রাজনীতি

নির্বাচনকালীন সরকারের ইঙ্গিত জনগণকে বিভ্রান্ত করার জাল: মান্না

রাজনৈতিক মিত্রদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনকালীন সরকারের ইঙ্গিত ‘জনগণকে বিভ্রান্ত করার জাল’ বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।

Advertisement

বুধবার (১৭ মে) দুপুরে তোপখানা রোডে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়ে আয়োজিত গণতন্ত্র মঞ্চের এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

মান্না বলেন, ‘উনি (শেখ হাসিনা) কোনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাব দেননি। উনি নিজে ক্ষমতায় থাকবেন, থেকে প্রথমদিকে বলেছিলেন তার সেক্রেটারিসহ অন্যান্যদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ে জায়গা দেবেন। পরে যখন মূল অপজিশন বিএনপি বললো যে, আমরা এটাতে যাবোই না। তখন বললেন যে, ওদের কেন নেবো? তখন তারা (সরকার) বলছে, ওদের (বিএনপি) নেবো না, যারা সংসদে আছে তাদের দিয়ে...। সংসদে যারা আছে তারা তো তাদের সঙ্গে আছেই। কী করতে হবে সেটা তারা জানেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য, এ সরকারকে যেতেই হবে। তারপর নতুন করে একটা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশ্ন। বাকি যেগুলো ওরা বলেছেন, ওইগুলো মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য, জাল বিছানোর জন্য বলছেন, ওইগুলোতে আমরা খুব কেয়ার করছি না।’

Advertisement

এসময় সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার নেতৃত্বে সংসদে থাকা তার রাজনৈতিক মিত্রদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের যে ইঙ্গিত দিয়েছেন তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের সরকার বর্তমান কর্তৃত্ববাদী নিপীড়নমূলক সরকারের সম্প্রসারণ।’

আরও পড়ুন>> সংসদে প্রতিনিধিত্বকারীদের নিয়ে হবে নির্বাচনকালীন সরকার

তিনি বলেন, ‘২০১৪ ও ২০১৮ সালের তামাশাপূর্ণ জালিয়াতির নির্বাচন প্রমাণ করেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ন্যূনতম কোনো অবকাশ নেই। সে কারণে আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ নির্বাচনের পূর্বে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বিলুপ্তি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোপরি সরকার ও শাসন্যবস্থা পরিবর্তনের সুনির্দিষ্ট ১৪ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ ধারায় বিএনপিসহ বিরোধীদলসমূহের সঙ্গে গণসংগ্রাম জোরদার ও বিস্তৃত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছি।’

ঢাকায় অবস্থানরত ছয় দেশের কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা কূটনৈতিক সম্পর্ক ও বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে অবিশ্বাস ও অস্থিরতা যে তৈরি করবে তা অনুমান করা কঠিন নয়। সরকারের এসব আচরণ থেকে বোঝা যায় যে, বিশাল বহর নিয়ে তিন দেশে প্রধানমন্ত্রীর ১৫ দিনের সফর দেশ ও সরকারের জন্য তেমন কিছু অর্জন হয়নি। অর্থাৎ ক্ষমতায় থেকে আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে কথিত এসব উন্নয়ন অংশীদারদেরকে তিনি ম্যানেজ করতে পারেননি।’

Advertisement

‘গত ১৫ মে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন ও বিবিসিতে দেওয়া তার সাক্ষাৎকার এবং সরকারের পদক্ষেপেই তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এসব তৎপরতায় সরকারের রাগ ও ক্ষোভেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। হতাশা ও ক্ষোভ থেকে নেওয়া এসব বক্তব্য ও পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করবে, যার সম্ভাব্য মাশুল দিতে হবে দেশ ও দেশের জনগণকে।’ যোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলন থেকে ঢাকা থেকে দিনাজপুর অভিমুখে পাঁচদিনের রোডমার্চ ও পদযাত্রা কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।

কর্মসূচির বিষয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা যে কর্মসূচি দিয়েছি এটা সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি নয়। এটা হচ্ছে সরকার পতনের লক্ষ্যে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ। চূড়ান্ত যে কর্মসূচি সেটা চূড়ান্ত সময় আসবে।’

আরও পড়ুন>> নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বড় ২ দলের অনড় অবস্থান বিপজ্জনক: সিইসি

এসময় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার নানা কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছি। সরকার পতনের লক্ষ্যে জনগণের যে একটা অভ্যুত্থান সেটা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ঘটবে। দিনক্ষণ ঠিকঠাক করে আন্দোলনের বিষয়টি আমরা এভাবে বিশ্বাস করি না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, আন্দোলনটা জনগণের ভেতর থেকে তৈরি হচ্ছে এবং সেই আন্দোলন সময়মতো তার ভূমিকা পালন করবে। সরকার কিন্তু আন্দোলনের প্রস্তুতিতেই এরই মধ্যে ভয় পেয়ে গেছে। এরই মধ্যে প্রস্তুাব দিয়েছে যে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে তারা নিতে চায়। তার মানে হচ্ছে যে, তারা আগে-ভাগে একটা আপসের দিকে এগোচ্ছে। আন্দোলনের গতি যত বাড়বে, আমরা দেখবো যে সুর বিভিন্নভাবে বদলাচ্ছে। এসব করে কোনো লাভ হবে না। তাদের ক্ষমতা ছাড়তে হবে, জনগণ আর তাদের ওই ২০১৪ ও ২০১৮ এর মতো ভোট করতে দেবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, ইমরান ইমন, সাকী আনোয়ার, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, মোশাররফ হোসেন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের হাবিরুর রহমান রিজু, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নি শিখা জামালী, আকবর খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কেএইচ/ইএ/জিকেএস