‘সন্তানদের কথা মনে পড়লেও মনে করি না। কেননা যে সন্তান মাকে দেখে না, চেনে না, জানে না সে সন্তানকে আমি চাই না। এখানে (বৃদ্ধাশ্রমে) ভালোই আছি। আমি কষ্ট পাই না। আয়নায় আমি সব দেখি।’
Advertisement
কথাগুলো পঁচাত্তরোর্ধ্ব সালেমা আমজাদের। পাঁচ সন্তানের জননী তিনি। বাড়ি নড়াইলে। ভাগ্যের ফেরে এখন তার ঠিকানা কল্যাণপুরের বৃদ্ধাশ্রম।
আরও পড়ুন>>প্রতিটি দিনই হোক ‘মা দিবস’
স্বামী, সন্তানদের নিয়ে দীর্ঘদিন ছিলেন লন্ডনে। দুই ছেলে ও তিন মেয়ে অবস্থাসম্পন্ন, থাকেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। তবু সন্তানদের ঘরের কোণে জায়গা হয়নি মা সালেমা আমজাদের। চাপা ক্ষোভ বুকে নিয়ে তিনি বলেন, আমার ছেলে-মেয়ে, নাতিদের জন্য দোয়া করবেন।
Advertisement
আট বছর আগে ঢাকার বিমানবন্দরে রেখে সন্তানরা উড়াল দেন লন্ডনের পথে। এরপর কেউ কোনো খোঁজ নেননি। ২০১৫ সালে ফরিদপুরে এক সাংবাদিকের সহায়তায় ঠাঁই হয় ঢাকার বৃদ্ধাশ্রমে। সালেমা আমজাদের জীবনের বাস্তব গল্প এটাই। শৈশব, কৈশোর ও যৌবন লন্ডনে কাটলেও জীবন সায়াহ্নে তার আশ্রয় হলো বৃদ্ধাশ্রমে। বৃদ্ধাশ্রমের সবাই তাকে ‘লন্ডনি খালা’ বলেই ডাকেন।
আরও পড়ুন>>দেশে দেশে যেভাবে পালিত হয় ‘মা দিবস’
বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২১ সালে ভারত থেকে সালেমা আমজাদের মেয়ের ঘরের নাতি এসেছিল। কিছু সময় নানির সঙ্গে থেকে চলে গেছে। নানিকে ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো কথা হয়নি। অভিমানী সালেমা আমজাদও সন্তানদের কাছে ফিরতে চান না।
সালেমা জানান, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন ভালো পরিবারে। ছেলেরাও প্রতিষ্ঠিত। কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছেলেমেয়েরা, সময় করে দেখাও করতে আসে না। অথচ এক সময় ছেলেমেয়েদের সব শখ-আহ্লাদ পূরণ করতেন।
Advertisement
আরও পড়ুন>>‘মায়েদের হাসিতে এই পৃথিবী হোক আরও সুন্দর’
তিনি বলেন, আমার ছেলেমেয়েরা আমাকে এয়ারপোর্টে দাঁড় করিয়ে রেখে যায়। বলে, আপনি একটু দাঁড়ান, আমরা আসছি। আমাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে ফিরতি প্লেনে তারা চলে যায়।
সন্তানদের কথা মনে পড়ে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সন্তানরা ভালো আছে। তারা তাদের মতো খায়-দায় ঘুরে বেড়ায়। যে বাচ্চাদের মায়ের কথা মনে পড়ে না, সে বাচ্চাদের মা কেন মনে করবে।
২০১৪ সালে রাজধানীর কল্যাণপুর দক্ষিণ পাইকপাড়ার চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার প্রতিষ্ঠা করেন মিল্টন সমাদ্দার। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৬৫ জন বাবা, ৭০ জন মা, ৩৫ জন পরিচয়হীন প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে, যাদের সবাইকেই পরিবার ত্যাগ করে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে।
এসএম/এএসএ/এমএস