ভ্রমণ

২৭তম দিনে দুবার পাংচার নিয়ে ১৫২ কিমি পাড়ি

বাবর আলী। পেশায় চিকিৎসক, নেশায় পর্বতারোহী। সাইক্লিং, ম্যারাথন রানও তার সঙ্গী। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে জয় করেছেন হিমালয়ের সাড়ে ২২ হাজার ফুটের ভয়ংকর চূড়া ‘আমা দাবালাম’। এর আগে হেঁটে ভ্রমণ করেছেন দেশের ৬৪ জেলা। সাইকেল চালিয়ে দেশের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু কৃতিত্ব। এবার দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন বৈচিত্র্যময় দেশ ভারতে। ভূ-স্বর্গখ্যাত কাশ্মীরের শ্রীনগর থেকে বানিহাল, উধমপুর, জম্মু, পঠানকোট হয়ে দিল্লি ও আগ্রা। পরে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র, ঝাঁসী পেরিয়ে প্রবেশ তেলঙ্গানায়। এর পরে অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক হয়ে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে সফর শেষ হবে। তার হিসাবে সব মিলিয়ে ৪৫ দিনে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার সফর করবেন তিনি।

Advertisement

এই সফরের প্রতিদিনের গল্প থাকবে জাগো নিউজে। আজ থাকছে ২৯তম পর্ব।

দিন ২৭। রাতের অঝোর ধারার বৃষ্টি অবশেষে থেমেছে। বেরিয়েই ডেভটপাট্টিতে আমাদের দেশের মতোই সংগ্রামী নেতাদের পোস্টার। বড় নেতা, ছোট নেতা, পাতি নেতা, সহ-সভাপতি নেতা- সবারই জায়গা হয়েছে এক বিলবোর্ডে। নিশ্চয়ই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে তবেই ছাপাখানায় গেছে এসব রাজনৈতিক ইশতেহার।

রাস্তা ছাড়িয়ে দূরের ক্ষেতে প্রচুর সংখ্যক এক পায়ে দাঁড়ানো তাল আর নারকেল গাছ। দুই গাছেরই কাঁচা আর পাকা ফলের কদর আছে এখানে। রাস্তার ধারে বিক্রিও হয় এন্তার। সাদা কাপড় পরা নানের দল একসারিতে কোথায় যেন যাত্রা করেছে। নীল পাড়ের বস্ত্রে একেকজনকে মাদার তেরেসা বলে ভ্রম হয়। কিছুদূর এগিয়েই সালেম এয়ারপোর্ট। ডমেস্টিক বিমানবন্দরটি মূল শহর থেকে বেশ দূরেই।

Advertisement

আরও পড়ুন>> একদিনে পাড়ি ১৭৮ কিমি, পা পড়লো শেষ রাজ্য তামিলনাড়ু

পেরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে আবার চাকা পাংচার। সকাল সকাল আবার হ্যাঁপা। একটু এগিয়ে রাস্তার ধারে বড় জায়গা পেয়ে পাংচার সারালাম। সকালের নরম আলোর আরামের সময়টা কিছুটা হলেও খেয়ে নিলো অনাকাঙ্ক্ষিত পাংচার। ফের মহাসড়কে উঠে এগোচ্ছি, তিনজন সাইক্লিস্টের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো। অনুশীলনে বেরিয়েছে ওরা। সবচেয়ে ছোট জন আমার সমান্তরালে সাইকেল চালিয়ে অনেকক্ষণ গল্প করলো। বাড়ি বাংলাদেশ শুনে জিজ্ঞেস করলো কোন জেলায় বাড়ি। চট্টগ্রাম শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বললো, ‘ইজ ইট নিয়ার কক্সবাজার?’ আমি বেশ অবাক হলাম। চৌদ্দ বছরের ছোকরা কক্সবাজারের নাম জানে। জানালো ইউটিউবে বাংলাদেশের অনেক ভিডিও দেখেছে ও। সালেম নামক বিশাল শহরটা উড়ালসেতু চড়ে চড়েই পেরিয়ে গেলাম। শহর ছাড়াতেই সঙ্গী হলো প্রকৃতি ও তার নানান উপাদান। সালেমের পরে রাস্তাও খুব দারুণ। দুপাশে একটাই রং-সবুজ। তবে তার নানান শেড।

মসৃণ রাস্তা পেয়ে সাইকেলের গতিও বেড়েছে। মুথুকালিপ পট্টি হয়ে ছাড়ালাম রাসিপুরম। জ্ঞানমণি আর পাভই- নামক দুই গ্রুপের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলতার মাপকাঠি ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্ট থেকে কজনের চাকরি হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে। বিলবোর্ডে দুই প্রতিষ্ঠানই জব প্লেসমেন্টের ফিরিস্তি দিয়েছে। জন্ম, পড়াশোনা, চাকরি, ছুকরি, বাচ্চা উৎপাদন- এই তো জীবন! পুডান সানথাইয়ের পর থেকে দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্যরীতিতে বানানো বেশ কিছু মন্দিরের চূড়া সোনালি দেখলাম। দক্ষিণে সাদা চূড়া আগে দেখেছি। সোনালিটা প্রথম দেখলাম। নানান বর্ণে রঙিনগুলোই আমাকে বেশি টানে। সোনালি রংটা কেন জানি গৌতম বুদ্ধের মূর্তিতেই বেশি মানায়।

সুপারি গাছের খোল থেকে প্লেট বানানোর অনেকগুলো কারখানা আছে রাস্তার ধারে। দিন দুয়েক আগে বেঙ্গালুরুতে পথিসের ফুড কোর্টে এ ধরনের থালায় খেয়েছি। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের সাশ্রয়ী এবং দারুণ বিকল্প এটি। বন্ধু ফারাবী সুপারি গাছের খোল থেকে তৈজসপত্র বানানোর কারখানা দিয়েছে ভোলাতে। ওর মতো বাউন্ডুলের এমন কোনো কিছুতে যুক্ত হওয়া আমার জন্য বিশাল অনুপ্রেরণা।

Advertisement

আরও পড়ুন>> বাইকের ধাক্কায় হ্যান্ডেলবারের ওপর দিয়ে উড়ে পড়লাম রাস্তায়

সোয়া ১০টা নাগাদ নামাক্কাল শহরে। রাস্তার ধারে দোসা দিয়ে নাশতা সেরে ফিল্টার কফির কাপে চুমুক। কফির দোকান থেকে বেরিয়ে নামাক্কাল ফোর্টের দিকে যাবো, এমন সময়ে চরম বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, পেছনের চাকা আবার ফ্ল্যাট হয়ে গেছে। শহরেই যেহেতু আছি, সাইকেল মেকারের খোঁজ করলাম। দুটো দোকান পেলেও ওরা এ ধরনের সাইকেল সারাইয়ে অভ্যস্ত নয়। গলিঘুঁজি পেরিয়ে তৃতীয় দোকানির কাছে যেতেই সে হাত দিলো চাকায়। দেখেই বললো, ‘ইয়ে তো টায়ার নেহি রাহা। কাপড়া হো গ্যায়া।’ পেছনের চাকার ধকলের দিকে স্পষ্ট ইঙ্গিত। পানিতে প্রথমবার টিউব ডুবিয়ে পাংচার স্থল পাওয়া গেল না। পরেরবার পাওয়া গেলো খুবই সুক্ষ্ম একটা ফুটো। ফুটোর জন্য দায়ী ক্ষুদ্র পিনটাকেও টায়ার থেকে প্লায়ার্স দিয়ে টেনে স্থানচ্যুত করা হলো।

নামাক্কাল ফোর্টের আগেই রাস্তার ধারে লোকে ছোট লোটা হাতে কী একটা পানীয় খুব ভিড় করে পান করছে। আমিও ভিড়ে মিশে গেলাম। যব, দুধ আর পেঁয়াজ দিয়ে ঘন ক্বাথের মতো পানীয়। খানিকটা টক। তবে গরমে বেশ কাজের এবং রিফ্রেশিং। নামাক্কাল দুর্গের কাছেই আঞ্জানাইয়ের মন্দির। রামের দোসর হনুমান দেবপূজা পান এখানে। মন্দিরে ঢোকার জন্য প্রাঙ্গণে বিশাল লাইন। বিগ্রহ দেখতে আবার কাউন্টারে টিকিটও কাটতে হয়। টিকেটের দাম দেখলাম ২৫০ রুপি! এত রুপি গচ্চা দিয়ে বিগ্রহ দেখার আগ্রহ বোধ করলাম না।

হনুমানের উপাসনালয় বলেই বাইরের দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে হনুমানের হাতের গদা। নামক্কাল দুর্গের গায়ের সঙ্গে লাগানো নরসিমহাস্বামী মন্দিরে ঢুকলাম। এটি বিষ্ণুর অবতার নরসিমহাকে উৎসর্গ করা উপাসনালয়। ধারণা করা হয়, আধিয়ামান রাজবংশের শাসকরা অষ্টম শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেন। স্থাপত্যশৈলী যথারীতি দ্রাবিড়ীয়; সঙ্গে পাথরের দারুণ ব্যবহার।

বেরিয়ে এগোলাম নামাক্কালের নগর কেল্লার দিকে। ৭৫ মিটার উঁচু বিশাল একটাই মাত্র পাথরের ওপর পেল্লাই দুর্গ। চারপাশে এমন সবুজের মধ্যে এই বিশাল লালচে পাথর কীভাবে এলো সে রহস্যের জট মাথাতেই থেকে গেলো। অবশ্য পুরাণ বলে, গুরুতর আহত লক্ষ্মণকে বাঁচানোর জন্য হনুমান যখন হিমালয় থেকে সঞ্জীবনী পর্বত উপড়ে নিয়ে আসেন, যাত্রাপথে এখানে থেমেছিলেন। হনুমানই নিয়ে আসেন এই বিশাল পাথর। দুর্গে ওঠার জন্য পাথরের ওপর খাঁজ কেটে সিঁড়ির ধাপ বানানো হয়েছে। আর দুপাশে আছে রেলিং। মাঝামাঝি বসে ছিল দুই তরুণী। হাতে খুব বেশি সময় নেই দেখে আমি তরতর করে সিঁড়ি ভাঙছি। ওরা থামিয়ে প্রথমে স্যালুট দিলো, পরে একটা রসিদ বই হাতে নিয়ে পাকড়াও করলো। আমি টিকিট কেটেছি কি না জিজ্ঞেস করতেই ভাষার ভিন্নতা যোগাযোগে তুলে দিলো অভেদ্য প্রাচীর। রসিদ হাতে নিয়ে দেখলাম তামিলে লেখা। কোনো মন্দিরের রসিদ হবে সম্ভবত। পাশ কাটিয়ে দুর্গের সিঁড়ি ভাঙায় মনোযোগ দিলাম। নিচে তাকাতেই কমলালায়ম পুকুর। মাঝে দ্বীপের মতো উঁচু সাদা বেদি।

বিশাল সব পাথরের ব্লক দিয়ে দুর্গের প্রাচীর তৈরি। আধুনিক স্থাপনা বলতে সিমেন্ট দিয়ে আরেক দফা মজবুত করা হয়েছে দুর্বল অংশগুলো। সঙ্গে অর্বাচীনদের অমুক যোগ তমুক লেখা দুর্গের দেওয়ালজুড়ে। দুর্গের এমাথা-ওমাথা ঘুরতে ঘুরতে নিভৃতির খোঁজে আসা কয়েক জোড়া কপোত-কপোতীকে অজান্তেই হকচকিয়ে দিলাম। দুর্গ থেকে পুরো নামাক্কালের ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ দেখা যায়। তাই তো বারবার শাসকরা একে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। দুইশ বছরের কিছু বেশি বয়সের এই দুর্গ তৈরি নিয়ে দুটি মত আছে। কেউ বলেন, রামচন্দ্র নায়েক নামে এক সামন্ত রাজা তৈরি করেন এটি। অন্য অনেকের মতে, মাইসোরের রাজার হয়ে লক্ষ্মীনারাসাইয়া এটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীসময়ে ইংরেজরা দখল করলেও কয়েক মাসের মাথায় হায়দার আলী এটি দখল করে নেন।

আরও পড়ুন>> ইডলি-সাম্বারে পেটপুরে দক্ষিণে প্রবেশের প্রস্তুতি নাগপুরে

দুর্গ দর্শন শেষে ফের পথে। নামাক্কালেই কাটিয়ে ফেলেছি দুই ঘণ্টার বেশি সময়। পাড়ি দেওয়া বাকি আরও বেশ অনেকটুকু পথ। পরের গন্তব্য কারুর দুভাবে যাওয়া যায়। মহাসড়ক হয়ে কিংবা মোহানুর-নামাক্কাল সড়ক হয়ে। নতুন রাস্তায় চলার সুযোগ সামনে দেখে দ্বিতীয় পথটাই বেছে নিলাম। শহর থেকে বেরোতে যাওয়ার মুখেই আবাসিক এলাকার মধ্যে দারুণ সব বাড়ির দেখা। এমনিতে ভারতের পথেঘাটে সুদৃশ্য বাড়ির দেখা মেলে কম। সেদিক থেকে নামাক্কাল অনন্য। দারুণ স্থাপত্যরীতি ও সুরুচিবোধের ছাপসম্পন্ন বেশ কয়েকটা বাড়ি দেখলাম। এই ছোট রাস্তা ধরে এগিয়ে ভারতী নগর। পথটা আমাদের দেশের উপজেলা পর্যায়ের রাস্তাগুলোতে চলার অনুভূতি জোগাচ্ছে। এই রাস্তার মোট যানের ৯০ শতাংশই মোটরসাইকেল। আমাদের দেশের উপজেলা পর্যায়ের রাস্তাগুলোতে অবশ্য সিএনজির আধিপত্য থাকে।

কিছুদূর এগিয়ে তামিলনাড়ু ভেটেরেনারি কলেজ অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভবন। এক পাশে অ্যানিমেল ফিড অ্যানালাইসিস অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ল্যাবরেটরি আছে। খুব সম্ভবত এই ইনস্টিটিউটে চট্টগ্রাম ভেটেরেনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সের শিক্ষার্থীরা কিছুদিনের জন্য আসেন। এই চল এখনো আছে কি না জানা নেই।

আজ গরমটা খুব ভোগাচ্ছে। হাওড়ার বুকাইদাকে গরম নিয়ে অনুযোগ করলে নির্ঘাত বলে উঠতো, ‘এত গরম গরম করছিস কেন? স্কটল্যান্ডে জন্মেছিস নাকি? পৃথিবীর এই প্রান্তে জন্মালে গরম-ফরম লাগবেই!’ এই বলে মুখ বন্ধ করে দেওয়ার পরে আমি হয়তো বললাম, ‘বুকাইদা, চলো। একটু কলেজ স্ট্রিট যাই।’ ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়া উত্তর আসবে, ‘মাথা খারাপ নাকি! এই গরমে মানুষ মরে যাবে, আর তুই আছিস কলেজ স্ট্রিট নিয়ে। খবরদার, বেরোনোর কথা মুখেও আনবি না।'’

পান্ডিয়াইয়ান নগর পেরোতেই রাস্তার ধারে বিশালাকৃতির সব নিম গাছ। টানা প্যাডেল মেরে পৌঁছে গেলাম মোহানুর। নামাক্কাল জেলার তালুক এই মোহানুর থেকে কারুর শহর অবধি রাস্তা আরও ছোট। চালাতে দারুণ লাগছে। কিছুদূর এগিয়ে কাবেরী নদীর ওপর বিশাল সেতু। তামিলনাড়ু রাজ্যের সবচেয়ে বড় নদী কাবেরী। ভারতীয় নদীর সূত্রানুযায়ী নদীখাত অতিকায়, প্রবাহ অতি ক্ষুদ্র। দুপাশে বালির চর পড়ে গেছে। অন্য অনেক নদীর মতো এটিকেও হিন্দু পুরাণে পবিত্র নদী বলেই গণ্য করা হয়। দক্ষিণের লোকেদের কাছে এটি অবশ্য শুধু নদী নয়, একইসঙ্গে দেবীও। কাবেরী আম্মা নামে পূজিত হয় এই নদী। এগোতেই মাংসাশীদের অভয়ারণ্যে। রাস্তার দুই ধারে দেদারসে শুয়োর, মাছ, মাংস বিক্রি হচ্ছে। অন্য রাজ্যে শাকাহারি খাবারই প্রধান। তামিলনাড়ু রাজ্যে নন-ভেজ খাবার লোক প্রচুর। অবশ্য মাংসাশীদের মধ্যে চাইনিজদের ধারেকাছে কেউ আছে বলে মনে হয় না। নাকবোঁচা জাতি নাকি যা কিছু নড়ে, তাই-ই পাতে তোলে!

আজ বেশ ক্লান্ত লাগছে। গরম যতটা না ক্লান্ত করেছে, তার চেয়ে কয়েক গুণ শ্রান্তি বয়ে এনেছে দু-দুটো পাংচার। সময়ক্ষেপণের পাশাপাশি চলার ছন্দও ব্যাহত করে পাংচার। ছোট রাস্তায় চলার আনন্দ অনেক। অসুবিধা একটাই, সাইনবোর্ডে সব তামিল লেখা। ভাংগাল হয়ে ভাংগা পালিয়াম। এগিয়ে কারুর মহাসড়ক থেকে তিনটা নাগাদ শহরে ঢুকলাম দুপুরের খাবার সারতে। কলাপাতায় যে পরিমাণ ভাত দেওয়া হলো, সেটা আমার দুই-আড়াই বেলার খাবার। তবে খানিক বাদে আবিষ্কার করলাম, কলাপাতায় একটা ভাতের দানাও অবশিষ্ট নেই। খিদেটা বেশিই লেগেছিল।

ফের মহাসড়কে। কাকাভাডি ছাড়িয়ে অমরাবতী নদী। নামে বড় নদী, কাজে ছোট! অবশ্য ছোটই বলছি কেন! তামিলনাড়ুর এই অংশে কাবেরী নদীর এই শাখার কোনো অস্তিত্ব নেই। সেতুর তলায় ধূ ধূ বালি আর অবিরাম বাড়তে থাকা ঘাস। এর মাঝে চরছে ছাগল। অবশ্য নদীর বাঁধ আর জলাধার নির্মাণের কুফল এই পানি না থাকা। নদীর নাম বাদেও ভারতের দুটি শহরের নাম অমরাবতী।

মালাইকভিলুর পেরোতেই সংকেত দিয়ে গাড়ি থামালো দুই কিশোর। আরে, এরা তো আধা ঘণ্টা আগে প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে হাত নেড়েছিল। প্রত্যুত্তরে আমিও হাত নেড়ে জবাব দিয়েছিলাম। গ্লুকোজ আর পানির বোতল হাতে ধরিয়ে বেশ এটা-সেটা জিজ্ঞেস করলো। চলতে শুরু করে ভাল্লুবারনগর। এদিকের বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টেই ‘টিফিন রেডি’, ‘মিল রেডি’ লেখাগুলো বড় বড় করে লিপিবদ্ধ থাকে। এর মানে হলো অর্ডার করার সঙ্গে সঙ্গেই খাবার পাওয়া যাবে। অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে না খাবারের জন্য।

অল্প এগোতেই দূরে তিন পাহাড় চূড়ার মোহনীয় রূপ। চোখ ফেরানোই দায়। কোন্ডালাম পাট্টিতে নামলো বৃষ্টি। পেট্রোল পাম্পে আশ্রয় নিয়ে জিনিসপাতি বাঁচানোর উদ্যোগ নিতে হলো ফের। ঘণ্টাখানেক আটকা থেকে আরাভাকুরিচির উদ্দেশ্যে। কারুর জেলার এই তালুকেই আজ রাত কাটাবো। আজ থেকে রাস্তার পাশে ধাবা উধাও। খোঁজ করলাম লজের। সাইকেল আরোহী পরিচয়ের সুবাদেই ৭৫০ রুপির লজ ৪০০ রুপিতে মিলে গেলো। ১৫২ কিলোমিটার পথ চলে ২৭তম দিনের রাইডের এখানেই সমাপ্তি।

চলবে…

এএসএ/এএসএম