খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নানা সমস্যা রয়েছে। তবে সব সমস্যাকে ছাপিয়ে গেছে মাদকের কারবার। খোদ এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলীও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
Advertisement
এছাড়া নগরীর এই ওয়ার্ডের ড্রেনেজ, রাস্তাঘাট, পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্যব্যবস্থাপনার সমস্যার কথা জানিয়েছেন বাসিন্দারা। সেইসঙ্গে জন্মনিবন্ধন, বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধীভাতার কার্ড করাতে কাউন্সিলরকে টাকা দিতে হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ওয়ার্ডের বণিকপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. হেলাল মুন্সি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে জন্মনিবন্ধন করতে গেলে টাকা লাগছে, বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধীভাতা তো দেওয়ায় হয় না। শালিস করে টাকা নেওয়া, করোনার সময় সাধারণ মানুষের জন্য আসা অনুদান বা সাহায্যগুলো বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশিদ খোকন বলেন, এলাকায় ড্রেনেজ, রাস্তাঘাট, পয়োনিস্কাশন, বর্জ্যব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা হয়নি।
Advertisement
শেখ ইমাম হোসেন নামে এক বাসিন্দা বলেন, নগরীতে কেসিসি যথেষ্ট উন্নয়ন করেছে কিন্তু সেই হিসেবে ৫ নম্বর ওয়ার্ড পিছিয়ে রয়েছে। ওয়ার্ডে মাদকসেবন এবং বিক্রি চলছে হরদম। কয়েকটা পাড়া রয়েছে, মাদকের কারণে সেইসব পাড়ার মেয়েদের বিয়ে পর্যন্ত হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমাদের দৌলতপুর বাজার একটি প্রাচীন বাজার। আজ সেই বাজার তার জৌলুশ হারাতে বসেছে। ভৈরবের তীরবর্তী এ বাজার রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় বিএনপি নেতা শেখ সাজ্জাদ হোসেন তোতন বলেন, বর্তমান কাউন্সিলর তার নির্বাচনী ওয়াদার মাত্র ৩০ শতাংশ পূরণ করতে পেরেছেন।
আরেক বিএনপি নেতা খবির উদ্দিন বলেন, এ ওয়ার্ডে বহু সমস্যা রয়েছে। আমি মনে করি, এ ওয়ার্ডে অনেক উন্নয়ন করার সুযোগ ছিল কিন্তু তা হয়নি। এটা আমাদের ব্যর্থতা।
Advertisement
এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, বর্তমানে এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা নাই বা বললাম। এলাকার মুরুব্বিদের সঙ্গে নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করা যায়। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। যথাযথ মূল্যায়ন না করায় এলাকার মুরুব্বি এবং যুবকদের মধ্যে ক্ষোভ জন্মেছে।
তবে বর্তমান কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলী সব অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে বলেন, দৌলতপুর বাজার রাস্তার উন্নয়ন কাজ চলমান। রাস্তাঘাট, ড্রেনের উন্নয়ন করেছি। বাজার রক্ষা বাঁধ প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। জন্মনিবন্ধন, বিদ্যুৎ এবং সব ধরনের ভাতা শতভাগ দিতে পেরেছি। দত্তপুকুরবাড়ির পুকুর পুনর্খনন করা হবে।
তিনি বলেন, এলাকাবাসীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। জনগণ আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছে আমি তা ভুলতে পারবো ন। এখানে মাদক একটি বড় সমস্যা। আর মাদক নির্মূল পুরোটাই প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে। তবে এলাকায় মাদক নির্মূলে আমি একটি সামাজিক চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছি। করোনা, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, সব সমস্যা কাটিয়ে যতটুকু সম্ভব আমি উন্নয়ন করেছি। আগামীতে নির্বাচিত হলে উন্নয়নের বাকি কাজটুকু শেষ করতে পারবো।
এদিকে, কেসিসির ৫ নম্বর ওয়ার্ডটি পড়েছে নগরীর দৌলতপুর থানা এলাকায়। মাদকের বিষয়ে পুলিশের জিরো টলারেন্স নীতি দৌলতপুর থানা এলাকায়ও কার্যকর রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, মাদকের ব্যবসা এলাকাতে নেই এটা বলা যাবে না। কিন্তু সেই ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে সব সময় অভিযান অব্যাহত আছে। আসামি ধরে চালান দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মাদক নির্মূলে কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে সব সময় সচেতন এবং সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কেসিসি সূত্রে জানা যায়, নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডটি ভৈরব নদ, দেয়াড়া বাউন্ডারি রোড, সাতক্ষীরা রোড এবং দৌলতপুর কলেজ রোড এলাকাজুড়ে। এই ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১১ হাজার ৪২৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ হাজার ৭৩৫ এবং নারী ভোটার ৫ হাজার ৬৮৮ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ছয়টি।
খুলনা সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডে গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রান্না উন্নয়ন ও পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় দুটি কাজ চলমান। এছাড়া জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় একটি কাজ টেন্ডারের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে।
এমআরআর/জিকেএস