রাজনীতি

সংঘাত নয়, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন চাই: ফখরুল

সংঘাত নয়, শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন চান বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আপনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) অধীনে এ দেশে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আমরা নিরপেক্ষা নির্বাচন চাই। কোনো সংঘাত চাই না। শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতার পরিবর্তন চাই।’

শুক্রবার (১৯ মে) বিকেলে রাজধানীর শ্যামলীতে বিএনপির জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে এ সমাবেশ করে দলটি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আপনি (শেখ হাসিনা) বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন মানবো না। আজকে আমরাও পরিষ্কার করে বলছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া জনগণ মানবে না। ২০১৮ সালের সংলাপ করে বলেছিলেন, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হবে না। অথচ তারপরেও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অজস্র মামলা-হামলার শিকার হতে হয়েছে।’

Advertisement

আরও পড়ুন>> অস্তিত্বের প্রশ্নে বেসামাল সরকার: ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা প্রথম শর্ত দিয়েছি, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে হবে। তারেক রহমানসহ ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে তাকে দেশে ফেরার সুযোগ দিতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। সরকারের সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে।’

সরকার আইন করে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমাচ্ছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘আপনারা নতুন আইন করতে যাচ্ছেন। সেটা হলো- নির্বাচন কমিশন কোনো আসনের নির্বাচন বাতিল করতে পারবে না। তাহলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা থাকলো কোথায়? আপনারা জনগণকে বোকা মনে করছেন, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে বলতে চাই, সরকারের সময় শেষ। এখন আপনারা তাদের কোনো অন্যায় আদেশ মানবেন না। তাহলে সেটা জনগণের বিরুদ্ধে যাবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে বলতে চাই, দয়া করে আপনারা এমন কিছু করবেন না, যেন আপনাদের চিহ্নিত হতে হয়।’

Advertisement

আরও পড়ুন>> বাংলাদেশ কূটনীতিতে একঘরে হয়ে যাবে, আশঙ্কা ফখরুলের

তিনি আরও বলেন, ‘কোথাও শিক্ষার পরিবেশ নেই। তৃতীয় শ্রেণির ফল নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পাচ্ছেন সরকারের লোকজন। স্বাস্থ্যখাতের বেহাল দশা। পিয়ন পদে যে চাকরি করে, তার অ্যাকাউন্টেও কোটি কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। আওয়ামী লীগের লোকজন ছাড়া ব্যবসা করতে পারছেন না কেউ। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর করের বোঝা চাপানো হচ্ছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারকে টেনে না নামালে নামবে না। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সরকার করোনাভাইরাস, ঘূর্ণিঝড় মোখা থামাতে পারলেও জনতার স্রোত থামাতে পারবে না। রাজপথে ফয়সালা হবে। তারপর জনগণের সংসদ গঠন করা হবে।

শেষ সময়ে টিকে থাকতে সরকার মরণ কামড় দিচ্ছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যতই জাপান, আমেরিকা, চীন যান, কোনো লাভ নেই। আপনাদের সময় শেষ।’

আরও পড়ুন>> পশ্চিমাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী রাগান্বিত: ফখরুল

প্রধানমন্ত্রীকে গণভবন ছেড়ে জনতার কাতারে এসে মানুষের চোখের ভাষা বোঝার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সব পাইক-পেয়াদা রেখে, পুলিশ প্রটেকশন... সব কিছু বাদ দিয়ে গণভবন থেকে বের হয়ে আসেন। জনতার কাতারে আসেন। মানুষের চোখের দিকে তাকান। মানুষের চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন।’

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম ৩ থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। অথচ আওয়ামী লীগের ভাইয়েরা, মন্ত্রীরা সারাক্ষণ এসি গাড়িতে, এসি বাড়িতে থাকছেন। পোলাও-কোরমা খাচ্ছেন। তারা বলছেন, সব ঠিক আছে...। আবার তামাশা করে কেউ কেউ বলছেন, দেশ সিঙ্গাপুরের চেয়েও ভালো আছে।’

আরও পড়ুন>> উত্তরা ছেড়ে গুলশানে বাসা নিলেন মির্জা ফখরুল

নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আয়োজনে এ জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান।

অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মিলন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সফু, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল প্রমুখ।

কেএইচ/এএএইচ/এএসএম