দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি কবি, নাট্যকার ও সংগীতস্রষ্টা। তিনি ডি. এল. রায় নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি প্রায় ৫০০ গান রচনা করেন। এই গানগুলো বাংলা সংগীত জগতে দ্বিজেন্দ্রগীতি নামে পরিচিত।
Advertisement
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্ম ১৮৬৩ সালের ১৯ জুলাই অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। ১৮৭৮-এ প্রবেশিকা পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন। এফ এ পাস করেন কৃষ্ণনগর গভঃ কলেজ থেকে। পরে হুগলি কলেজ থেকে বিএ এবং ১৮৮৪ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে এমএ পাস করেন। কিছুদিন ছাপরার রেভেলগঞ্জ মুখার্জ্জি সেমিনারিতে শিক্ষকতা করার পর সরকারি বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ডে যান কৃষিবিদ্যা শিক্ষা করার জন্য।
ভারতে ফিরে তিনি জরিপ ও কর মূল্যায়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং মধ্যপ্রদেশে সরকারি দপ্তরে যোগ দেন। তিনি দিনাজপুরে সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ পান। তিনি প্রখ্যাত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক আন্দুলিয়া নিবাসী প্রতাপচন্দ্র মজুমদারের কন্যা সুরবালা দেবীকে বিবাহ করেন ১৮৮৭ সালে। ১৮৯০ সালে বর্ধমান এস্টেটের সুজামুতা পরগনায় সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত অবস্থায় কৃষকদের অধিকার বিষয়ে তার সঙ্গে বাংলার ইংরেজ গভর্নরের বিবাদ ঘটে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি ১৯১৩ সালে সরকারি চাকরি হতে অবসর নেন।
অল্প বয়স থেকেই কাব্য রচনার প্রতি তার ঝোঁক ছিল। তার রচিত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে আর্যগাথা (১ম ও ২য় ভাগ) ও মন্দ্র বিখ্যাত। এছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো-আষাঢ়ে, হাসির গান, মন্দ্র, আলেখ্য, ত্রিবেণী ইত্যাদি।
Advertisement
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বিখ্যাত নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একঘরে, কল্কি-অবতার, বিরহ, সীতা, তারাবাঈ, দুর্গাদাস, রাণা প্রতাপসিংহ, মেবার পতন, নূরজাহান, সাজাহান, চন্দ্রগুপ্ত, সিংহল-বিজয় ইত্যাদি। দ্বিজেন্দ্রলালের সাহিত্যে তার দেশপ্রেমের পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে। পাঠান-মুঘল সম্রাটদের বিরুদ্ধে দেশের ভারতীয় মানুষের স্বাধীনতার লড়াইয়ের মর্মস্পর্শী বিবরণ বার বার তার নাটকগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে।
তার উল্লেখযোগ্য গান-ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা, বঙ্গ আমার! জননী আমার! ধাত্রী আমার! আমার দেশ, আজি এসেছি আজি এসেছি এসেছি বঁধু হে, তুমি বাঁধিয়া কী দিয়ে রেখেছ হৃদি এ, হৃদয় আমার গোপন করে ইত্যাদি। ১৯১৩ সালের ১৭ মে কলকাতায় দ্বিজেন্দ্রলাল মৃত্যুবরণ করেন।
কেএসকে/জেআইএম
Advertisement