সদ্যপ্রয়াত কিংবদন্তি চিত্রনায়ক ফারুক আজীবন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক ছিলেন। তার আহ্বানে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ছিলেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তার রয়েছে এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক সংগ্রামী জীবন। সিনেমার ক্যারিয়ারের কথা সবাই জানলেও তার রাজনৈতিক জীবনের বিষয়টি খুব কম মানুষ জানেন।
Advertisement
নায়ক ফারুকের ঘনিষ্ঠতা ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে। কীভাবে নায়ক ফারুকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল স্বাধীনতার এ মহানায়কের সঙ্গে এর পেছনে রয়েছে দারুণ এক ঘটনা।
আরও পড়ুন: প্রিয় নায়ক ফারুকের মৃত্যুতে তারকাদের শোক
নায়ক ফারুক তখন স্কুলের ছাত্র। পুরান ঢাকার পোগজ স্কুলে পড়ার সময়ই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। শৈশব থেকেই ফারুকের বক্তৃতা শোনার প্রতি আগ্রহ ছিল।
Advertisement
বঙ্গবন্ধু রাজধানীর আউটার স্টেডিয়ামে বকতৃতা দিতেন, তিনি প্রায়ই সেখানে গিয়ে বক্তৃতা শুনতেন। এক সময় যেখানে গুলিস্তান সিনেমা হল ছিল, সেখানে ফারুক ও তার বন্ধুরা দল বেঁধে যেতেন। সেখানে প্রায়ই দেখতেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বক্তৃতা করছেন। তার বক্তৃতা শুনে ভীষণ মুগ্ধ হতেন ফারুক।
আরও পড়ুন: চিত্রনায়ক ফারুকের মরদেহ আসবে মঙ্গলবার
একদিন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর বকতৃতা শুনতে দাঁড়ালেন ফারুক। এক সাক্ষাৎকারে নায়ক ফারুক এ বিষয়ে বলেছিলেন, ‘মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বলছিলেন, এই যে দেখেন তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া নিজে একটা মেশিন বসাইয়া নিয়াছে। নিজে কাগজ কিনিয়া, সেইখান থেইকা নিজের ইচ্ছা মতো খবর ছাপাইয়া পয়সা কামাই করিতেছে। কি লিখিতেছে রাজনীতিবিদের গোমর ফাঁস করিয়া দিতেছে।’ এ রকম বক্তৃতা হলে প্রায়ই শুনতে দাঁড়িয়ে যেতেন ফারুক।
এরপর অনেকদিন পরের কথা, একদিন ফারুক শোনেন দরাজ কণ্ঠে একজন বক্তৃতা দিচ্ছেন এদেশের ক্ষুধার্ত মানুষ ও এদেশের জনগণের অধিকার নিয়ে। কণ্ঠ শুনেই চমকে গেলেন ফারুক। কণ্ঠ শুনে ফারুকের মনে হলো আরে ক্ষুধার্ত তো তিনিও থাকেন। তখন ফারুকের এই বক্তৃতা দেওয়া লোকটিকে দেখার প্রবল ইচ্ছে হলো। সামনে গিয়ে দেখেন চশমা পরা দীর্ঘদেহী এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছেন। তাকে দেখে ফারুক একজনকে জিজ্ঞেস করলেন- বক্তৃতা দিচ্ছেন কে তিনি? সে লোকটি ফারুককে উত্তর দিয়েছিলেন-মুজিব ভাই।
Advertisement
এরপর থেকেই ফারুক ধীরে ধীরে শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যাওয়া শুরু করলেন। শেখ মুজিবের যে কোনো মিটিংয়ের খবর পেলেই ফারুক সেখানে গিয়ে হাজির হতেন।
এমনকি মাঝে মাঝে শেখ মুজিবের বক্তৃতা দেওয়ার স্টেজেও উঠে যেতেন। মাঝে মধ্যে চেয়ার সরানো, চেয়ার ঠিকঠাক করা শুরু করলেন ফারুক। কারণ তার চাওয়া একটাই তিনি শেখ মুজিবের নজরে পড়বেন। সত্যিই ফারুকের চাওয়া একদিন পূরণ হলো। তিনি এভাবেই শেখ মুজিবের নজরে পড়লেন।
ফারুক বঙ্গবন্ধুর ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বে মোহাবিষ্ট হয়ে গেলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতি মিটিংয়ে ১৫-২০ জন ছেলে নিয়ে গিয়ে স্লোগান দেওয়াতেন। দুপুরবেলা সবাইকে পরোটা-মাংস খাওয়াতেন। ছেলেগুলোকে নিয়ে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে টাকা চাইতেন ফারুক। বঙ্গবন্ধু দু-চার-পাঁচ টাকা সব সময় দিতেন।
এ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে নায়ক ফারুক বলেছিলেন, একবার বঙ্গবন্ধুর পকেট মারতে গিয়ে ধরা খেলাম। বসে আছেন, ওনার পাঞ্জাবির পকেটে দেখি টাকা দেখা যায়। আস্তে করে দুই আঙুল যেই দিলাম উনি খপ করে আমার হাত ধরে ফেললেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- তোরে না দিলাম টাকা? আমি বললাম, দিছেন তো, কিন্তু টাকা দেখলে তো আর ভালো লাগে না! এ ঘটনা আমার প্রায়ই মনে পড়ে, সে কারণে একটা ফিল্মে আমি এই ধরনের একটা সিকোয়েন্সও রেখেছিলাম।’
এভাবেই নায়ক ফারুক বঙ্গবন্ধুর প্রিয় মানুষে পরিণত হয়েছিলেন। জাতির পিতার আদর্শে তিনি একটি জীবন কটিয়ে দিয়েছেন।
এমআই/এমএমএফ/জিকেএস