জাতীয়

চীন-রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিবেচনা করে না যুক্তরাষ্ট্র

রাশিয়া, চীন কিংবা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তার সম্পর্ক নির্ধারণ করে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি অ্যাসিট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের মধ্যে যে সম্পর্ক, তা চীন, রাশিয়া ও অন্য কোনো দেশের দ্বারা নির্ধারিত হয় না।’

Advertisement

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সিনিয়র এ কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে ঢাকায় তিনি এ সাক্ষাৎকার দেন। গত ১২-১৩ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সে মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আফরিন আখতার।

সাক্ষাৎকারে মার্কিন সিনিয়র এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্বপ্ন নিয়ে গত মাসে আইপিও প্রকাশ করেছে, সেখানে ঢাকার যে মনোভাব ফুটে উঠেছে তার সঙ্গে আইপিএসের মিল রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও আইপিএসের মাধ্যমে এ অঞ্চলের জন্য একই মনোভাব পোষণ করছে।

আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আমাকে ক্ষমতায় চায় না: শেখ হাসিনা

Advertisement

ডেপুটি অ্যাসিট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার বলেন, ‘বহুমুখী ও বহুমাত্রিক সম্পর্কে আবদ্ধ বাংলাদেশ এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। যেমন- ঢাকা সম্প্রতি ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক (আইপিও) প্রকাশ করেছে, যার অনেক কিছুর সঙ্গে ইউএস ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির (আইপিএস) অভিন্নতা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যাপকভাবে দুই দেশের নথিপত্র, স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) ও বাংলাদেশের আউটলুকের মাঝে অনেক মিল পেয়েছি। আমরা উভয়ে অবকাঠামো ও উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করেছি।’

আফরিন আখতার বলেন, আমি শুধু রাশিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের কথা বলতে চাই...। আমরা সত্যিকার অর্থে ইতিবাচকভাবে একে স্বাগত জানাই।

ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক (আইপিও)

Advertisement

মার্কিন এ কূটনীতিক আইপিও বিষয়ে ঢাকার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইপিএস ও বাংলাদেশের আইপিও- এই দুই নথিতে অনেক মিল রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানের অনানুষ্ঠানিক কৌশলগত ফোরাম কোয়াডের অন্য সদস্য বাংলাদেশের আইপিওকে স্বাগত জানিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শংকর চলতি সপ্তাহে বলেন, বাংলাদেশের আইপিওতে ‘তারা সন্তুষ্ট’।

আরও পড়ুন>> নিষেধাজ্ঞার ভয় না পেয়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইপিওতে ‘সমুদ্র নিরাপত্তা’ বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য কোয়াড সদস্যদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এ বিষয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার সুযোগ তৈরির চেষ্টা করবো। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের আইপিওর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যেখানে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য এবং বাংলাদেশে শীর্ষ বিনিয়োগকারী। সুতরাং আমরা আবারও আগামী বছরগুলোতে এটিই তৈরি করতে চাই।

নিরাপত্তা সহযোগিতা

মার্কিন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্টের (জিএসওএমআইএ) অবশিষ্ট বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে, যা সরকার থেকে সরকারের মধ্যকার একটি মৌলিক চুক্তি। এটি ব্যাপক সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করবে। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত উল্লেখ না করে তিনি বলেন, আশা করছি, আগামী কয়েকমাসের মধ্যে এটি সই হবে।

জিএসওএমআইএ হলো যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য সরকারের মধ্যে তাদের নিরাপত্তা সহযোগিতা সংক্রান্ত গোপন সামরিক তথ্য সুরক্ষার একটি পারস্পরিক আইনগত বাধ্যতামূলক চুক্তি।

আরও পড়ুন>> নির্বাচন নিয়ে সরকার কোনো ভয়ে নেই: প্রধানমন্ত্রী

আফরিন আখতার বলেন, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের প্রতিরক্ষা অ্যাটাচে নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করে। যুক্তরাষ্ট্র তার ইন্দো-প্যাসিফিক মেরিটাইম ডোমেইন অ্যাওয়ারনেস ইনিশিয়েটিভের (আইপিএমডিএ) অধীনে সমুদ্র এলাকায় অভিন্ন পরিচালনা কার্যক্রম উন্নয়নে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোতে রাডার প্রযুক্তি সরবরাহের পরিকল্পনা করেছে।

র‌্যাব ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের অপরাধবিরোধী এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞার পর ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে’ যাওয়ায় ওয়াশিংটন সন্তুষ্ট। আমরা বিচারবহির্ভূত হত্যা কমে যাওয়াকে স্বাগত জানাই। তবে আমাদের দীর্ঘমেয়াদে এ প্রবণতার স্থায়িত্ব, র‌্যাবের আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দরকার।

তিনি আরও বলেন, আমি বলব যে, র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে বা নিষেধাজ্ঞা অপসারণের জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতিগত পরিবর্তন দেখতে হবে।

আরও পড়ুন>> পশ্চিমাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী রাগান্বিত: ফখরুল

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি বলেন, ‘বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট; বিশেষ করে কোথায় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রয়োগ করা হচ্ছে, তা নিয়ে ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন।’

রোহিঙ্গা ইস্যু

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এ কর্মকর্তা জানান, তার দেশ (যুক্তরাষ্ট্র) সঠিক পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে সংকটের দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সমাধানের উপায় খুঁজতে কাজ করছে। তিনি এ কাজকে কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং বলে বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি স্বেচ্ছায় নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের নিশ্চয়তা দিচ্ছে না। আমরা মিয়ানমারের লোকজনকে জোরপূর্বক যেকোনো প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টার বিরোধিতা করবো। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসন উদ্যোগের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশে ভবিষ্যতে আরও বেশি রোহিঙ্গা নিতে পারে।

আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৮২ টাকা কেজি দরে চিনি কিনবে সরকার

আফরিন আখতার বলেন, অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরের জন্য আমরা খুবই ছোট আকারে পাইলট কর্মসূচি শুরু করেছি। আশা করছি, তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য বৃহৎ দাতা দেশ যুক্তরাষ্ট্র (মানবিক সহায়তা হিসেবে)। অথচ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অন্য সদস্যরা ‘একটি অর্থও দেয়নি’। এটি দুঃখজনক।

বিনিয়োগ পরিকল্পনা

আফরিন আখতার বলেন, মার্কিন সরকার বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতের ওপর জোর দিচ্ছে। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার সুযোগ খুঁজবো এবং (জ্বালানি খাতে সহায়তার জন্য) অপেক্ষা করবো।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অবিশ্বাস্যভাবে শক্তিশালী। যদিও মার্কিন ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ আরও উন্নত করা দরকার।

আরও পড়ুন>> কূটনীতিকদের অতিরিক্ত নিরাপত্তার বিষয়ে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন কর্মকর্তা আরও বলেন, এখানে আমাদের বাণিজ্য অ্যাটাচে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও স্বচ্ছ ও যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। এখানকার মার্কিন দূতাবাসের শ্রম অ্যাটাচেও ইউনিয়ন নিবন্ধন ও শ্রম আইনের অভিন্ন প্রয়োগের ক্ষেত্রে শ্রম পরিস্থিতির উন্নতিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

এএএইচ/এএসএম