হাওরের জমিতে ধান চাষের পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া চাষ শুরু করেন কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার সাচাইল গ্রামের কৃষক ওমর ফারুক। মিষ্টি কুমড়া চাষে পেয়ে যান সফলতাও। কয়েক বছর ধরে চাষের খরচ মিটিয়ে লাভও হয়েছে তার। তাই হাওরে ধান চাষ না করে মন দিয়েছেন মিষ্টি কুমড়া চাষে।
Advertisement
এবারও মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন তিনি। ফলনও এসেছে ভালো। চাষ করার ৩ মাসের মধ্যে বিক্রি করেছেন প্রায় ১০ লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া। জমিতে আরও যে পরিমাণ আছে, সেটিও ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার মতো বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। এবার মিষ্টি কুমড়া চাষ করে বাজিমাত করেছেন এই কৃষক। অনেক বেকার যুবক তার সফলতা দেখে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষিতে। ওই এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকদের কাছে এখন অনুপ্রেরণার নাম ওমর ফারুক।
জানা গেছে, ব্যাংক এশিয়া থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে এবার ১১ একর জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেন কৃষক ওমর ফারুক। ফলনও হয়েছে বাম্পার। কোনোটির ওজন ১৫-২০ কেজি পর্যন্ত হয়েছে। প্রতিদিনই পাইকার ও আড়তদাররা এসে জমি থেকে মিষ্টি কুমড়া কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। শুধু বিক্রিই করছেন না, ফলন ভালো হওয়ায় প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজনদেরও দিচ্ছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা তার জমি নিয়মিত পরিদর্শন ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলেও জানান কৃষক ওমর ফারুক।
আরও পড়ুন: জয়পুরহাটে ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে শঙ্কা
Advertisement
কৃষক ওমর ফারুক বলেন, ‘ব্যাংক এশিয়া থেকে ঋণ নিয়ে আমি ১১ একর জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি। মিষ্টি কুমড়া চাষ করতে আমার ৭ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। কয়েক বছর ধরে আমি এ জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে আসছি। ১৫-২০ দিন পর পর জমি থেকে মিষ্টি কুমড়া উঠিয়ে থাকি। মিষ্টি কুমড়া চাষ করে আমি স্বাবলম্বী হয়েছি। ব্যাংক এশিয়ার মতো অন্য ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়ালে কৃষকেরা স্বাবলম্বী হতে পারবেন।
কৃষিশ্রমিক সমীর হোসেন বলেন, ‘চাচার এই মিষ্টি কুমড়া চাষের জমিতে প্রতিদিনই বেশ কয়েকজন শ্রমিক কাজ করে থাকেন। এ কাজ করে যে টাকা পাই, তা দিয়েই আমাদের সংসার চলে।’
দিকধাইর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সারোওয়ার আলম বলেন, ‘মিষ্টি কুমড়া চাষ করে শুধু ওমর ফারুকই লাভবান হয়েছেন, তা নয়। এখানে অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। ওমর ফারুক একজন সৃজনশীল উদ্ভাবনী কৃষক। বেশ কিছু বছর ধরে তিনি মিষ্টি কুমড়া চাষে জড়িত। এবার তার জমিতে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। অনেক লাভ হবে আশা করছি।’
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে নিরাপদ মুগডাল উৎপাদন
Advertisement
ব্যাংক এশিয়া তাড়াইল শাখার ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখা প্রধান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ব্যাংক থেকে কম সুদে কৃষকদের ঋণ দেওয়া হয়। কৃষক ওমর ফারুক ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে বাজিমাত করেছেন। কৃষকদের জন্য এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।’
কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবদুস সাত্তার বলেন, ‘জেলায় এবার ৯২০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে। এক হেক্টর জমিতে ধান হয় ৬ টন। সেখানে মিষ্টি কুমড়া হয় ৩০-৩৫ টন। হাওরে ধানের ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। আগাম বন্যায় ধান নষ্ট হতে পারে বা শিলাবৃষ্টিতে ধান নষ্ট হতে পারে। মিষ্টি কুমড়ার কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।’
তিনি বলেন, ‘মিষ্টি কুমড়ার বাজার দর খুবই ভালো। জমি থেকে পাইকাররা এসে মিষ্টি কুমড়া নিয়ে যাচ্ছেন। মিষ্টি কুমড়া চাষে কৃষকরা খুবই লাভবান হচ্ছেন। কৃষকদের ধান চাষ না করে অর্থকরি ফসল চাষের পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন। আমরা কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আগামী বছর জেলায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হবে।’
এসকে রাসেল/এসইউ/জেআইএম