আইন-আদালত

সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে ‘নিরপেক্ষ’ সাক্ষী পায়নি পিবিআই

দোকান বরাদ্দের কথা বলে ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায়নি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

Advertisement

তদন্ত শেষে গত ৮ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক এ জেড এম মনিরুজ্জামান আদালতে এ প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এ মামলার অভিযোগ বিষয়ে তদন্ত করার সময় নিরপেক্ষ কোনো সাক্ষী খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মামলার অভিযোগে বাদী দেলোয়ার হোসেন ২৬ জন সাক্ষীকে করেন। তাদের মধ্যে ৯ সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। বাকি ১৭ সাক্ষীকে তদন্তকালে পাওয়া যায়নি। যে কারণে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করাও সম্ভব হয়নি। বাদীকে বলা হলেও তিনি সাক্ষীদের হাজির করতে ব্যর্থ হন। তদন্তে নিরপেক্ষ কোনো সাক্ষী পাওয়া যায়নি।

এদিকে, বুধবার (১৭ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত এ প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলা খারিজ করে দেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাজেদ, কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদ।

Advertisement

২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মার্কেটের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দুলু বাদী হয়ে মামলা করেন। পরদিন ৩০ ডিসেম্বর আদালত মামলাটির অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেলোয়ার হোসেনের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২-এ নকশাবহির্ভূত দোকান নির্মাণ করা হয়। যাদের নামে দোকান স্থায়ীভাবে বরাদ্দ আছে, তাদের বুঝিয়ে ও হুমকি দিয়ে দোকান বরাদ্দ নিতে বাধ্য করার অভিযোগ করা হয়। তবে তদন্তকালে তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট বাদী দেলোয়ারকে বনানীর বাসায় ডেকে নিয়ে যাওয়ার সপক্ষে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণও পাওয়া যায়নি। দোকান বরাদ্দ পেতে যারা প্রত্যাশায় ছিলেন, তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, সাঈদ খোকন, ইউসুফ আলী সরদার ও মাজেদ পরস্পর যোগসাজশে ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২-এর মূল ভবনের নকশাবহির্ভূত অংশে দোকান বরাদ্দের ঘোষণা দেন। ঘোষণা শুনে ব্যবসায়ীরা সাঈদ খোকনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে ব্যবসায়ীরা কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদের কাছে যান। তারা বলেন, টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আপনাদের দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে।

এতে আরও বলা হয়, বিষয়টি আইনবহির্ভূত জেনে বাদী দেলোয়ার হোসেন দুলু আসামিদের দোকান বরাদ্দের প্রক্রিয়া বন্ধ করতে তৎপর হন। এরপর আসামিরা দেলোয়ারকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট আসামি ইউসুফ আলী সরদার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদ বাদী দেলোয়ারকে বনানী ডেকে নেন। তারা তাকে বলেন, দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া বন্ধ করো, নইলে খুব খারাপ হবে।

Advertisement

তবে তিনি নিজের ও পরিবারের কথা চিন্তা করে তাদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে সাহস পাননি। আসামিরা বিনা রশিদে কোটি কোটি টাকা নেন। পরে তার সঙ্গে পরামর্শের জন্য এলে তিনি তাদের প্রমাণ রাখার কথা বলেন। এরপর ভুক্তভোগীরা সাঈদ খোকনের অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময়ে ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ টাকা জমা দেন।

জেএ/এএএইচ/এএসএম