পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ দ্রুত শিল্পোন্নয়ন। আধুনিক বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মেলাতে শিল্পায়ন প্রয়োজন হলেও পরিবেশ দূষণরোধে শিল্প কারখানাগুলোকে আইনের আওতায় আনা উচিত। যেকোনো উন্নয়নে পরিবেশ সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
Advertisement
শনিবার (২০ মে) পরিবেশ দূষণ ও প্রতিকারবিষয়ক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। একইসঙ্গে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকপণ্য নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ সেন্টার ফর হলিস্টিক স্ট্যাডিজ’-এ সেমিনারের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এস পি গৌতম। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।
মূলপ্রবন্ধে এস পি গৌতম বলেন, মূলত আকাশ, বাতাস, পানি, আগুন ও পৃথিবী- এ পাঁচটি কম্পোনেন্ট নিয়েই পরিবেশ। এগুলো নিয়েই মানুষের সৃষ্টি। পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এগুলোকে রক্ষা করতে হবে। না হলে এগুলোই মানবজাতিকে ধংস করে দেবে।
Advertisement
পরিবেশ দূষণের মূল কারণ হিসেবে তিনি অপরিকল্পিত দ্রুত শিল্পায়নকেই দায়ী করেছেন। গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, ফার্মাসিটিউক্যালস, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, ট্যানারি শিল্প, রাসায়নিক সার কারখানা, তেল শোধনাগার, কীটনাশক উৎপাদনসহ ১৭টি শিল্পকে উচ্চদূষিত হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
ভারতের সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, দ্রুত শিল্পায়নে পানি ও বায়ুদূষণ ঘটে। একইসঙ্গে কঠিন বর্জ্য তৈরি করে। এ ধরনের দূষণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে দরিদ্র মানুষদের।
তিনি আরও বলেন, পরিবেশ রক্ষা ও উন্নত করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যেমন দায়িত্ব আছে, একইভাবে প্রত্যেক নাগরিকেরও কর্তব্য। শিল্পোন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে সঠিক পরিকল্পনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। একইসঙ্গে বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এজন্য আইনের প্রয়োগ করা জরুরি।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, পরিবেশন দূষণরোধ করতে চাইলে সবার আগে প্রয়োজন নিজেদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। পরিবেশ রক্ষায় সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে কোনো প্রকল্প অনুমোদনের আগে দেখা হচ্ছে, এর দ্বারা পরিবেশ বা জীববৈচিত্র্যের কোনো ক্ষতি হবে কি না। উন্নয়ন কাজে ইটিপি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিবেশকে গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য সরকার সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করেছে। তবে এক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। একা সরকারের পক্ষে এটা সম্ভব নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের ডিন অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, নগর বর্জ্য বেড়েই যাচ্ছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মেডিকেল বর্জ্যসহ বিভিন্ন কঠিন বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে পানিতে, মাটিতে মিশে যাচ্ছে। যা পরিবেশ ও মানবজাতির জন্য ক্ষতিকর।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মিহির মজুমদার বলেন, যে কোনো কাজে পরিবেশ দূষণ হয়। তবে সেটা যদি মাত্রাতিরিক্ত হয়, তাহলে সেটা পরিবেশ ও মানবজাতিসহ সব প্রাণীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেকোনো উন্নয়ন কাজের জন্য ভূমি ব্যবস্থাপনারা ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অখিল কুমার বিশ্বাস বলেন, শিল্প কারখানা ও ট্যানারির বর্জ্য নদীদূষণের অন্যতম কারণ। যা পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। এছাড়া যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলার কারণেও পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এ কারণে এসব বিষয়গুলো আইনের আওতায় আনেতে হবে।
সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, পরিবেশ দূষণরোধে শিল্প কারখানাগুলোকে আইনের আওতায় আনা উচিত। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বন্ধ করা উচিত।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির কারণেও পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। কল কারখানাগুলো বর্জ্য নিয়ে চিন্তা না করে, তারা বেশি মুনাফার চিন্তা করেন।
তিনি বলেন, পরিবেশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনে বলা আছে, সবার দায়িত্ব নিতে হবে। যারা বেশি পরিবেশ দূষণ করবে, তাদের অতিরিক্ত দায় নিতে হবে। পরিবেশের ক্ষতির পেছনে পশ্চিমা বিশ্বের দায় সবচেয়ে বেশি থাকলেও তারা অতিরিক্ত দায় নিতে চান না। তারা শুধু সাধারণ দায়িত্ব নিয়ে সরব থাকেন।
এমওএস/এএএইচ/এএসএম