আয়শা সিদ্দিকা আকাশী পেশাগত জীবনে একজন সফল নারী। তিনি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র সফল নারী ‘বার্তা সম্পাদক’ হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি লাভ করেছেন। লেখালেখির সুবাদে ২০০১ সালে যুক্ত হয়েছিলেন সাংবাদিকতায়। তখন মাদারীপুর জেলায় তিনিই একমাত্র নারী সাংবাদিক। অসীম ধৈর্য্য ও সাহসীকতার কারণে সাফল্যের সঙ্গেই এগিয়ে চলছেন তিনি। সম্প্রতি কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি সাংবাদিকতায় ‘রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা ২০১৫’ লাভ করেছেন। এরআগে তিনি ‘সুনীল সাহিত্য পুরস্কার’, ‘গাংচিল সাহিত্য পদক’ ও ‘মাত্রার বিশেষ সম্মাননা’ লাভ করেন।আয়শা সিদ্দিকা আকাশী সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা, পরিবেশবাদী আন্দোলন ও নারী জাগরণে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। তার পেশাগত জীবনের নানা দিক নিয়ে জাগো জবসের পক্ষ থেকে কথা বলেছেন বিভাগীয় সম্পাদক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ।জাগো জবস: প্রথমেই ‘রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা ২০১৫’ সম্পর্কে আপনার অনুভূতিটা জানতে চাইবো-আয়শা সিদ্দিকা আকাশী: কোনো কিছু পাওয়ার আশায় কাজ করিনি। নিজের বোধ থেকে কাজ করেছি। কিন্তু এতো বড় সম্মাননা পাবো, কোনো দিন ভাবিনি। এই সম্মাননা আমাকে সমাজে অনেক বড় জায়গা করে দিয়েছে। একজন সফল ও প্রতিষ্ঠিত নারী হিসেবে দেশের কাছে জায়গা করে দিয়েছে। সেইসাথে আগামী দিনের পথচলায় সাহস ও শক্তি জুগিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, কাজ করলে বা সংগ্রাম করলে একদিন সফলতার চূড়ায় যাওয়া যায়। কারণ পুরস্কার হচ্ছে কাজের স্বীকৃতি।জাগো জবস: আপনি সম্ভবত মফস্বল সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননাটি পেয়েছেন?আয়শা সিদ্দিকা আকাশী: হ্যাঁ, মফস্বল সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য এই সম্মাননাটি আমাকে দেয়া হয়েছে। মাদারীপুর জেলায় আমিই ছিলাম প্রথম নারী সাংবাদিক। আমার দেখাদেখি পরে আরো অনেকে এসেছেন। এখন আমার শক্তি-সাহসও বেড়েছে।জাগো জবস: মফস্বল সাংবাদিকতায় আপনার গোড়ার কথাটা একটু বলবেন কী?আয়শা সিদ্দিকা আকাশী: লেখালেখির শুরুটা হয়েছিলো কবিতা দিয়ে। পরে দীর্ঘদিন মাদারীপুরের স্থানীয় দৈনিক সুবর্ণগ্রামে প্রবন্ধ লিখেছি। বিশেষ করে নির্যাতিত নারীদের নিয়ে অনেক মন্তব্য কলামও লিখেছি। এরপর সাংবাদিকতা শুরু। ওই পত্রিকাতেই সংবাদ লেখা শুরু করি। এরপর একটি জাতীয় দৈনিকে কাজ করি। সেখানে দীর্ঘদিন কাজ করার পর ২০১০ সাল থেকে অন্য একটি জাতীয় দৈনিকের জেলা প্রতিনিধি ও সুবর্ণগ্রামের বার্তা সম্পাদক হিসেবে কাজ করছি। জাগো জবস: সাংবাদিকতার পাশাপাশি আর কী করছেন?আয়শা সিদ্দিকা আকাশী: সাংবাদিকতার পাশাপাশি ‘নকশি কাঁথা’ নামে একটি নারী উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা আমি। এই সংস্থার মাধ্যমে নির্যাতিত নারীদের নিয়ে কাজ করছি। এছাড়া স্বামী রাজন মাহমুদ প্রতিষ্ঠিত পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ফ্রেন্ডস অব নেচার’র সঙ্গেও যুক্ত রয়েছি। জাগো জবস: লেখালেখি মানে সাহিত্যচর্চা কেমন চলছে?আয়শা সিদ্দিকা আকাশী: ২০০৮ সালে অমর একুশে বইমেলায় কর্নেল খলিলুর রহমানের সহযোগিতায় ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশন থেকে ‘এক জলকন্যার রিপোর্টের শিরানাম’ নামে একটি কবিতার বই বের হয়েছিল। এই বইয়ের জন্য ‘গাংচিল সাহিত্য পদক’ পেয়েছিলাম। এছাড়া গল্প লেখার জন্য ‘সুনীল সাহিত্য পুরস্কার’ এবং জেলার প্রথম নারী সাংবাদিক হিসেবে আবৃত্তি সংগঠন ‘মাত্রা’ থেকে ‘বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার’ পেয়েছি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন- সবকিছুই চলছে।জাগো জবস: মফস্বলে সাংবাদিকতা পেশায় ঝুঁকি এবং মজাটা কেমন?আয়শা সিদ্দিকা আকাশী : ঝুঁকি আছে অনেক। মফস্বলে নারীরা কাজ করতে গেলে অনেক ধরনের বাধা ও হুমকির মধ্যে পড়তে হয় । ইতিমধ্যে প্রভাবশালীদের মামলার জালেও জড়াতে হয়েছে। তাই বলবো, প্রভাবশালীদের হুমকি, বাধা অতিক্রম করে কাজ করার আলাদা একটা মজা আছে। তবে এই পেশায় একদিকে যেমন ঝুঁকি আছে, অন্যদিকে মজা-আনন্দ-ভালো লাগাও আছে। সংবাদের জন্য মানুষের সঙ্গে যখন কাজ করি- সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের কথা লিখি, তখন খুব ভালো লাগে। ওইসব সাধারণ মানুষের ভালোবাসা আরো বেশি করে কাজের উৎসাহ জোগায়।জাগো জবস: আপনার ক্যারিয়ারের সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো বলবেন কী?আয়শা সিদ্দিকা আকাশী: জাতীয় পর্যায়ে একজন নারী কাজ করতে গেলে যেসব সুযোগ-সুবিধা পায়। মফস্বল পর্যায়ের নারীরা সে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পান না। ঢাকার সাংবাদিকরা অনেক বড় বড় জায়গায় যেতে পারেন, এমনকি তারা কাজের প্রয়োজনে বিদেশ পর্যন্ত যেতে পারেন। কিন্তু মফস্বল পর্যায়ের সাংবাদিকদের এই সুযোগগুলো নেই। মফস্বল পর্যায়ের নারীদের কাজ করার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়। প্রতিনিয়ত সংসার, সমাজ সবক্ষেত্রে নানা বাধা অতিক্রম করে কাজ করে এগিয়ে যেতে হয়। এসব কর্মঠ নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে পাশাপাশি তাদের সঠিক মূল্যায়ন করলে তারাও অনেক উচ্চ পর্যায়ে যেতে পারবে বলে আমি মনে করি।জাগো জবস: পেশাগত কোনো পরামর্শ থাকলে বলুন-আয়শা সিদ্দিকা আকাশী : বাধা আসবেই, তা অতিক্রম করে নারীকে এগিয়ে যেতে হবে।জাগো জবস: আপনার দৃষ্টিতে সফলতা মানে কী?আয়শা সিদ্দিকা আকাশী: শুধু কাজ করলেই সফলতা আসে না। মেধা ও বুদ্ধি দিয়ে কাজ করতে হবে। সেই কাজ একজন মানুষ, সমাজ ও দেশের জন্য উপকারী হলে তবেই তা সফল বলে আমি মনে করি।জাগো জবস: জাগো জবসের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।আয়শা সিদ্দিকা আকাশী: জাগো জবসসহ জাগো পরিবারের সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা রইলো।এসইউ/এমএস
Advertisement