দেশজুড়ে

পোশাক পরছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুমিষ্ট আম

আমকে ঘিরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত দুইমাস ধরে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। তবে সম্প্রতি সুমিষ্ট আমকে বিষমুক্ত ও রপ্তানিযোগ্য করে তুলতে ফ্রুট ব্যাগ (আম ঢেকে রাখার এক ধরনের পোশাক) ব্যবহার করছেন চাষিরা। কৃষি বিভাগ বলছে, ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে বালাইনাশক ব্যবহার ছাড়াই শতভাগ রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণমুক্ত আম পাওয়া সম্ভব। ব্যাগিং করলে বালাইনাশকের ব্যবহার কমবে ৭০-৮০ শতাংশ।

Advertisement

সরেজমিন সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়ন, বারোঘরিয়া, শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা, শ্যামপুর, খাষেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, আম বাগানগুলোতে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। কেউবা মইয়ে আবার কেউবা টেবিলে উঠে আমের গায়ে পরিয়ে দিচ্ছেন ফ্রুট ব্যাগ। এতে কর্মসংস্থানও হয়েছে অনেকের। স্কুলছাত্ররাও এসব কাজ করছে। এতে স্কুলের খরচটা হয়ে যাচ্ছে তাদের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবতলা মহল্লার আমচাষি সজিব আলী বলেন, ‘এবছর রানিহাটি এলাকার ঢোরবনা এলাকায় আশ্বিনা, ক্ষীরশাপাতি, লক্ষণভোগ, ফজলিসহ বিভিন্ন জাতের ২০০টি গাছে প্রায় চার মণের বেশি আম রয়েছে। এর মধ্যে আশ্বিনা জাতের প্রায় ২০০ মণ আমে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। কেননা গতবছর অন্য আমে ফ্রুট ব্যাগিং করে লোকসান গুনেছি। একটি ফ্রুট ব্যাগের দাম প্রায় ৪ টাকার বেশি। খরচ অনেক তাই লোকসান হয়েছে। তবে আশ্বিনা আমে ফ্রুট ব্যাগিং করে লাভবান হয়েছিলাম। তাই এবারও প্রায় ২০ হাজার আমে ফ্রুট ব্যাগিং করেছি। এতে আনুমানিক প্রায় ২০০ মণ আম হবে।’

শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট বাজারের বাসিন্দা আমচাষি নয়ন জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে আমি আম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। প্রথমে কয়েক বছর ভালো লাভবান হলেও গত ৩-৪ বছর লোকসান হচ্ছে। তবে এবার সব গাছে প্রচুর আম রয়েছে। আশা করছি এবার লাভবান হবো। তাই আশ্বিনা জাতের আমগুলোতে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করছি। এতে বালাইনাশক ব্যবহার কম করতে হয়।’

Advertisement

শ্যামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ভুলু রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার নিজের ও ক্রয় করা ৩০০ গাছে আশ্বিনা জাতের প্রায় ১২০০ মণ আম রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার আমে ফ্রুট ব্যাগ পরানো হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে।’

তিনি বলেন, ‘বাগানে প্রতিদিন প্রায় ২০ শ্রমিক কাজ করছে। তাদের দিনে মজুরি দিতে হয় ৩০০ টাকা। তবে আমের দাম নিয়ে আমি শঙ্কিত। ভালো দাম পেলে হয়তো লাভের মুখ দেখবো। নয়তো সব শেষ। কারণ যা অর্থ ছিল সব দিয়ে আমবাগান কিনে নিয়েছি।’

বাবপুর এলাকার আমচাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাগানে প্রায় ১০০টি গাছে আম রয়েছে। সবগুলোই আশ্বিনা জাতের। কিন্তু বাজারে এখন ১০-১৫ জাতের ফ্রুট ব্যাগ বিক্রি হচ্ছে। আমি আসলে কোনটা নেবো, কোনটা ভালো-খারাপ চিনতে পারছি না। কৃষি বিভাগও সেভাবে সাহায্য করছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়েছি।’

শ্যামপুর ইউনিয়নের একটি বাগানে আশ্বিনা আমের গাছে উঠে ফ্রুট ব্যাগিং করছিল ইব্রাহিম (১৫)। সে জাগো নিউজকে বলে, ‘এ ফ্রুট ব্যাগিং বড় মানুষরা করতে পারে না। তাই শিশুদের চাহিদা বেশি এ কাজে। কারণ আমগাছে বড়রা উঠলে ডাল ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

Advertisement

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২০১৫ সাল থেকে ফ্রুট ব্যাগের ব্যবহার শুরু হয়েছে। তবে ফ্রুট ব্যাগের মান নিয়ন্ত্রণে নেই। যে যেভাবে পারছেন এ ফ্রুট ব্যাগ সরবরাহ করছেন। এগুলো নিম্নমানের হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আম ব্যবসায়ীরা। এগুলোর দামও অনেক কম। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের মনিটনিং দরকার।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের অন্য জেলার মানুষ মনে করেন ফ্রুট ব্যাগের আম মিষ্টি কম হয়। বিষয়টি কিন্তু তা নয়। অন্য আমের তুলনায় ফ্রুট ব্যাগের আম বেশি মিষ্টি। আর এ জেলার আম বাজারে আসবে জুনের প্রথম সপ্তাহে। কিন্তু বাজারে দেখা যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম নামে বিক্রি হচ্ছে। এটি দুঃখজনক। আমাদের চাষিদের এখনো কেউ আম পাড়েননি।’

ফ্রুট ব্যাগের বিশেষত্ব হলো তা বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয় না। আমের গায়ে আলো-বাতাস চলাচলেও সমস্যা করে না। নাচাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতিবছর প্রায় ১০-১৫ কোটি আমে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। কারণ এ পদ্ধতিতে বালাইনাশক ব্যবহার ছাড়াই শতভাগ রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণমুক্ত আম পাওয়া যায়। এতে লাভবান হন চাষিরা।

জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফ্রুট ব্যাগিং অত্যন্ত জনপ্রিয়। এখানকার চাষিরা বিশেষ করে আশ্বিনা জাতের আমে ফ্রুট ব্যাগ বেশি ব্যবহার করেন। এবার আমের ফলন খুব ভালো। আশা করছি চাষিরা লাভবান হবেন। আমরা সবসময় চাষিদের ভালো পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এবছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন।

এসআর/জেআইএম