দেশজুড়ে

সিডরে আল্লাহ বাঁচিয়েছে, বন্যার কথা শুনলেই কেঁপে উঠি

‌‘সিডরের দিন পরিবারের সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে ছিলাম কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই পানিতে তলিয়ে যায় সবকিছু। কোনোমতে বুক সমান পানির মধ্য দিয়ে বেড়িবাঁধে উঠে পরি। আর যদি এক মিনিট দেরি করতাম তাহলে পানির শ্রোতে ডুবে যেতাম। হয়তো বেঁচে ফেরা হতো না।’

Advertisement

এভাবেই নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ২০০৭ সালের ভয়াল সিডরের দিনের স্মৃতিচারণ করছিলেন উপকূলীয় এলাকা পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন হোসেনপাড়ার বাসিন্দা মাসুম গাজী (৫০)।

উপকূলীয় এলাকার বর্তমানে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে আতঙ্কিত যখন পুরো এলাকা তখন সেই সিডরের ভয়াল দিনের কথা মনে করে তিনি আরও বলেন, সিডরে ছেলে-মেয়েদের আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়ে আমার স্ত্রীসহ বাড়িতে ছিলাম। ওই রাতে পূর্বদিক থেকে বাতাসের চাপ থাকলেও হঠাৎ বাতাস থেমে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিম দিক থেকে অতি জোরে বাতাস শুরু হয় এবং সাথে পানিতে আশপাশের এলাকা তালিয়ে যায়।

আরও পড়ুন: আইলার দুর্বিষহ স্মৃতি কাঁদায় আজও

Advertisement

‘আমার বাড়ি উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধের কাছাকাছি হওয়ায় আমরা আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে বেড়িবাঁধের দিকে খুব দ্রুত ছুটি। এর মধ্যেই আমার বুক সমান পানি হয়ে যায় পরে কোনোমতে পায়ে বেড়িবাঁধের মাটি পেয়ে নিরাপদে উঠি’।

তিনি বলেন, একটু দেরি হলেই আর হয়তো রক্ষা পেতাম না, কারণ পানির এত শ্রোত আর তার পাশেই ছিল বিশাল দিঘী সেখানে পড়লে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতাম। তবে পানি বেশিক্ষণ স্থায়ী না হওয়ায় আমরা ওইদিন রাতেই বাড়িতে যেতে পারি কিন্তু আমরা বেঁচে থাকলে আমার বাড়িতে চারটি ছাগল ও বেশকিছু পশু-পাখী মারা যায়।

‘আমার বাড়ির ঘরটিও ভেঙে যায়, ওইদিন ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ানক একটি দিন। আবহাওয়া খারাপ হলেই সেদিনের স্মৃতি সামনে আসে। বুকটা কেঁপে ওঠে সিডরের মতোই তাই এখন বন্যা হবে শুনলেই নিরাপদে যাচ্ছি এবং সতর্ক করছি।’

আরও পড়ুন: ঝুঁকিতে ২০ উপজেলার প্রায় ৫৭ লাখ মানুষ

Advertisement

বর্তমানে যে শুনছি ঘূর্ণিঝড় মোখা আসছে তাই আগেভাগেই সতর্ক হয়ে গরু-ছাগল সরিয়ে নিয়েছি কিন্তু আমরা এখনো বাড়িতে অবস্থান করছি কারণ আবহাওয়া অনেক ভালো সেই সিডরের তুলনায়। যদি অতিরিক্ত বৃষ্টি ও বাতাস সিডরের মতো শুরু হয় তাহলে আগেভাগেই আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাবো।

মাসুম ফরাজি আরও বলেন, শুধু আমিই নয়, আমার মতো এই স্মৃতি নিয়ে শতশত পরিবার এই উপকূলীয় এলাকায় বসবাস করছে।

আসাদুজ্জামান মিরাজ/এমআরএম