ঘূর্ণিঝড় মোখা আরও শক্তিশালী হয়ে ধেয়ে আসছে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে। রোববার (১৪ মে) সন্ধ্যার আগেই উপকূলীয় এলাকায় অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে শনিবার মধ্যরাতেই চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
বাংলাদেশে দুর্যোগ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর জোট নিড অ্যাসেসমেন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের একটি প্রভাব বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার জেলার ২০ উপজেলার ওপর দিয়ে ৯৩ কিলোমিটর বা তার বেশি গতিতে ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রম করবে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৫৭ লাখ মানুষ, যার মধ্যে প্রায় ২৮ লাখ নারী, ৭ লাখ ৫৮ হাজার শিশু (চার বছরের কম বয়সী) ও ৭৪ হাজার ৬৭৩ জন প্রতিবন্ধী। আর নারীদের মধ্যে ৭৪ হাজারের বেশি সন্তানসম্ভবা ও ১ লাখ ৯৫ হাজার জন বৃদ্ধা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ঝুঁকিতে থাকা এলাকায় ৭ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি কাঁচা ঘর ও ঝুপড়ি রয়েছে। এসব ঘর ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অথবা ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কক্সবাজারের মধ্যে টেকনাফ ও উখিয়া, চকরিয়া ও মহেশখালী ঝড়ের বাতাস ও বৃষ্টির কারণে উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। রাঙামাটির বিলাইছড়ি ও জুয়াছড়ি এবং বান্দরবানের আলীকদমও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পড়েছে। চট্টগ্রামের জেলাগুলোর মধ্যে চকরিয়াতে উচ্চঝুঁকি এবং বাঁশখালী, লোহাগড়া ও সাতকানিয়ায় মাঝারি মাত্রার ঝুঁকি রয়েছে। এসব জেলায় ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার বেড়ে ঝড়ো বাতাস বইতে পারে। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সেখানে পাহাড়ধসেরও আশঙ্কা রয়েছে।
Advertisement
এসব এলাকার বাইরে উপকূলীয় দ্বীপগুলোর মধ্যে সেন্টমার্টিন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। সেখানে শতাধিক পর্যটন হোটেল ও মোটেল রয়েছে। তবে শনিবারের মধ্যে এসব পর্যটনকেন্দ্রের কর্মীরা টেকনাফ ও কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে রোববার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের বড় অংশ আঘাত হানবে বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে। সন্ধ্যা ৬টারেআগে এটি আঘাত হানার আশঙ্কা প্রায় ৯০ শতাংশ। চার থেকে ছয় ঘণ্টা এর প্রভাব থাকবে। তারপর এটি দুর্বল হয়ে পড়বে। এখন ঘূর্ণিঝড়টি আট থেকে ১০ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঝড়ের কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত এবঙ চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে আট নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
Advertisement
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো আট নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে আট থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস এবং ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে সাত ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারি (৮৯ মিলিমিটার)বৃষ্টিপাত হতে পারে। অতিভারি বর্ষণের ফলে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
এসএম/কেএএ/