সাহিত্য

শিশুতোষ গল্প: কলার খোসা

ঢং ঢং ঢং। বেজে উঠলো আনন্দ পাঠশালার ঘণ্টা। বিদ্যালয় ছুটি হওয়ার ঘণ্টা। বিজয় তার সহপাঠীদের সঙ্গে দৌড়ে বের হলো শ্রেণিকক্ষ থেকে। সহপাঠীদের সঙ্গে গ্রামের পথ দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিল। আজকে তার আর খেলতে ইচ্ছে করছে না। তার বাড়ির পাশে মসজিদ। মসজিদের পাশেই হঠাৎ এক পথচারী পা পিছলে পড়লেন। রাস্তায় কে যেন ফেলে রেখেছিল কলার খোসা।

Advertisement

আর একটু হলেই মানুষটি ডিগবাজি খেয়ে পড়ে যেত নোংরা ডোবায়। এই দৃশ্য দেখে বিজয় খিলখিল করে হেসে উঠলো। সহাপাঠীরাও খুব আনন্দ পেলো। পথচারীটিকে রাস্তার অন্য পথচারীরা হাত ধরে টেনে তুললো। তিনি পা সোজা করে দাঁড়াতে পারছিলেন না। খুব ব্যথা হচ্ছিল। বিজয় তার বন্ধুদের সঙ্গে হাসাহাসি করছিল। এই দৃশ্য দেখে বয়স্ক একজন বিজয়কে অনেক বকা দিলেন।

পরের দিনের ঘটনা। বিজয় যাচ্ছিল পুকুর পাড়ের পাশ দিয়ে। গ্রাম্য এক বধূ এলেন পুকুর পাড়ে। কোমরে মাটির কলস। পুকুর থেকে পানি নেবেন। গ্রাম্যবধূটি পা পিছলে পড়লেন কলার খোসায়। কলসটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। গতকালকের মতো বিজয় হাসতে শুরু করলো উচ্চস্বরে।

আরও পড়ুন: মোহাম্মদ রায়হানের গল্প: অতসী

Advertisement

বিজয়ের বন্ধুরাও সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। লজ্জা আর কষ্টে গ্রাম্যবধূটি কাঁদতে শুরু করলো। পা ব্যথা নিয়ে দাঁড়াতেই পারলো না। পুকুর পাড়ে বসে কাঁদতে শুরু করলো। বিজয় হাসতে হাসতে হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো। বাড়ি যাওয়ার পথে বিজয়ের সহপাঠী নাসির বলল, ‘কিরে তুই হঠাৎ চুপ হয়ে গেলি কেন?’‘পলাশের কথা খুব মনে পড়ছে। পাঁচ দিন হয়ে গেল সে কেন পাঠশালায় আসে না, আমি বুঝতে পারছি না। তার কাছে আমি একটা বল চেয়েছিলাম। মনে হয়, এই জন্য সে রাগ করে স্কুলে আসে না।’‘ও খুব ভালো ছেলে, একটা বলের জন্য ও রাগ করার কথা না।’

বিজয় নীরব হয়ে মন খারাপ করেই এগিয়ে যেতে থাকলো খেলার মাঠের দিকে। সবাই মিলে বল খেলতে শুরু করলো। কিন্তু বিজয়ের ভালো লাগছে না। পলাশের জন্য মনটা অস্থির লাগছে। যারা কলার খোসায় পা পিছলে পড়ে গেছে, তাদের দেখলে পলাশ কখনোই হাসতো না। পলাশ খুব ভালো ছেলে।

বিজয় মন খারাপ করে বসে পড়লো মাঠের এক পাশে। সে পলাশের বাসা চেনে না। পাঠশালার কেউ পলাশের কোনো খবর জানে না। সে পলাশকে খুব পছন্দ করে। হঠাৎ রহমান চাচা পেছন থেকে বিজয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বিজয় চমকে উঠলো!‘চাচা, পলাশ কেন স্কুলে আসে না?’‘আমার সাথে চলো, দেখতে পাবে কেন পলাশ স্কুলে আসে না।’

আরও পড়ুন: কুমার অরবিন্দের গল্প: সেলাই করা জীবন

Advertisement

রহমান চাচা বিজয়কে সঙ্গে নিয়ে গেলেন হাসপাতালে। পলাশের দুই পায়ে ব্যান্ডেজ। ও হাঁটতে পারে না, বসতেও পারে না। ভেঙে গেছে দুই পায়ের হাড়। পলাশকে দেখে বিজয় কান্নায় ভেঙে পড়লো।‘কে যেন তোমাদের বাসার রাস্তায় কলার খোসা ফেলে রেখেছিল। পলাশ তোমাকে বল উপহার দিতে যাচ্ছিল। তারপর কলার খোসায় পা যায় পিছলে।’

বিজয় হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো। স্বীকার করলো, এতদিন ধরে বিজয় রাস্তায় ফেলে রাখতো কলার খোসা। সে পলাশের কষ্ট আর সহ্য করতে পারছে না। রহমান চাচার হাত ধরে ক্ষমা চায়। রহমান চাচা নীরব হয়ে যান।

পলাশ কোনো কিছুই বলতে পারে না। বিজয় পলাশের গলা জড়িয়ে ধরে। কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আমি আর কোনো দিন রাস্তায় কলার খোসা ফেলবো না।’

এসইউ/এমএস