না।

এখনো দূরে কোথাও খোলা মাঠে ছোটদের খেলতে দেখলে ফিরে যাই যেই সময়ে। ফিরে যাই নির্মল শৈশবের সেই মাঠে। অথবা স্কুলে টিফিনের স্বল্প সময়ে খেলার সেই মুহূর্তে।

আরও পড়ুন: লেখাপড়ার ফাঁকে জুসবার দিয়ে সাবলম্বী ফাহাদ 

Advertisement

বাড়ির পেছনের বাগানে, খেলার মাঠ কিংবা গাছতলায় সেই শৈশবে খেলার ছলে গড়ে ওঠেছিল আলাদা বন্ধু মহল। এখনো শহরের অনেক জায়গায় খেলার মাঠ আছে। তবে জমির মালিকরা চারপাশে দেয়াল তুলে দিয়েছেন। খালি জায়গার স্বল্পতায় নতুন প্রজন্মের মাঠে দৌড় ঝাঁপ কমেছে। তারা ঝুঁকে পড়ছে অনলাইন গেমসে। পাবজি, ফ্রি ফায়ারের প্রতি বাড়ছে আসক্তি।

নগরের বাইরে এখনো খোলা মাঠ আছে। ঢাকার বাইরে ঘুরতে গেলে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলায় এখনো মেতে উঠি। হতাশা গ্রাস করার সুযোগ থাকে না। সময় এসেছে দেশীয় খেলাগুলোকে জাগিয়ে তোলার, সঙ্গে মাঠের বিস্তৃতি বাড়ানোর। কারণ শরীর ও মন সতেজ রাখতে খেলার মাঠের বিকল্প নেই।

লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী

কেএসকে/জিকেএস