ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক ও বনানী থানার বরখাস্ত পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পদক্ষেপ জানাতে দুই সপ্তাহ সময় চেয়ছেন রাষ্ট্রপক্ষ। এ বিষয়ে আরও দুই সপ্তাহ পরে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
Advertisement
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এর আগে সোহেল রানাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তারপর আমাদের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়েছিল সোহেল রানা ভারতের কারাগার আটক ছিলেন। জামিন পেয়ে কারামুক্ত হয়ে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারই আলোকে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে জানানোর জন্য আমরা সময় চেয়েছি।
এ বিষয়ে রোববার (২১ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ এ সময়ের আবেদন করেন।
Advertisement
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম লিটন। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পক্ষে আইনজীবী শামীম খালেদ আহমেদ শুনানিতে ছিলেন।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি বরখাস্ত পুলিশ কর্মকর্তা ই-অরেঞ্জের সোহেল রানাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পদক্ষেপ জানাতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশের পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল সোহেল রানা ভারতের কারাগার আটক ছিলেন। জামিন পেয়ে কারামুক্ত হয়ে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
আরও পড়ুন>> ই-অরেঞ্জের সোহেল রানাকে ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ জানতে চান হাইকোর্ট
ই–অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক ও বরখাস্ত হওয়া বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ এবং ই-অরেঞ্জের লেনদেনের বিপরীতে রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে জানিয়ে ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্রসচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সেটি শুনানিতে আসে।
Advertisement
এরও আগে ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর ই-অরেঞ্জের কাছে আটকে থাকা গ্রাহকের টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে কি না সেটি খুঁজে দেখতে একটি কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই নির্দেশনার আলোকে উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বিএফআইইউ সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ই-অরেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া মেহজাবীন, তার ভাই বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা ও চাচা মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজ ১৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা সরিয়েছেন। ওই প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে ই-অরেঞ্জ নিয়ে দেওয়া প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করে আবারও প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলেন আদালত। আদালত বলেন, ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে ফের প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। এসময় শেখ সোহেল রানাকে ফিরিয়ে আনতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ই-অরেঞ্জের বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে কি না তা জানাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশ দেন।
এক রিটের ধারাবাহিকতায় গত ৩ নভেম্বর হাইকোর্ট কয়েক দফা নির্দেশনাসহ আদেশ দেন। ই-অরেঞ্জ থেকে টাকা উত্তোলনকারীদের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) তিন বিবাদীকে নতুন করে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে শেখ সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এবং হলফনামা করে জানাতে স্বরাষ্ট্রসচিবকে নির্দেশ দেন। এছাড়া ই-অরেঞ্জের লেনদেনের বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে কি না, সে বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। আগের ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি আদালতে ওঠে।
আরও পড়ুন>> ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক সাবেক ওসি সোহেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার দাবি করে ৫৪৭ জন গ্রাহকের পক্ষে তাদের ৬ জন প্রতিনিধি ২০২২ সালের মার্চে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান করে চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর গত বছরের ৩ নভেম্বর বিএফআইইউ, দুদক ও পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়। আইজিপির প্রতিবেদন সুস্পষ্ট নয় এবং দুদকের প্রতিবেদন সন্তোষজনক নয় বলে সেদিন উল্লেখ করে আদালত নতুন করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশসহ আদেশ দেন।
এফএইচ/ইএ/এএসএম