ধর্ম

হজ ও ওমরা পালনকারীরা পাবেন যেসব প্রতিদান

ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি হজ। এ হজ ও ওমরা পালনে আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে দুনিয়া ও পরকালের জন্য অনেক প্রতিদান। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকের একাধিক বর্ণনায় হজ ও ওমরা পালনকারীর প্রতিদান পাওয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলো কী?

Advertisement

হজ পালন উত্তম ইবাদাত

হজরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা সর্বোত্তম আমল কোনটি? জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-

قَالَ إِيمَانٌ بِاللهِ وَرَسُولِه قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ جِهَادٌ فِي سَبِيلِ اللهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ حَجٌّ مَبْرُورٌ

Advertisement

‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনা। এরপর জিজ্ঞাসা করা হলো- তারপর কোন আমল? তিনি উত্তর দিলেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা।’ আবার জিজ্ঞাসা করা হলো- এরপর কোন আমল? জবাবে তিনি বললেন, ‘মাবরূর হজ’ (কবুল হজ)।’ (বুখারি ২৬, ১৫১৯ ও মুসলিম ৮৩)

হাজ পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান

হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

الْغَازِي فِي سَبِيلِ اللهِ وَالْحَاجُّ وَالْمُعْتَمِرُ وَفْدُ اللهِ دَعَاهُمْ فَأَجَابُوهُ وَسَأَلُوهُ فَأَعْطَاهُمْ

Advertisement

‘আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং ওমরা ও হজ পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান। আল্লাহ তাদের আহ্বান করেছেন, তারা সে আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। তারা আল্লাহর কাছে যা চাইছে আল্লাহ তাই তাদের দিয়ে দিচ্ছেন।’ (ইবনে মাজাহ ২৮৯৩)

হাদিসের অন্য বর্ণনায় এসেছে-

إِنْ دَعَوْهُ أَجَابَهُمْ وَإِنِ اسْتَغْفَرُوهُ غَفَرَ لَهُمْ

‘ওমরা ও হজ পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান। তারা দোয়া করলে তা কবুল হয়ে যায় এবং গুনাহ মাফ চাইলে তা মাফ করে দেওয়া হয়।’ (ইবনে মাজাহ ২৮৯২)

নাসাঈর এক বর্ণনায় এসেছে, ‘তিন ব্যক্তি আল্লাহর মেহমান- ১. হজ পালনকারী ২. ওমরা পালনকারী ৩. আল্লাহর পথে জিহাদকারী।’

হজ জিহাদ সমতুল্য ইবাদাত

হজরত হাসান ইবনু আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামর কাছে এসে আরজ করল-

إني جبان، وإني ضعيف، فقال : هلم إلى جهاد لا شوكة فيه

‘আমি একজন ভীতু ও দুর্বল ব্যক্তি। তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি এমন একটি জিহাদে চলো; যা কণ্টকাকীর্ণ নয় (অর্থাৎ হজ পালন করতে চলো।) (তাবারানি)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

جِهَادُ الْكَبِيرِ وَالصَّغِيرِ وَالضَّعِيفِ وَالْمَرْأَةِ الْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ

‘বয়স্ক, শিশু, দুর্বল ও নারীর জিহাদ হলো ওমরা এবং হজ পালন করা।’ (নাসাঈ ২৬২৬)

হজরত আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

يَا رَسُوْلَ اللهِ، تري الجهادَ أَفْضَلُ الْعَمَلِ، أَفَلاَ نُجَاهِدُ، لَكُنَّ أَفْضَلُ الْجِهَادِ : حَجِّ مَبْرُوْرِ

‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করেন। আমরা (নারীরা) কি জিহাদ করতে পারব না? উত্তরে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমাদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হলো মাবরূর হজ (কবুল হজ)। (বুখারি ও মুসলিম)

অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

عَلَيْهِنَّ جِهَادٌ لاَ قِتَالَ فِيهِ الْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ

‘হ্যাঁ’, নারীদের উপর জিহাদ ফরজ। তবে এ জিহাদে কোনো মারামারি ও সংঘাত নেই। আর সেটা হলো- হজ ও ওমরা পালন করা।’ (মুসনাদে আহমাদ ২৪৭৯৪)

হজ গুনাহমুক্ত করে দেয়

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

مَنْ حَجَّ للهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّه

‘যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহকে খুশি করার জন্য হজ করল এবং হজকালে যৌন সম্ভোগ ও কোনো প্রকার পাপাচারে লিপ্ত হল না; সে যেন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিনের মতোই নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরলো। (বুখারি ১৫২১)

হজরত আমর ইবনুল আসকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন-

أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ الإِسْلاَمَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ وَأَنَّ الْهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا وَأَنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ

‘তুমি কি জান না ইসলাম গ্রহণ করলে আগের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তদ্রূপ হিজরতকারীর আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং হজ পালনকারীও আগের গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যায়।’ (মুসলিম ১২১)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ

‘তোমরা হজ ও ওমরা পালন কর। কেননা হজ ও ওমরা উভয়টি দারিদ্রতা ও পাপরাশিকে দূর করে দেয়; যেমনিভাবে রেত সোনা, রুপা ও লোহার মরিচা দূর করে দেয়। আর মাবরূর হজের বদলা হল জান্নাত।’ (তিরমিজি ৮১০)

হজের বিনিময় হবে জান্নাত

হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

هذا البيت دعامة الإسلام، فمن خرج يؤم هذا البيت من حاج أو معتمر، كان مضمونا على الله إن قبض أن يدخله الجنة وإن رده رده بأجر وغنيمة

‘এ (কাবা) ঘর ইসলামের স্তম্ভস্বরূপ। সুতরাং যে ব্যক্তি হজ কিংবা ওমরা পালনের জন্য এ ঘরের উদ্দেশ্যে বের হবে সে আল্লাহ তাআলার যিম্মাদারীতে থাকবে। এ পথে তার মৃত্যু হলে আল্লাহ তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন। আর বাড়িতে ফিরে আসার তাওফিক দিলে তাকে প্রতিদান ও গণীমত দিয়ে প্রত্যার্বতন করাবেন।’

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ

‘এক ওমরা থেকে অপর ওমরা পালন করার মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে হয়ে যাওয়া পাপরাশি এমনিতেই মাফ হয়ে যায়। আর মাবরূর হজের বিনিময় নিশ্চিত জান্নাত। (বুখারি ১৭৭৩)

হজে খরচ করার ফজিলত

হজরত বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

النَّفَقَةُ فِي الْحَجِّ كَالنَّفَقَةِ فِي سَبِيلِ اللهِ بِسَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ

‘হজে খরচ করা আল্লাহর পথে (জিহাদে) খরচ করার সমতূল্য সওয়াব। হজে খরচকৃত সম্পদকে সাতশত গুণ বাড়িয়ে এর প্রতিদান দেওয়া হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ ২২৪৯১)

হজের আরও প্রতিদান

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আরাফাতের দিন এত অধিক সংখ্যক লোককে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যা অন্য কোনো দিন দেন না। এরপর তিনি (হাজীদের) কাছাকাছি হয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করে বলেন, এরা কী চায়? (অর্থাৎ হাজ পালনকারীরা যা চাচ্ছে তা তাদের দিয়ে দেওয়া হল)’ (মুসলিম)

তিরমিজির এক হাদিসে এসেছে, ‘সর্বোত্তম দোয়া হল আরাফার দিনের দোয়া। বুখারির অন্য বর্ণনায় এসেছে, রমজান মাসের ওমরা পালন করা আমার সঙ্গে (অর্থাৎ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে) হজ করার সমতূল্য।

হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানি স্পর্শ করলে গুনাহ মাফ হয়ে যায়। যে ব্যক্তি কাবা ঘর সাতবার তাওয়াফ করে দু’রাকাত নামাজ আদায় করে সে যেন একটি গোলাম আযাদ করলো। বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করতে গিয়ে যে ব্যক্তি একটি পা মাটিতে রাখলো, আবার এটি উঠালো এর প্রত্যেকটির জন্য তাকে ১০টি সওয়াব দেওয়া হবে, ১০টি গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে এবং তার ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। (মুসনাদে আহমাদ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজ ও ওমরা করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত ও উপকারিতাগুলো অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম