দেশজুড়ে

‘গরমে ৫ মিনিট বেচাকেনা করছি আর ১০ মিনিট ছায়ায় দাঁড়াচ্ছি’

চুয়াডাঙ্গা সদরের পৌর এলাকার নুরনগর কলোনিপাড়ার রিকশাচালক আয়ুব আলী। সকাল থেকে সারা শহর ঘুরেছেন। তবে অতিরিক্ত গরমের কারণে তেমন ভাড়া পাননি। তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি।

Advertisement

আয়ুব আলী বলেন, ‘রোজার মদ্দে (মধ্যে) গরম পড়েচে। কিন্ত এবাড্ডা (এবার) মানে ঈদির (ঈদ) পর থেকে খুব গরম পড়চে। ভাড়ার যে অবস্থা, যুত (ভালো) না। তারপরও কুনুরকম চলছি।’

আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের বৃদ্ধ শাহাদাৎ হোসেন। চুয়াডাঙ্গা শহরে এসে ভ্যানে ফেরি করে মহল্লায় মহল্লায় সবজি বিক্রি করেন। তবে গরমের কারণে তার বিক্রিতেও ভাটা পড়েছে।

সবজি বিক্রেতা শাহাদাৎ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘গরমের কারণে পাঁচ মিনিট বেচাকেনা করছি আর ১০ মিনিট ছায়ায় দাঁড়াচ্ছি। গরমের কারণে বেচাকেনা হচ্ছে না। আগে যতডা সবজি বিক্রি হতো, গরমের কারণে একুন (এখন) ওতোডা বিক্রি হচ্চে না। এভাবে চললি আমরা গরিব মানুষ কিভাবে সংসার চালাবো? বেচাকেনা আগে ছিল দুই হাজার, একুন কুইমে এক হাজার হয়ে গিয়েছে।’

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘বয়স ১০০ বছর হতি গেলো, এরামধারা গরম কুনুদিন দেকিনি’-

এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে প্রকৃতি পুড়ছে তাপপ্রবাহে। মৃদু থেকে মাঝারি শেষে এখন তীব্র তাপপ্রবাহে হাঁপিয়ে উঠেছে খেটে খাওয়া মানুষ। বুধবার (১০ মে) বিকেলেও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৪ শতাংশ। এর আগে টানা চারদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, সাধারণত তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মৃদু তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা যদি ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে, তবে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে তা হয় তীব্র বা প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ। আর ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে তা হয় চরম বা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক তহমিনা নাসরিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ পরিস্থিতি থাকবে আরও কয়েকদিন। দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও এ অঞ্চলে দু-তিনদিনের মধ্যে তেমন সম্ভাবনা নেই।’

Advertisement

আরও পড়ুন: টানা চারদিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা 

তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার অবস্থান কর্কটক্রান্তি রেখার কাছাকাছি হওয়ায় মার্চ ও এপ্রিলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় মার্চ ও এপ্রিলে গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় মে মাসে এসেও তাপমাত্রা বেড়েছে।

এদিকে, দাবদাহের কারণে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে গরমজনিত কারণে আড়াইশর বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন।

এ অবস্থায় অতি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ফাতেহ আকরাম।

তিনি বলেন, বেশি বেশি পানি ও ফলমূল খেতে হবে। তীব্র দাবদাহে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। তাই যতটা সম্ভব ঠান্ডা স্থানে থাকতে হবে। হাসপাতালে শিশু রোগীসহ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তাপমাত্রা কমে এলে রোগীর সংখ্যা কমে যাবে।

হুসাইন মালিক/এসআর/জিকেএস