পুরোনো শ্যালো মেশিনের যন্ত্রাংশ ও জাহাজের নাট-বল্টু বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে নওগাঁয় গড়ে উঠেছে ‘পুরাতন মেশিন পট্টি’। দাম কম হওয়ায় ক্রেতাদের কাছেও চাহিদা ব্যাপক এসব যন্ত্রাংশের। পার্শ্ববর্তী জেলার ব্যবসায়ীরাও এখানে আসেন মালামাল কিনতে। প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ টাকার বেচাকেনা হয় এ বাজারে। মৌসুমে লেনদেন আরও বেড়ে যায়। এ পট্টিতে কর্মসংস্থান হয়েছে অন্তত ২০০ শ্রমিকের।
Advertisement
নওগাঁ শহরে লিটন ব্রিজের ওপর ১৯৮৫ সালে পুরোনো শ্যালো মেশিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও জাহাজের নাট-বল্টু বিক্রি শুরু হয়। ওই সময় হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী শুরু করেন এ ব্যবসা। পরবর্তীসময়ে ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শহরের মাঝখানে কাঁচাবাজারের পাশে ‘পুরাতন মেশিন পট্টির’ বাজার গড়ে ওঠে, যা ‘ভাঙারি পট্টি’ নামেও পরিচিত।
বর্তমানে এ পট্টিতে শতাধিক দোকান রয়েছে। যেখানে সবধরনের মেশিনারিজ যন্ত্রাংশ ও নাট-বল্টু পাওয়া যায়। কোনো ক্রেতা এ পট্টিতে কিছু কিনতে এলে তাকে খালি হাতে ফেরত যেতে হয় না। নতুনের তুলনায় পুরোনো এসব যন্ত্রাংশের দাম তুলনামূলক কম এবং মান ভালো হওয়ায় এখানকার যন্ত্রাংশে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরগরম থাকে এ পট্টি। প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়। তবে বোরো ও আমন ধানের মৌসুমে লেনদেনের অংক আরও ছাড়িয়ে যায়।
Advertisement
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা থেকে জাহাজের পুরোনো নাট-বল্টু কিনে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। গত বছর এসব নাট-বল্টু ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে কেনা হলেও এবছর দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। মেশিনারি যন্ত্রাংশ পিস হিসেবে বিক্রি হয়। তবে পুঁজি সংকটে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। লভ্যাংশ কমে গেছে তাদের।
শ্রমিক রমজান আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাত বছর ধরে এ পট্টিতে কাজ করছি। আগে মজুরি কম থাকলেও বর্তমানে সপ্তাহে দুই হাজার টাকা মজুরি পাই। আমার মতো এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে অন্তত ২০০ শ্রমিকের। এ মজুরিতেই চলছে জীবন-জীবিকা।’
খুচরা ব্যবসায়ী মো. মানিক বলেন, ‘এসব নাট-বল্টু আগে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে আসতাম। কেজিতে ১০-১৫ টাকা লাভে বিক্রি করতাম। বর্তমানে দাম বেড়ে ১৪০-১৫০ টাকা কেজি হয়েছে। দাম দ্বিগুণ হওয়ায় পুঁজি সংকটে পড়েছি।’
চৌধুরী বিয়ারিং হাউজের স্বত্বাধিকারী আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘জাপান ও কোরিয়া বিয়ারিংয়ের দাম ১২৫-১৩০ টাকা। তবে ওই মডেলের পুরোনো বিয়ারিং বিক্রি হয় মাত্র ২৫-৩০ টাকায়। এগুলো শ্যালো মেশিন, ভ্যান ও রিকশায় ব্যবহৃত হয়। আমাদের এখান থেকে চালক ও কৃষকরা এগোলো স্বল্পমূল্যে কিনে উপকৃত হন। আমাদের ব্যবসাও মোটামুটি ভালো হয়।’
Advertisement
যন্ত্রাংশের দাম দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় বেচাকেনা কমে গেছে বলে জানান জিহাদ মেশিনারিজের স্বত্বাধিকারী ওবায়দুল হক।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে অল্প পরিমাণ বিক্রি হলেও লাভ ভালো ছিল। এখন বেশি পরিমাণ বিক্রি হলেও লাভ কম আসে। যন্ত্রাংশের দাম বাড়ায় ব্যবসা মন্দা চলছে। মৌসুমে ব্যবসা ভালো হলেও অমৌসুমে খুবই সীমিত।’
জয়পুরহাট থেকে পুরোনো শ্যালো মেশিনের যন্ত্রাংশ কিনতে আসা রফিকুল বলেন, ‘সব ধরনের মালামাল নওগাঁয় পাওয়া যায়। অন্য জেলা থেকে এখানে দামও কিছুটা কম। এখান থেকে মালামাল কিনে কিছুটা লাভে বিক্রি করতে পারি।’
এ বিষয়ে নওগাঁ নাট-বল্টু পৌর সমিতির সাধারণ সম্পাদক আপন হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ পট্টিতে শতাধিক দোকান রয়েছে। দোকানির সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাজারটির জায়গার স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। জায়গাটি অন্যত্র স্থানান্তরসহ ব্যবসার পরিধি বাড়াতে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ পাওয়া গেলে ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধা হয়।
নওগাঁ বিসিক শিল্পনগরীর উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার বলেন, যারা এসব ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের প্রয়োজন হলে ঋণ দেওয়া হবে। আমরা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারি।
এসআর/এমএস