খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন বৈধ হওয়া তিন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে শিক্ষায় এগিয়ে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলনে মো. আব্দুল আউয়াল। তবে অন্য সবকিছুতে পিছিয়ে রয়েছে তিনি।
Advertisement
অন্যদিকে সম্পদের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। বার্ষিক আয়ের দিক থেকে এগিয়ে আছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী এসএম শফিকুল ইসলাম মধু।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন প্রার্থীদের হলফনামার বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আব্দুল আউয়ালের হলফনামা সূত্রে জানা যায়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত এ প্রার্থী কামিল পাস। তিনি পেশা হিসেবে লিখেছেন জামি’আ রশিদিয়া গোয়ালখালী মাদরাসার অধ্যক্ষ ও সাধারণ ব্যবসায়ী। আয়ের উৎস হিসেবে তিনি ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন এক লাখ ৩৫ হাজার ২১০ টাকা ও মাদরাসায় শিক্ষকতা পেশা থেকে এক লাখ ৯৬ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ আছে নগদ ৬ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর মূল্য এক লাখ ১৪ হাজার টাকা, আসবাবপত্রের মূল্য ৫০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে ১৫ ভরি স্বর্ণ যার মূল্য ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে শুধু নিজের নামে ৩ দশমিক ৫৭ শতক অকৃষি জমি। তার নামে কোনো মামলা নেই।
Advertisement
আরও পড়ুন: খুলনা সিটি নির্বাচনে ৭ প্রার্থীর ৩ জনের মনোনয়ন বৈধ
মেয়রপ্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক তার হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, তিনি বিএ পাস। তার পেশা ব্যবসা হলেও তা থেকে আয় নেই। বছরে কৃষি খাত থেকে তার আয় দুই লাখ ১০ হাজার টাকা। আর ব্যাংকের সুদ থেকে আয় দুই লাখ ১৮ হাজার টাকা। এছাড়া মেয়র পারিতোষিক ও ভাতা থেকে তার আয় ২৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় খাতে বাড়ি ভাড়া থেকে আয় দেখিয়েছেন এক লাখ ৯১ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক সুদ থেকে আয় ৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা, স্ত্রী উপমন্ত্রীর পারিতোষিক ও ভাতা থেকে আয় ২০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। তালুকদার খালেকের কাছে নগদ টাকা আছে চার কোটি ৭৯ লাখ। চারটি ব্যাংকে তার জমা রয়েছে এক কোটি ১৮ হাজার টাকা। ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ১৮ লাখ টাকার পোস্টাল এফডিআর রয়েছে তার।
এছাড়া দুটি গাড়ির রয়েছে তার। এরমধ্যে লেক্সাস এর দাম তিনি দেখিয়েছেন ৪৪ লাখ টাকা ও মাইক্রোর দাম দেখিয়েছেন ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তার এসি, টিভি, ফ্রিজ ও ওভেনের মূল্য ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং আসবাবপত্রের মূল্য ৭ লাখ টাকা।
খালেকের স্ত্রী পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহারের কাছে নগদ টাকা আছে ৭৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা। চারটি ব্যাংকে তার জমা রয়েছে ৯৫ লাখ ৪ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৫০ লাখ টাকার। তিনি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ব্যবহার করেন। তার দাম ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বৈবাহিক সূত্রে পাওয়া ২৫ ভরি স্বর্ণের মালিক তিনি। স্থাবর সম্পদের মধ্যে তালুকদার খালেক পৈতৃক সূত্রে ২৩ বিঘা কৃষি জমির মালিক।
Advertisement
এছাড়া তিনি ৩ দশমিক ২১ একর কৃষি জমি ও তিন কাঠা অকৃষি জমির মালিক। যার মূল্য ২৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। জমিসহ একটি বাড়ির অর্ধেক মালিক তিনি। যার মূল্য দুই কোটি ১২ লাখ টাকা।
তালুকদার আব্দুল খালেকের স্ত্রীর নামে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট রয়েছে। যার মূল্য ২২ লাখ টাকা। জমিসহ অর্ধেক বাড়ির মালিক তিনি যার মূল্য ২ কোটি ১২ লাখ টাকা। এছাড়া জমিসহ ৫ তলা আরেকটি বাড়ির অর্ধেকের মালিক তিনি সেটির মূল্য দেখানো হয়েছে ৩১ লাখ টাকা। সোনালী ব্যাংক স্যার ইকবাল রোড শাখায় তালুকদার খালেক ও স্ত্রীর নামে ঋণ আছে এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রার্থী তালুকদার খালেকের বিরুদ্ধে আগে ৯টি মামলা ছিল। এরমধ্যে চারটিতে অব্যাহতি ও পাঁচটিতে খালাস পান তিনি।
আরও পড়ুন: বিএনপিকে সিটি নির্বাচনে আসার আহ্বান ইসি রাশেদার
জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম মধু তার হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, তিনি সশিক্ষিত। পেশা হিসেবে তিনি সরকারি প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার উল্লেখ করেছেন। তার প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স মধু ট্রেডার্স। আয়ে তিন প্রার্থীর মধ্যে শীর্ষে তিনি। বছরে তার আয় ৯০ লাখ টাকা। এরমধ্যে বাড়ি ভাড়া থেকে আয় এক লাখ ৮৫ হাজার ৯১৩ ও ঠিকাদারি ব্যবসা থেকে ৮৮ লাখ ২৬ হাজার ৮৮৭ টাকা। শফিকুল ইসলাম মধুর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ও ব্যাংকে জমা এক কোটি ৫২ লাখ টাকা। মধুমতি ব্যাংকের খুলনা শাখায় তিন কোটি টাকার এফডিআর, একটি গাড়ি যার মূল্য সাড়ে ২৩ লাখ টাকা, ১৪ ভরি স্বর্ণ, এক লাখ ৭৮ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক সামগ্রী, দেড় লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র, স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ১৫ লাখ টাকা।
তিনি হলফনামায় স্থাবর সম্পদ হিসেবে দেখিয়েছেন সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় চার কাঠা জমি ও চার তলা বাড়ি। টুটপাড়া মৌজায় ০.১৩৭২ ও ০.১২৪৪ একরের দুটি জমি যেগুলোর মূল্য দুই কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ব্যাংক ঋণেও শীর্ষে রয়েছেন তিনি। মধুমতি ব্যাংক খুলনা শাখায় তার ঋণের পরিমাণ ৫২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তার নামে কোনো মামলা নেই।
আলমগীর হান্নান/আরএইচ/এমএস