আইন-আদালত

কালো কোট-গাউন ছেড়ে সাদা পোশাকে স্বস্তিতে আইনজীবীরা

সারাদেশে চলমান তাপপ্রবাহ বা তীব্র গরমের কারণে অধস্তন আদালতের বিচারক ও আইনজীবীদের পোশাকের ক্ষেত্রে শিথিলতা আনা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (১৪ মে) থেকে ঢাকার নিম্ন আদালতে কালো কোট ও গাউন ছেড়ে সাদা পোশাক পরে আদালতের কার্যক্রমে অংশ নিতে দেখা গেছে আইনজীবীদের। সাদা পোশাকে স্বস্তির কথাও জানিয়েছেন তারা। আইনজীবীদের চাওয়া, তাপপ্রবাহ বা তীব্র গরমের মৌসুমে স্থায়ীভাবে যেন এ ধরনের পোশাক বলবৎ রাখা হয়।

Advertisement

এদিন সকালে সরজমিনে ঢাকার নিম্ন আদালতে দেখা যায়, আইনজীবীদের অনেকে সাদা শার্ট পরে এসেছেন। নারী আইনজীবীরা এসেছেন সাদা সেলোয়ার কামিজ পরে। পুরুষ বিচারকরা সাদা শার্ট আর নারী বিচারকরা সাদা সেলোয়ার কামিজ পরে এজলাসে উঠেছেন।

আরও পড়ুন: অধস্তন আদালতে বিচারক-আইনজীবীদের পরতে হবে না কোট-গাউন

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর বৈঠক শেষে গতকাল শনিবার (১৩ মে) পোশাকের ক্ষেত্রে এ শৈথিল্যের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে পুরুষদের জন্য সাদা ফুল শার্ট ও নারীদের সাদা শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ, সাদা নেক ব্যান্ড ও কালো টাই পরতে বলা হয়। তবে উচ্চ আদালত বা সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী ও বিচারকদের ড্রেস কোড অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানা গেছে।

Advertisement

প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানীর সই করা এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবরের বিজ্ঞপ্তি নম্বর ৪০/২০২১ এর কার্যকারিতা স্থগিত করে ২০২১ সালের ৩০ মার্চের বিজ্ঞপ্তি নম্বর ৭ পুনর্বহাল করা হলো।

আরও পড়ুন: আইনজীবীদের ড্রেসকোড পেশায় প্রভাব ফেলছে: ব্যারিস্টার সুমন

এতে আরও বলা হয়, দেশব্যাপী চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের আলোচনাক্রমে এ সিদ্ধান্ত হয় যে, অধস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত, ট্রাইব্যুনালসমূহের বিচারক এবং আইনজীবীরা ক্ষেত্রবিশেষ সাদা ফুল শার্ট বা সাদা শাড়ি/সালোয়ার কামিজ ও সাদা নেক ব্যান্ড বা কালো টাই পরিধান করবেন। এক্ষেত্রে কালো কোট এবং গাউন পরার আবশ্যকতা নেই। এ নির্দেশনা ১৪ মে থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

এর আগে বিভিন্ন সময় আদালতে আইনজীবী ও বিচারকদের জন্য গ্রীষ্ম ও শীতকালীন ভিন্ন ভিন্ন ড্রেস কোড নির্ধারণের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন আইনজীবী। আবেদনে বলা হয়, অতিরিক্ত গরমে নিয়ম অনুযায়ী কালো কোট, গাউন, কলার, ব্যান্ড/ টাই পরার কারণে প্রতি বছর বহু সংখ্যক আইনজীবী হিট স্ট্রোক করেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন। এছাড়া তীব্র গরম এবং তাপপ্রবাহের কারণে কোট-গাউন পরে অনেক বয়স্ক আইনজীবী আদালতে যেতে পারেন না।

Advertisement

আরও পড়ুন>>>আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীর মৃত্যু, সহকর্মীদের দাবি হিটস্ট্রোক

অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) আইনজীবীদের নির্ধারিত পোশাক পরে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে একটি মামলার শুনানি শেষে নিজ চেম্বারে যাওয়ার সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন শফিউল আলম নামের এক আইনজীবী। পরে তাকে ঢাকা ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সহকর্মীদের অনেকের দাবি- ‘হিট স্ট্রোকে’ আইনজীবী শফিউলের মৃত্যু হয়েছে।

সদ্য সনদপ্রাপ্ত আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম

এর আগে গত ১৮ এপ্রিল উচ্চ তাপমাত্রার প্রেক্ষাপটে আইনজীবী ও বিচারকদের জন্য গ্রীষ্ম ও শীতকালীন ভিন্ন ভিন্ন ড্রেস কোড নির্ধারণের জন্য প্রধান বিচারপতি বরাবর আবেদন করা হয়। গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকিরের নেতৃত্বে কাযনির্বাহী কমিটির সদস্যরা দেখা করেন। এসময় বারের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আব্দুন নুর দুলালসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন: গরমে কালো কোট বাধ্যতামূলক না করতে ২০ আইনজীবীর আবেদন

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ঢাকা চিফ জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর বাবুল জাগো নিউজকে বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী আজ কালো কোট ছাড়াই কোর্টের কার্যক্রমে অংশ নিয়েছি। তীব্র গরমে কিছুটা হলেও স্বস্তি বোধ করছি।

ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী মুন্নি আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, কোট-গাউন পরার আবশ্যকতা তুলে নেওয়ায় আমরা আনন্দিত। এটি আইনাঙ্গনে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। প্রতি বছর গরমকালে যেন এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, সেই কামনা করছি।

আরও পড়ুন: গরমে ড্রেসকোট শিথিলে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান বিচারপতি

সদ্য আইনজীবী হিসেবে সনদপ্রাপ্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এই গরমে কোট-গাউন ছাড়া কাজ করতে পেরে স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছি। দেরিতে হলেও কর্তৃপক্ষ আইনজীবীদের কল্যাণে খুব ভালো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জেএ/এমকেআর/এএসএম