দেশজুড়ে

কুমিল্লায় অসহায়দের ভরসা ‘মানবিক ঝুড়ি’

‘এই ঝুড়ি থেকে প্রয়োজনীয় খাবার নিয়ে যান। এই ঝুড়িতে গরিবের জন্য খাবার রেখে যান।’ ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বোরোড এলাকায় রেলিশ বেকারি অ্যান্ড কনফেকশনারিতে এমন লেখা দেখে যে কারো চোখ আটকে যায়।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা যায়, দোকানের সামনে একটি কাঠের বক্স রাখা হয়েছে। বক্সের মধ্যে পাউরুটি, বিস্কুট ও কেকসহ বিভিন্ন খাবার রয়েছে। এসব খাবার অসহায়, দরিদ্র ও প্রতিবন্ধীরা পছন্দমতো নির্ভয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এমন মহতি উদ্যোগ নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধীকারী মহসিন হোসাইন সজিব।

জানা যায়, ২০২১ সাল থেকে দারিদ্র মানুষের জন্য পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় প্রথমে একটি শো-রুমে হতদরিদ্র মানুষের জন্য তিনি এ উদ্যোগ নেন। প্রতিদিন সকাল-বিকাল দুইবার এই ঝুড়িতে গরিব মানুষের জন্য বিনামূল্যে খাবার রাখা হতো। পরে বিষয়টি নজর কাড়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের। য দ্রুত সময়ের মধ্যে পাবলিক ঝুড়িতে পরিণত হয়। পরে ২০২২ সালে বিশ্বোরোডের আরও একটি শাখায় এমন বক্সটি চালু করেন তিনি। বর্তমানে রেলিশ বেকারির ক্রেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আশপাশের দোকান থেকেও খাবার কিনে এখানে রেখে যান। মানবিক এ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য মহসিন প্রশংসায় ভাসছেন।

মো. রিয়াজুল হক নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জাগো নিউজকে জানান, রেলিশের উদ্যোগে মানবিক যে বাক্সটি চালু করা হয়েছে এতে আমরাও যতেষ্ট সহযোগিতা করি। ইতিমধ্যে এটি এলাকার অসহায়দের ভরসাস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় ও সামাজিক মাধ্যমেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রতিদিন অসংখ্য অসহায় মানুষ এ ঝুড়ি থেকে খাবার নিচ্ছেন। আশা করছি ভালো এ কাজটি আরও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। মানুষের মধ্যে মানবতাবোধ জাগ্রত থাকবে।

Advertisement

খাবার নিতে আসা আয়েশা বেগম নামে এক ভিক্ষুক বলেন, প্রায় এ বক্স থেকে বিস্কুট-পাউরুটি নিই। কোনো পয়সা দিতে হয় না। দোকানের মালিকের জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে নেক হায়াত দেন। আমাদের মতো গরীবদের সহযোগিতা করতে পারেন। অনেকে আছেন খাবার তো দূরের কথা ভিক্ষাও দেয় না। উনি মাগনায় (বিনা টাকায়) না দিলে কিনে খাওয়ার সমর্থ ছিল না।

বিশ্বোরোড সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকায় রেলিশ শো-রুমের ম্যানেজার মো. নাজমুল ভূইয়া জাগো নিউজকে বলেন, এ আয়োজনকে মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। রিকশা চালক থেকে শুরু করে বিভিন্ন অসচ্ছ্বল মানুষ আনন্দের সঙ্গে বাক্স থেকে খাবার নেন। ২০২২ সালে শাখাটি উদ্বোধনের পর থেকে অসহায় মানুষদের জন্য মালিক পক্ষ এ উদ্যোগ নিয়েছে। যা আজ পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে রেলিশ বেকারি অ্যান্ড কনফেকশনারির স্বত্ত্বাধীকারী মহসিন হোসাইন সজিব জানান, তুরস্কের বিভিন্ন দোকানে অসহায় মানুষের জন্য বাক্স রাখতে দেখেছি। এতে প্রয়োজনীয় খাবার রাখেন মালিক পক্ষ এবং ক্রেতারা। সেই আলোকে ২০২১ সালে প্রথমে লাকসাম রোড শো-রুমের এটি চালু করি। পরবর্তীতে ২২ সালে বিশ্বোরোড সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকার শো-রুমেও চালু করি। এতে আমরা বিস্কুট, পাউরুটি ও কেকসহ বিভিন্ন খাবার রাখি। এ ছাড়াও বিভিন্ন মানুষ খাবার কিনে এখানে রেখে যান। এইসব খাবার পথচারী, রিকশাচালক, ভিক্ষুক ও আসহায় মানুষ প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়ে যান।

জাহিদ পাটোয়ারী/এএইচ/জিকেএস

Advertisement