সময়টা তখন বৃহস্পতিবার (১১ মে) বিকেল। বগুড়া শহরের কাঁঠালতলায় ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করছিলেন মনির হোসেন। তিনি প্রতিটি ডাবের দাম হাঁকছিলেন ১২০ টাকা। এসময় তাকে ঘিরে ছিলেন অন্তত ক্রেতা। ক্রেতারা বারবার বলছিলেন, দাম একটু কম রাখেন। কিন্তু মনির হোসেন অনড়। তার জবাব, একদাম ১২০।
Advertisement
দাম এত বেশি কেন, বিক্রেতা মনির হোসেনের কাছে জানতে চান এ প্রতিবেদক। কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘একটু আগেও ১৩০-১৪০ টাকায় প্রতিটি ডাব বিক্রি হয়েছে। এখন আকাশ মেঘলা হওয়ায় দাম একটু কম, ১২০ টাকা।
তীব্র গরমে ডাবের চাহিদা বেড়েছে। তবে বগুড়ায় ডাবের দাম এখন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। ছোট বা বড় সাইজের একটি ডাব খেতে চাইলেই গুনতে হচ্ছে বড় অংকের টাকা। একটি ডাব থেকে এক থেকে দেড় গ্লাস পানি হয়। বগুড়ায় আকারভেদে এসব ডাব প্রতি পিস ৮০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই ডাব কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।
বগুড়ায় ডাব ব্যবসায় জড়িত আড়তদার ও বিক্রেতাদের দাবি, গ্রীষ্ম মৌসুমে জোগান কম থাকায় গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডাবের দাম। এবার বগুড়ায় রমজান শুরুর আগে থেকেই ডাবের মূল্য আকাশ ছুঁয়েছে। এবছর ফলন আশানুরূপ হয়নি। এজন্য দাম গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
Advertisement
ডাব কিনতে আসা সাধারণ মানুষদের অভিযোগ, গতবছর গরমে যে ডাব ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সেই একই আকারের ডাবের দাম এবার ৮০ টাকা। অপেক্ষাকৃত একটু বড় আকারের ডাব গতবছর ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার গুনতে হচ্ছে ১১০-১৫০ টাকা।
বগুড়া শহরের পাঁচটি স্থানে ১৫টিরও বেশি ডাবের আড়ত আছে। আর শহরেই অন্তত ২০০ মানুষ খুচরা ডাব ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
আড়তদার সূত্রে জানা যায়, দেশের দক্ষিণের জেলাগুলো থেকে প্রতি ট্রাকে ২-৩ হাজার পিস ডাব নিয়ে আসা হয়। এতে গাড়ি ভাড়া বাবদ ট্রাকপ্রতি ২৫-২৮ হাজার টাকা করে খরচ হয় তাদের। দুই হাজার পিস ডাব নিয়ে তাদের গাড়ি ভাড়াসহ প্রায় এক লাখ ২০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়। সে হিসেবে প্রতি পিস ডাবের দাম বগুড়া পর্যন্ত নিয়ে আসতে ৬০-৮৩ টাকা করে খরচ করতে হয়। আর খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে সেই ডাব বিক্রি করা হয় ৬৫-৯০ টাকা দামে।
ডাবের খুচর ব্যবসায়ীরা জানান, তারা প্রতি ১০০ পিস ডাব ৬-৯ হাজার টাকায় ক্রয় করেন। এতে প্রতি পিসে তাদের কেনা দাম পড়ে ৬০-৯০ টাকা। আর এই ডাবগুলো হয় বাছাই ছাড়া। ডাবগুলোর মধ্যে ছোট, মাঝারি ও বড় আকৃতির থাকে। বিক্রেতা অপেক্ষাকৃত ছোট ও মাঝারি আকৃতির ডাব ৮০-১১০ এবং বড় আকৃতিরটা প্রতি পিস ১৫০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করেন।
Advertisement
সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের সামনে ডাব বিক্রি করেন সেলিম মিয়া। তিনি জানান, প্রতি পিস ডাব ৬০-৯০ টাকা দরে কিনতে হয়। এরমধ্যে নষ্ট ও কিছু ছোট আকারের ডাবও থাকে। তারা ১০-২০ টাকা লাভে বিক্রি করেন।
শহরের গোয়ালগাড়ী এলাকার ডাবের আড়তদার শফিকুল ইসলাম বলেন, গতবারের তুলনায় এবার দাম বেড়েছে। আমরা পিস প্রতি ৫ টাকা লাভে ছেড়ে দেই। তবে খুচরা বিক্রেতারা পিসপ্রতি ২০-৩০ টাকা লাভ রাখে।
বগুড়া শহরের উপশহরের বাসিন্দা রাশেদুর রহমান। পেশায় একজন বেসরকারি চাকরিজীবী রাশেদুর ১১০ টাকা দরে দুটি ডাব কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে ডাবের বিকল্প নেই। তবে যে পরিমাণে ডাবের দাম বেড়েছে ইচ্ছা থাকলেও খাওয়ার সাধ্য নেই। বাড়িতে এক সদস্য অসুস্থ। তার জন্য অন্তত পাঁচটি ডাবের প্রয়োজন ছিল। অতিরিক্ত দামের জন্য দুটি কিনে বাড়ি যাচ্ছি।’
বছরে ১০ কোটি টাকার ডাব আসে নাটোর থেকে
কৃষি সংশ্লিষ্ট বলছেন, প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার পিস ডাব নাটোর থেকে বগুড়ায় আনা হয়। যার আনুমানিক মূল্য আড়াই লাখ টাকা। এ হিসেবে বছরে এখানকার উৎপাদিত প্রায় ১০ কোটি টাকার ডাব আসছে বগুড়ায়। একইভাবে নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে ডাব। বগুড়া ছাড়াও রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, রংপুর, সৈয়দপুর, ঠাকুরগাঁও এবং ঢাকার ব্যাপারীরাও নাটোর থেকে ডাব কিনে নিয়ে যান।
দিন দিন ডাবের উৎপাদন বৃদ্ধি ও ভালো বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে নাটোর শহরের হরিশপুর বাইপাস ও ভবানীগঞ্জ মোড়ে গড়ে উঠেছে ডাবের আড়ত। সকাল হলেই ব্যবসায়ীরা জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ডাব নিয়ে আসেন এসব আড়তে। এছাড়া মান ভালো ও পানি সুপেয় হওয়ায় সুখ্যাতি আছে নাটোরের ডাবের।
নাটোর শহরের ভবানীগঞ্জ মোড়ের ডাবের আড়তদার ও জান্নাত ফলঘরের স্বত্বাধিকারী আব্দুল জলিল জানান, তার আড়তে প্রতিদিন গড়ে ৫-৬ হাজার ডাব পাইকারি বিক্রি হয়। প্রতি ১০০ পিস ডাব সর্বনিম্ন তিন হাজার ও সর্বোচ্চ সাত হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা গড়ে ১২-১৫ জন পাইকারি ক্রেতা তার আড়ত থেকে ডাব কিনে নিয়ে যান।
এসআর/এএসএম