২০২২ সালের মে মাসের ২ তারিখে ওয়েব সিরিজ ‘আইজ্যাক লিটন’ ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘বিঞ্জে’তে মুক্তি পেয়েছিল। চলতি বছর মে মাসের ২ তারিখে এ ওয়েব সিরিজের মুক্তির এক বছর পূর্ণ হয়েছে । ওয়েব সিরিজ এবং নির্মাতার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ‘আইজ্যাক লিটন’র নির্মাতা আশরাফুজ্জামানের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার—
Advertisement
জাগো নিউজ: চলতি মাসের ২ তারিখে ‘আইজ্যাক লিটন’ রিলিজের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় কিংবা চায়ের আড্ডায় ‘আইজ্যাক লিটন’ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ব্যাপারটিকে কীভাবে দেখছেন?
আশরাফুজ্জামান: এটা অত্যন্ত আনন্দের। ‘আইজ্যাক লিটন’ রিলিজের পর থেকেই সাধারণত দর্শক এবং সমালোচকদের প্রশংসা পাচ্ছি। ব্যাপারটি সত্যি খুব-ই আনন্দের।
আরও পড়ুন: সিনেমায় আমরা স্বামী-স্ত্রী: সজল-পূজা
Advertisement
জাগো নিউজ: ‘আইজ্যাক লিটন’ এরই মধ্যে দেশের বাইরে বেশ কিছু ফেস্টিভ্যালে প্রশংসিত হয়েছে এবং পুরস্কার জিতেছে, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
আশরাফুজ্জামান: লেখক এবং নির্মাতা হিসেবে নিজের কাজের অর্জন সবসময় আনন্দের। আমারও ভালো লাগছে। পাশপাশি এমন অর্জন কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
জাগো নিউজ: ‘আইজ্যাক লিটন’ যখন নির্মাণ করেছেন, তখন ওটিটি বলতে সাধারণ ক্রাইম, ভায়োলেন্স এবং যৌনতাকে প্রাধান্য দেওয়া হত। সেখান থেকে আপনি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের চিন্তার ইউনিক গল্পের একটি সিরিজ নির্মাণ করলেন। এটা কী আলাদা করে কোনো চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য করেছেন?
আশরাফুজ্জামান: দেখুন চ্যালেঞ্জ কী না জানি না। তবে আমি সব সময়ই স্রোতের বিপরীতে হেঁটেছি। হ্যামলেটের ফিরে আসার কথাও যদি বলেন, সেটাও কিন্তু ঐ সময় এক অর্থে সবাই যখন ভিউর দিকে হেঁটেছে, আমি তখন ভিউর বিপরীতে হেঁটেছি। কেউ কেউ যেটাকে আত্মঘাতী বলেছেন। কিন্তু আমি কোনো চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য বা দেওয়ার জন্য করিনি। আমি করেছি, আমার মনের আনন্দ থেকে। নির্মাতা হিসেবে আমি সব সময় সৃষ্টির আনন্দ খুঁজি। সৃষ্টির আনন্দ আমাকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা জোগায়।
Advertisement
আরও পড়ুন: আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্টে মেয়েদের সংখ্যা বেশি: জায়েদ খান
জাগো নিউজ: বলা হয়ে থাকে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘বিঞ্জ’র যখন একের পর এক কাজ আপ ট্যু দ্যা মার্ক হচ্ছিল না। ‘আইজ্যাক লিটন’ তখন এক ধরণের আশার আলো নিয়ে এসেছে। ‘আইজ্যাক লিটন’র পর ‘বিঞ্জ’ এক ধরণের ইউটার্ন নিয়েছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
আশরাফুজ্জামান: এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। এই বিষয়ে বরং আপনারা এবং দর্শকরা ভালো বলতে পারবেন। নির্মাতা হিসেবে আমি সব সময় নতুন কিছুর তৈরি মধ্যেই আনন্দ খুঁজি এবং খোঁজার চেষ্টা করি। ‘আইজ্যাক লিটন’ সেই চেষ্টা থেকেই তৈরি হয়েছে।
জাগো নিউজ: ‘আইজ্যাক লিটন’ নিয়ে আপনি কতটা তৃপ্ত?
আশরাফুজ্জামান: আসলে একজন শিল্পী কিংবা নির্মাতা কখনো পুরোপুরি তৃপ্ত হন না। কিছু অতৃপ্তি থেকেই যায়। আর এই অতৃপ্তি তাকে নতুন কিছু সৃষ্টির অনুপ্রেরণা জোগায়।
জাগো নিউজ: ‘আইজ্যাক লিটন’ তৈরির পেছনের মূল প্রেরণাটা কী?
আশরাফুজ্জামান: ইতিহাসের কিংবা আমার জীবনে দেখা স্রোতের বিপরীতে হাঁটা মানুগুলোর হাত ধরেই পৃথিবী এগিয়েছে। নতুন নতুন সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রেরণা থেকেই ‘আইজ্যাক লিটন’ নির্মাণ করেছি।
জাগো নিউজ: ‘আইজ্যাক লিটন’-এ মোশাররফ করিম, স্পর্শীয়াসহ দেশবরেণ্য অনেক শিল্পী কাজ করেছেন, তাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
আশরাফুজ্জামান: চমৎকার। ওনারা সবাই চরিত্রটাকে ধারণ করেছেন এবং চেষ্টা করেছেন আমি যেমন চাই তেমনভাবে চরিত্রটি করার এবং সফল হয়েছেন।
জাগো নিউজ: মোশরারফ করিমকে নিয়ে কিছু বলুন, তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
আশরাফুজ্জামান: মোশাররফ করিম শুধু মাত্র একজন অভিনেতা নন। তিনি একটি উন্মুক্ত লাইব্রেরির মতো। তার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সব সময়ই কিছু না কিছু শিখি। আর কাজের অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। মোশাররফ করিম আমার চরিত্রগুলো খুব সহজেই ধরতে পারেন। পাশাপাশি চরিত্রের সঙ্গে মিশে যান। তখন আমার কাজটা খুব সহজ হয়ে যায়।
জাগো নিউজ: বর্তমান সময়ে আলোচিত বিষয় ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’। এটি নিয়ে আপনার মন্তব্য শুনতে চাই-
উ: সত্যি বলতে এক ধরণের রুচির দুর্ভিক্ষ তো চলছেই। আসলে নব্বইয়ের দশকে দেশের যুব সমাজের রুচি তৈরি পেছনে হুমায়ূন আহমেদ, সৈয়দ শামসুল হক, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সেলিম আল দীন, আবদুল্লাহ আল মামুনের মতো গুণীজনরা ছিলেন। তরুণরা যাদের আইডল মনে করতেন। কিন্তু প্রযুক্তির এই দ্রুত বিস্তারের সময় তরুণদের সামনে সেরকম কোনো আইডল কী আছেন? যাদের দেখে বা পড়ে তরুণদের রুচি তৈরি হবে। তাছাড়া আমি মনে করি কোনো কিছু নিয়ে আলোচনা করার আগে নিশ্চিত হওয়া দরকার সেটা শিল্প কী না। যেটা শিল্প নয় সেটা নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। আলোচনা করেই বরং আমরা শিল্পমানহীন কুরুচিপূর্ণ বিষয়কে প্রমোট করে ফেলি।
জাগো নিউজ: ‘আইজ্যাক লিটন’র পাঁচটা ভালো দিক ও পাঁচটা খারাপ দিক বলুন।
আশরাফুজ্জামান: এটা বরং আমার চেয়ে আপনারা ভালো বলতে পারবেন। আমি এটি দর্শকদের উপর ছেড়ে দিলাম।
জাগো নিউজ: পরবর্তী কাজের পরিকল্পনা কী?
আশরাফুজ্জামান: কিছু কাজের প্রি-প্রোডাকশন শেষের দিকে। সব কিছু ঠিক থাকলে শিগগির শুরু হওয়ার কথা।
জাগো নিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আশরাফুজ্জামান: আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
এমএমএফ/এমএস