সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভিউ’ পাওয়ার আশায় ইচ্ছা করে প্লেন দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এক ইউটিউবার। প্লেন বিধ্বস্ত করার আগে প্রথমে বিভিন্ন স্থানে ক্যামেরা লাগিয়ে সেই দৃশ্যধারণ করেন, এরপর প্রমাণ লোপাটের জন্য ধ্বংসাবশেষও সরিয়ে ফেলেন। তবে এত কিছুর পরেও শেষরক্ষা হয়নি। ঠিকই কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ে যান তিনি। সেই ঘটনার জন্য বড় সাজার মুখে পড়তে চলেছেন ট্রেভর ড্যানিয়েল জ্যাকব নামে ওই ইউটিউবার।
Advertisement
মার্কিন বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার (১১ মে) জানিয়েছেন, স্বেচ্ছায় প্লেন বিধ্বস্ত করা এবং প্রমাণ লোপাটের দায়ে জ্যাকবকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে।
অভিযুক্ত ইউটিউবার কর্তৃপক্ষের কাছে স্বীকার করেছেন, তিনি একটি মানিব্যাগের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য তৈরি করা ভিডিওতে প্লেন বিধ্বস্ত করার পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন>> ১৯৫৫ সালের পর নেপালে ৬৮ প্লেন দুর্ঘটনা, মৃত্যু নয় শতাধিক
Advertisement
ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টের ইউএস অ্যাটর্নি অফিসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জ্যাকব প্লেনটির ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করেন এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের কাজে বাধা সৃষ্টির সেগুলো নষ্ট করে ফেলেন।
জ্যাকব ইউটিউবারের পাশাপাশি একাধারে পাইলট এবং স্কাইডাইভারও। ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর তিনি ওই কাণ্ড ঘটান। সেদিন সান্তা বারবারা কাউন্টির লোমপক সিটি বিমানবন্দর থেকে প্লেন নিয়ে আকাশে উড়েছিলেন ২৯ বছর বয়সী জ্যাকব। তবে কখনোই সেটি অবতরণের পরিকল্পনা ছিল না তার।
আরও পড়ুন>> ঘুমে বেঘোর দুই পাইলট, ৩৭ হাজার ফুট ওপরে চক্কর দিচ্ছিল বিমান
জ্যাকব স্বীকার করেছেন, তিনি প্যারাস্যুট নিয়ে লাফ দেওয়া এবং প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ার সময় ভিডিওধারণের পরিকল্পনা করেছিলেন। এর জন্য প্লেনের বিভিন্ন স্থানে আগে থেকেই ক্যামেরা বসান এবং নিজের কাছে একটি ক্যামেরা ও সেলফি স্টিক রাখেন।
Advertisement
উড্ডয়নের প্রায় ৩৫ মিনিট পরে সান্তা মারিয়ার কাছে লস প্যাড্রেস জাতীয় বনের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় জ্যাকব প্লেন থেকে লাফ দেন এবং প্যারাসুট নিয়ে মাটিতে নামার ভিডিও করেন। এরপর তিনি প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ার জায়গায় যান এবং ঘটনার সব ভিডিও ডেটা সংগ্রহ করে স্থান ত্যাগ করেন।
ঘটনার দু’দিন পরে জ্যাকব ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডে দুর্ঘটনার কথা জানান। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছে মিথ্যা বলেছিলেন যে, তিনি জানেন না দুর্ঘটনাস্থল কোথায়। অথচ প্রায় দুই সপ্তাহ পরে এক বন্ধুকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান, ধ্বংসাবশেষ তুলে নিয়ে সেগুলো পরে ধ্বংস করেন।
আরও পড়ুন>> ভারতে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ২ পাইলট নিহত
ঘটনার প্রায় এক মাস পরে জ্যাকব ইউটিউবে একটি ভিডিও আপলোড করেন ‘আই ক্র্যাশড মাই এয়ারপ্লেন’ (আমি আমার প্লেন বিধ্বস্ত করেছি) নামে। ১২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে প্লেন বিধ্বস্ত হওয়া, তার আগে জ্যাকব প্যারাস্যুট নিয়ে লাফ দেওয়া এবং মাটিতে নামার দৃশ্য দেখা যায়।
তবে কিছু দর্শক এটি সত্যিই দুর্ঘটনা কি না সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। কেউ কেউ দেখিয়ে দেন, জ্যাকব আগে থেকেই প্যারাসুট পরেছিলেন, প্লেনটিকে নিরাপদ অবতরণ এলাকায় নিয়ে যাওয়ার কোনো চেষ্টা করেনি এবং লাফ দেওয়ার সময় ক্যামেরা ও সেলফি স্টিক সঙ্গে রাখতে ভুল করেননি।
আরও পড়ুন>> মিয়ামি বিমানবন্দরে প্লেনে আগুন, অল্পের জন্য রক্ষা ১২৬ আরোহীর
কর্তৃপক্ষের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জ্যাকব তার আবেদন চুক্তিতে স্বীকার করেছেন, তিনি ভিডিও তৈরির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে চেয়েছিলেন। তিনি মার্কিন বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (এফএএ) নিরাপত্তা পরিদর্শকের কাছেও মিথ্যা বলেছিলেন। জ্যাকব বলেছিলেন, প্লেনের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং নিরাপদ অবতরণের জায়গায় খুঁজে না পাওয়ার কারণেই প্যারাসুট নিয়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল।
এফএএ কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে জ্যাকবের পাইলট লাইসেন্স বাতিল করেছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অবশ্য জ্যাকব যার আশায় এই কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন, সেই ভিউ ঠিকই পেয়েছেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইউটিউবে তার ভিডিওটি অন্তত ৩১ লাখ বার দেখা হয়েছে।
সূত্র: সিএনএনকেএএ/