মতামত

যৌবনে বায়তুল্লাহ জিয়ারত

আল্লাহতায়ালার পবিত্র ঘর বায়তুল্লাহ বা খানা কাবা এবং শ্রেষ্ঠ নবী হজরত রাসুল করিম (সা.) এর পবিত্র রওজা মুবারক জিয়ারতের সাধ প্রতিটি মুসলমানেরই হৃদয়ে জাগে। ইসলামি ইবাদতগুলোর মধ্যে হজের গুরুত্ব অপরিসীম যা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

Advertisement

পবিত্র কোরআনে এই ইবাদত সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে- ‘আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ ঘরের হজ করা সেসব লোকের জন্য ফরজ যারা সে পর্যন্ত যাওয়ার সামর্থ্য রাখে। কিন্তু যে এটা অস্বীকার করে সে জেনে রাখুক আল্লাহ জগৎসমূহের মোটেও মুখাপেক্ষি নন’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭)।

হাদিসে উল্লেখ রয়েছে- হজরত রাসুল করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজব্রত পালন করে আর কোনো ধরনের অশালীন কথাবার্তা ও পাপ কাজে লিপ্ত না থাকে সে যেন নবজাত শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ অবস্থায় হজ থেকে ফিরে এলো’ (বোখারি ও মুসলিম)।

হজ এমন একটি ইবাদত যা সবার জন্য ফরজ নয়। যাদেরকে আল্লাহতায়ালা বায়তুল্লায় যাওয়ার তৌফিক দিয়েছেন কেবল তাদের জন্যই হজ আবশ্যক। হজের বিভিন্ন নিয়ম কানুন রয়েছে, সব কিছু নিয়ম মাফিক করতে হলে শক্তিরও প্রয়োজন আছে আর তাই যৌবনে হজ করতে পারলে সবচেয়ে উত্তম হয়। এছাড়া আল্লাহপাক যৌবনের ইবাদতকে খুব বেশি পছন্দ করেন।

Advertisement

হজরত ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগ পর্যন্ত আদম সন্তানের পা দুটি আল্লাহর কাছ থেকে সরতে পারবে না। তাহলো- ১. তার জীবনকাল কিভাবে অতিবাহিত করেছে? ২. তার যৌবনকাল কি কাজে বিনাশ করেছে? ৩. তার ধন-সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছে? এবং ৪. তা কি কি খাতে খরচ করেছে। এবং ৫. সে যত টুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল আর সে অনুযায়ী কি কি আমল করেছে? (তিরমিজি, তালিকুর রাগিব)

হাদিসে আরো উল্লেখ রয়েছে- ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিসের আগে সুবর্ণ সুযোগ মনে করো। তাহলো- ১. তোমার যৌবনকে কাজে লাগাও বার্ধক্য আসার আগে। ২. তোমার সুস্থতাকে কাজে লাগাও তোমার অসুস্থ হওয়ার আগে। ৩. তোমার সচ্ছলতাকে কাজে লাগাও অসচ্ছলতার আগে। ৪. তোমার অবসরকে কাজে লাগাও তোমার ব্যস্ততা আসার আগে। আর ৫. তোমার হায়াতকে (জীবনকে) কাজে লাগাও তোমার মৃত্যু আসার আগে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম) তাই যৌবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়কে কোনোভাবেই হেলায় নষ্ট করা যাবে না। যাদের সামাথ্য ও সুযোগ আছে তাদের উচিত হবে যৌবনেই হজ পালন করা।

প্রতিবছর সারা বিশ্ব থেকে লাখ লাখ মুসলিম নর-নারী হজ পালন করেন, আমাদের দেশ থেকেও হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজে যান। আর ক’দিন পরেই হজের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হবে, ইনশাআল্লাহ। যারা হজে যাচ্ছেন তাদের সুবিধার্থে আমাদের দেশের বেশ কয়েকজন হাজিদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম হজ পালন করতে নতুন হাজিদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয় কিনা এবং কোন বয়সে হজ করলে সবচেয়ে ভালো হয়। দেখা যায় একটি বিষয়ে তারা সবাই একমত, তাহলো যৌবন বয়সে হজে যাওয়াই নাকি সবচেয়ে উত্তম।

এ বিষয়ে আলহাজ মীর হাসান আলী নিয়াজ বলেন, আল্লাহতায়ালার অশেষ রহমতে আমি হজ পালন করার তৌফিক পাই। হজ পালন করতে গিয়ে আমি বেশকিছু সমস্যায় পরি, যেমন, যেসব হজ এজেন্সির মাধ্যমে আমরা হজে যাই তাদের বেশির ভাগ এজেন্সিরই কথা ও কাজে মিল নেই। তারা আমাদের যেসব সুযোগ সুবিধার কথা বলে আমাদের নিয়ে যায় কিন্তু সেখানে গিয়ে তার কোনটাই করে না এবং খুব খারাপ আচরন করা হয়।

Advertisement

যারা হজে যেতে চান তারা যেন অবশ্যই ভাল এজেন্সির মাধ্যমে যান আর না হয় অনেক সমস্যায় পরতে পারেন। আর হজের নিয়মকানুন পালন করতে গিয়ে যে বিষয়টি আমি উপলব্ধি করেছি তাহলো যৌবন বয়সেই হজে যাওয়া উচিত। কারণ হজ করতে অনেক শক্তির প্রয়োজন, কয়েক মাইল পায়ে হাঁটতে হয়, তাই হাঁটারও অভ্যাস থাকা চাই। আর বৃদ্ধ বয়সে হজে গেলে পরিপূর্ণ হজ পালন করা অনেক কষ্টকর।

আলহাজ ডা. আবু সাঈদ আলী আহমদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ছয়বার হজ পালন করার তৌফিক পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। হজ পালন করতে গিয়ে যে বিষয়টি সবচে বেশি লক্ষ করেছি তাহলো বৃদ্ধদের হজ পালন অনেক কষ্টকর হয়। দেখা যায় আফ্রিকান হাজিরা যখন দল বেধে শয়তানকে পাথর মারতে যায় বা হাঁটাচলা করে তখন পাশে কে আছে তা তারা খেয়াল করে না, যার ফলে অনেক সময় বৃদ্ধ হাজিরা মাটিতে পড়ে যান এবং একারণে মৃত্যুবরণও করতে হয়।

তাই আমার মতে ৫০ বছরের মধ্যেই হজ সম্পন্ন করা উচিত, যেমনটা অন্যান্য দেশের লোকেরা করে থাকেন। যারা নতুন যাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, তারা যেন পানি অবশ্যই বেশি পান করেন কিন্তু খাবার বেশি খাবেন না যতটুকু খেলে চলে ততটুকুই খান বেশি খেলে ইবাদতে কষ্ট হয়। রোদের জন্য ছাতা ব্যবহার করতে পারেন যদি অসুস্থ হয়ে পরেন তাহলে ভয় না পেয়ে হাজিদের জন্য যে চিকিৎসা ক্যাম্প রয়েছে সেখানে যাবেন।

হজ পালন করতে মহিলাদের তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তবে মহিলারা ক্যাম্প থেকে যদি একা একা কোথাও যায় সে ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় নির্দিষ্ট ক্যাম্পে ফেরত আসা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তাই কোথাও যেতে হলে যার সাথে হজে যাচ্ছেন তাকে সাথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা করতে হবে।

আল্লাহতায়ালা সকলকে সঠিক নিয়তে সুন্দর ও সুস্থমতে হজ পালন করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।masumon83@yahoo.com

এইচআর/এমএস