দেশজুড়ে

মেয়র প্রার্থীদের নজর বিএনপির ভোট ব্যাংকে

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ১২ দিন। এ নির্বাচনে পাঁচজন রাজনৈতিক দলের ও তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে বিএনপির কোনো প্রার্থী না থাকলেও কাউন্সিলর হতে অন্তত ৩০ প্রার্থী লড়ছেন। তবে নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে বিএনপির ভোট ব্যাংক। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।

Advertisement

স্থানীয়রা জানান, গাজীপুরকে দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ বলা হলেও ভোটের হিসেবে বিএনপিকে দূরে ঠেলে দেওয়ার সাহস দেখাবে না কোনো প্রার্থী। ১৯৯১, ২০০১ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৩ সালের গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি তাদের ভোটের হিসেবে দিয়ে রেখেছে। এখন নির্বাচনী মাঠে না থাকলেও তাদের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী, সমর্থক ও ভোটার যে দিকে ভোট দেবে জয়ের পাল্লা সে দিকেই ভারি হবে।

বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, গাজীপুর সিটিতে কাউন্সিলর পদে বিএনপির অন্তত ৩০ প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। যদিও তাদেরকে দল থেকে শোকজ দেওয়া হয়েছে। এরপরও তারা নির্বাচনে থাকছেন। এছাড়া স্থানীয় নির্বাচন হওয়ায় নানা কারণে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবে। সেক্ষেত্রে তারা কখনোই নৌকায় ভোট দেবে না।

ওই নেতারা আরও বলেন, গাজীপুরকে আওয়ামী লীগে নৌকার ঘাটি মনে করে। প্রকৃত হিসাব করলে গাজীপুর বিএনপির ঘাটি। কারণ ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-২ (সদর-টঙ্গী) আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান দেশের সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে তিনি ধর্মপ্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে অধ্যাপক এম এ মান্নান ধানের শীষ প্রতীকে লক্ষাধীক ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমতউল্লা খানকে পরাজিত করেন। ১৯৯১ থেকে ২০১৩ সাল ২২ বছর পর বিএনপি ফের গাজীপুরে তাদের জনসমর্থন ও ভোটের মাঠে শক্তি প্রকাশ করেছিল। সে হিসেবে গাজীপুরে যে কোনো নির্বাচনে বিএনপিকে হিসেবে রাখতে হবে।

Advertisement

এদিকে সিটি নির্বাচনে বিএনপির এ বিশাল ভোট নিজেদের বাক্সে নিতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়র প্রার্থীরা। তাদের মধ্যে তিন প্রার্থী উল্লেখযোগ্য। তারা হলেন- সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি পরিবারের সদস্য সরকার শাহনুর ইসলাম রনি।

স্থানীয়রা জানান, জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগের মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থাতেও বিএনপির সঙ্গে বিরোধে জড়াননি। এছাড়া তিনি মেয়র থাকা অবস্থায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। সে হিসেবে বিএনপির কর্মী সমর্থকরা যদি কেন্দ্রে ভোট দিতে যায় তবে তাদের অনেকেই জাহাঙ্গীর আলমের মাকে ভোট দেবেন।

এ ব্যাপারে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের ছেলে ও সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভোটের মালিক জনগণ। এ নগরকে পরিকল্পিত করে গড়ে তুলতে কাকে প্রয়োজন তা নগরবাসীই ভালো জানেন। আমার মা প্রার্থী হিসেবে সবার কাছেই ভোট চাইতে পারে।

তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন জানান, সচিব থাকা অবস্থায় গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। অনেককে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দিয়েছি। বিএনপির সব পর্যায়ের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে সু সম্পর্ক রয়েছে। তাই বিএনপির ভোট লাঙ্গলের বাক্সেই আসবে বলে আশা করছি।

Advertisement

অপর প্রার্থী কারাবন্দি বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

তিনি বলেন, বাবা ছিলেন বিএনপির নেতা। এছাড়া সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান উদ্দিন সরকার আমার আপন জেঠা (বড় চাচা)। পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। তাই নির্বাচনী মাঠে না থাকলেও বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভোট আমি প্রত্যাশা করি। আশা করি তারা আমাকে ভোট দেবেন।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ৮, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৭৮ এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ৫৭ ওয়ার্ডে ৪৮০ ভোটকেন্দ্রে তিন হাজার ৪৯৭টি ভোটকক্ষ থাকবে। মোট ভোটারসংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬, তাদের মধ্যে পুরুষ পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ এবং নারী ভোটার পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন। এএইচ/এএসএম