আন্তর্জাতিক

ঘূর্ণিঝড় মোখায় মিয়ানমারে প্রাণহানি, ভূমিধস-ভারী বন্যার আশঙ্কা

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে মিয়ানমারের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া এর প্রভাবে দেশটিতে এখন পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

Advertisement

এদিকে, দেশটির সেনাবহিনীর প্রকাশ করা ছবিতে দেখা গেছে, রাখাইন রাজ্যের থানদউয়ে বিমানবন্দরে একটি ভবন ধসে পড়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে সেখানকার বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারও।

এছাড়া প্রবল ঝড়বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে পানির প্রবাহ, এরই মধ্যে সিতওয়েতে হাঁটু পানি জমেছে। সেখানকার বাসিন্দারা জরুরি সাহায্যের জন্য কর্তৃপক্ষের দেওয়া বিভিন্ন নম্বরে কল করে আবেদন জানাচ্ছেন।

আরও পড়ুন>> মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে নিহত ৩

Advertisement

স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, রোববার (১৪ মে) দুপুর ১২টার পর থেকেই মিয়ানমারে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার বেগ বাড়তে শুরু করে। এর প্রভাবে বিভিন্ন জায়গার বসতবাড়ি, বিশেষ করে টিনের বাড়িঘর ও অস্থায়ী আবাস ভেঙে পড়তে শুরু করে। ‍উড়ে যায় অসংখ্য বাড়ির টিনের চাল।

জানা গেছে, মোখার প্রভাবে সিতওয়ে শহরের একটি মোবাইল ফোনের টাওয়ার ভেঙে পড়েছে। এছাড়া দেশটির বিভিন্ন জায়গা সকাল থেকেই বিদ্যুৎ ও ওয়াইফাই সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগের জন্য মিয়ানমারে এখন শুধু মোবাইল ডাটা কাজ করছে।

মিয়ানমারের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রোববার বিকেলে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র সিতওয়ে উপকূল অতিক্রম করে যাবে ও ঝড়ের প্রভাব ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এর আগে দুপুরে দেশটির আবহাওয়া পূর্বাভাসে মোখাকে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বাদামী বা ‘ব্রাউন’ স্তরের সতর্কতা জারি করা হয়।

আরও পড়ুন>> ভয়াবহ রূপ নিয়ে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা, পশ্চিমবঙ্গে সতর্কতা

Advertisement

দেশটির আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩৭ মাইলের মতো। রোববার সকালে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়টি রাখাইন উপকূলে আঘাত হানে ও তখন থেকেই সেখানে দমকা হাওয়াসহ থেকে থেকে বৃষ্টি হচ্ছে।

রাখাইন রাজ্যের সাতটি শহরকে বিপজ্জনক ‘লাল’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ মাইল পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে।

রাখাইন রাজ্যের রাসায়ে পর্বতের এক বাসিন্দা রোববার সকালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, পুরো রাসায়ে পর্বতের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারা সবাই শহরে চলে গেছেন। গ্রামে বৃষ্টি তেমন নেই। তবে অনেক বাতাস বইছে।

এছাড়া সিতওয়ে শহরে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইতে যেতে শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রবল বাতাসে পুরনো গাছ মাটিতে আছড়ে পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঠের ঘরবাড়ি।

আরও পড়ুন>> মোখার গতি থাকতে পারে ১৫০-১৬০ কিলোমিটার

সিতওয়ের এক বাসিন্দা বলেন, হাঁটতে গিয়ে মনে হচ্ছে, বাতাস আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। রাস্তাঘাটে কোনো লোকজন নেই। হাতে গোনা কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিস কর্মীদের লাইফ ভেস্ট পরে মোটর সাইকেল চালাতে দেখা গেছে।

দেশটির দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ আশেপাশের শহরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। সকাল থেকেই রাখাইন রাজ্যের মিয়াকু শহরে টহল দিচ্ছে সামরিক বাহিনী।

সকালে দেশটির আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি রাখাইন উপকূল থেকে উত্তর পূর্বের চিন রাজ্য, ম্যাগওয়ে ও সাগাইং এবং কাচিন পর্যন্ত অতিক্রম করতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে।

এ সময় সাগাইং, মান্দালে, ইরাবতি এবং চিন রাজ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৭০ থেকে ৯০ মাইল ও নেপিদো, বোগো, ইয়াঙ্গুন এবং কাচিন শান ও কায়াহ অঞ্চলে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ মাইল হতে পারে।

আরও পড়ুন>> ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় প্রস্তুত পশ্চিমবঙ্গ সরকার

এদিকে, মোখায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে মিয়ানমারে কর্তব্যরত জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা। এরই মধ্যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিচু এলাকাগুলো থেকে স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এ এলাকার অন্তত ৬০ লাখ মানুষ আগে থেকেই দারিদ্র্য ও সংঘাত -সহিংসতার কারণে মানবিক সহায়তার ওপর টিকে রয়েছে। ফলে এ মানুষগুলোর ওপর ঘূর্ণিঝড় মোখা মরার ওপর খাড়ার ঘা’র মতো বিষয় হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘ বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত, ভূমিধস ও বন্যা দেখা দিতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জানিয়েছে, জরুরি ত্রাণের জন্য জরুরি তহবিলের প্রয়োজন।

সূত্র: বিবিসি

এসএএইচ