জাগো জবস

মোড়া তৈরি করে স্বাবলম্বী পাহাড়ের নারীরা

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদরের নিভৃত পল্লি কাজীপাড়া-হাতিয়াপাড়া। পিছিয়ে পড়া এ জনপদে নেই কোনো ফসলি জমিও। এখানকার বেশিরভাগ মানুষেরই সামাজিক অবস্থান দরিদ্র সীমার নিচে। সেখানেই মোড়া তৈরি করে টেনেটুনে চলা সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা এনেছেন নারীরা।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজীপাড়া-হাতিয়াপাড়ার শতাধিক নারী সংসারের কাজ শেষে বাড়তি রোজগারের আশায় মোড়া তৈরি করছেন। কিন্তু অর্থ সংকটে মোড়া তৈরির উপকরণ কিনতে হিমশিম খেতে হতো তাদের। এমন পরিস্থিতিতে ৫ মাস আগে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার কাজীপাড়ার ২০ জন স্বামীহারা, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত নারীর প্রতি মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসী পারভীন।

মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত এসব নারীর প্রত্যেককে ১০ জোড়া মোড়া তৈরির উপকরণ হিসেবে দেওয়া হয় প্ল্যাস্টিকের বেত (রগ) ও টায়ার। গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসী পারভীনের মানবিক সহায়তার ৫ মাসের মাথায় কাজীপাড়ার সেই ২০ নারী আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। মোড়া তৈরি করে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন এসব নারী। তাদের পরিবারে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা।

আরও পড়ুন: বাবার অনুপ্রেরণায় বিসিএস ক্যাডার মানস

Advertisement

মাটিরাঙ্গার কাজীপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, বাড়ির উঠানে মোড়া তৈরি করছেন আয়েশা আক্তার। মায়ের সঙ্গে বসে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় বাঁশ-বেতের সমন্বয়ে মোড়া তৈরি করছেন কলেজের শিক্ষার্থী আঁখি। শুধু আঁখিই নন, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া এমন অনেকেই লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে মোড়া তৈরির কাজ করছেন।

মোড়া বানানোর ফাঁকে ফাঁকে আয়শা বেগম বলেন, ‘দীর্ঘ ৬-৭ বছর ধরে মোড়া তৈরি করছি। আগে একজনের আয়ে সংসার চলতো। এখন স্বামীর পাশাপাশি আমিও আয় করছি। সন্তানের লেখাপড়া আর সংসারের খরচের পর বাড়তি টাকা সঞ্চয় করছি। স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখেই আছি।’

পাশের বাড়িতে মোড়া তৈরি করছেন আকলিমা বেগম ও আমেনা বেগম। তারা বলেন, ‘এখানকার প্রতিটি বাড়িতেই মোড়া তৈরি করা হয়। সংসারের কাজ শেষে সবাই মোড়া তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। কারোরই যেন অবসর নেই। ফেরদৌসী পারভীনের মানবিক সহায়তায় মোড়া তৈরি করে সবার পরিবারেই কম-বেশি আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে।’

আরও পড়ুন: ১০ হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো চাকরি মেলা

Advertisement

মোড়া তৈরির ফলে পাহাড়ি জনপদের কাজীপাড়া-হাতিয়াপাড়ার প্রতিটি বাড়ি হয়ে উঠেছে ছোট ছোট কুটির শিল্প কারখানা। নারীদের তৈরি মোড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করেন স্থানীয় পাইকাররা। বিপণন প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় প্রায় প্রতিটি ঘরেই বাড়ছে মোড়া তৈরির কাজ। সপ্তাহে একজন নারী দুই-তিন জোড়া মোড়া তৈরি করতে পারেন। আকারভেদে এসব মোড়া প্রতি জোড়া সাড়ে তিনশ টাকা থেকে ছয়শ টাকায় বিক্রি হয়। যা থেকে একেকজন সপ্তাহে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা আয় করেন।

নারীদের নিপুণ হাতে তৈরি এসব মোড়া এরই মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে সমতলের জেলাগুলোয়। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করে সমতলের জেলায় বাজারজাত করে থাকেন স্থানীয় পাইকার মো. দেলোয়ার হোসেন। চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর বাজারে পাহাড়ের মোড়ার ব্যাপক চাহিদার কথা জানান তিনি।

মোড়া তৈরিতে নিয়োজিত নারীদের সরকারি সহায়তার আওতায় আনা হলে মোড়া শিল্প পাহাড়ের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে গড়ে উঠবে বলে মনে করেন মাটিরাঙ্গা পৌরসভার কাউন্সিলর মো. আলাউদ্দিন লিটন।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ পুলিশে এসআই পদে চাকরির সুযোগ

মাটিরাঙ্গা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. ওবাদুল হক বলেন, ‘পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতায় ভূমিকা রাখা নারীদের কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। পিছিয়ে পড়া জনপদের নারীদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর এ সংগ্রাম প্রশংসনীয়।’

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এসইউ/এএসএম