ফিচার

চায়ের গল্প

বিশ্বে প্রতি পাঁচজন মানুষের ১ জনের সকালটা শুরু হয় চা দিয়ে। আবার গোটা পৃথিবীতে প্রতিদিন কত কাপ চা বানানো হয় জানেন? সারা পৃথিবীতে একদিনেই প্রায় ৩ বিলিয়ন কাপ চা তৈরি হয়। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন চায়ের প্রতি আসক্ত। তবে চা নিয়ে অনেক তথ্যই হয়তো আমরা তেমনভাবে জানি না। চলুন আজ জেনে নেই চা সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও মজার তথ্য।

Advertisement

গোটা বিশ্বে প্রায় ৩০০০ রকমের চা পাওয়া যায়। একেক চায়ের একেক রকম বৈশিষ্ট। তবে আপনি জেনে অবাক হবেন, সব ধরনের চা পাতাই আসে ক্যমেলিয়া সিনেসিস নামক এক ধরনের চির-হরিৎ গুল্ম থেকে। চায়ের মধ্যে এতসব বৈচিত্রতা জন্ম নেয় মূলত চা চাষের ধরন, উৎপাদনের কৌশল ও আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে।

মনে করা হয় খ্রিষ্টপূর্ব ২৭০০ সালের দিকে চীনে সর্বপ্রথম চা পানের চল শুরু হয়। প্রাচীনকালে মধ্য চীনের ইয়াং লিং অঞ্চলে মানুষ মারা গেলে, মৃত মানুষের সঙ্গে তার কবরে নানা উপহার সামগ্রী রাখা হতো। সেসব সামগ্রীর মধ্যে চা পাতাও ছিলো অন্যতম।

আবার কালক্রমে চীন থেকে জাপানে ছড়িয়ে পড়ে চায়ের প্রসার। একটা সময় চা এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে জাপানে যে, জাপানিরা চা’কে নিজেদের ধর্মীয় ও ঐতিহ্যগত প্রথায় রূপ দান করে। এমনকি এখনও চা’কে কেন্দ্র করে বিশেষ উৎসব পালন করা হয় সেখানে।

Advertisement

চায়ের কাপে শুধু রীতিনীতি বা সামাজিকতাই জড়িত নয়। বরং রাজনৈতিক নানা কলাকৌশলের উদাহরণরূপেও তুলে ধরা যায় একে। ব্রিটিশরা চায়ে এতটাই আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে যে সপ্তদশ শতকে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও সর্বোপরি কূটনৈতিক সম্পর্কে ভাঙন ধরলে তারা বিপদে পড়ে যায়। পরবর্তীতে চায়ের জন্য চীনের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা হ্রাস করতে তারা ভিন্ন এক পন্থা খুঁজতে মরিয়া হয়ে পড়ে।

এমনকি রবার্ট ফরচুন নামের এক স্কটিশ উদ্ভিদ বিজ্ঞানীকে ব্রিটিশরা নিয়োগ দেয় যাতে সে চীন থেকে চায়ের গাছ পাচার করে আনতে পারে। কথামতো রবার্ট ফরচুন বিশ হাজারের মতো গাছ চীন থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে আনেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সেই গাছগুলো ভারতের দার্জিলিংয়ে রোপন করে আলাদা এক চায়ের সাম্রাজ্য গড়ে তোলে।

অনেকেই মনে করেন রবার্ট ফরচুনের চীন থেকে পাচার করা সেই বিশ হাজার চা গাছ দিয়েই আজ দার্জিলিংয়ে চা উৎপাদনে বিশ্ববিখ্যাত হয়েছে।

চা’কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক প্রসঙ্গ আসলে যে কথাটি না বললেই নয় তা হলো আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলন। ১৭৭৩ সালে আমেরিকার জনগণ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে ফুঁসে ওঠে।

Advertisement

ব্রিটিশ সরকার চায়ের ওপর কর বসালে আমেরিকার বোস্টন শহরের বাসিন্দারা সে সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। আর এরই মাধ্যমে ‘বোস্টন টি পার্টি’ গড়ে ওঠে। এ পার্টির সদস্যগণ ব্রিটিশ জাহাজে আসা ৩৪২ কনটেইনার চা সাগরে ফেলে দেন। চা কেন্দ্রিক শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ, আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলনের গতিকে আরও বেগবান করে তোলে।

শুধু ভিনদেশিদেরই নয়, বাঙালির অনেক উপাখ্যানের রচয়িতা এই চা। চা শুধুমাত্র একটি পানীয় নয়, কতশত আবেগ মাখা, কত উচ্ছ্বলতা, কর্মব্যস্ত দিন বা একাকিত্বে পার করা অবসন্নতার স্মৃতি বিজড়িত চুমুক। চা সর্বজনীনভাবে থাকে বাঙালির প্রতিটি আড্ডায়, আপ্যায়নে ও আভিজাত্যে।

এমআরএম/এএসএম