বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আবার আশানুরূপ রেমিট্যান্স প্রবাহও নেই। আমদানি-রপ্তানিতেও পার্থক্য রয়ে গেছে। অর্থাৎ আমদানির তুলনায় আশানুরূপ রপ্তানি হচ্ছে না। এসব কারণে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ছে দেশ।
Advertisement
চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) দেশের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৬১ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রার (১ ডলার সমান ১০৬ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। বুধবার (১০ মে) প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
আরও পড়ুন: ৮ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি এক লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) দেশ ৫ হাজার ৩৯৩ কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের (প্রথম ৯ মাস) চেয়ে ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ কম আমদানি হয়েছে।
Advertisement
অর্থবছরের একই সময়ে দেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৯৩২ কোটি ডলারের পণ্য। যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে ৩ হাজার ৬৪৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
এদিকে গত ডিসেম্বর শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১ হাজার ২৩০ কোটি ডলার। মার্চ শেষে তা বেড়ে ১ হাজার ৪৬১ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ২৩১ কোটি ডলার বা ২৪ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: ৭ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি এক লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, এর আগে বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিলেও এখন এর পরিমাণ কমে আসছে। মূলত লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) ঋণপত্র খোলা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে এ সফলতা এসেছে। আবার বিলাসীপণ্যসহ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় আমদানি ও রপ্তানির ব্যবধানও কমে আসছে। আগামীতে ঘাটতি আরও কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
Advertisement
প্রতিবেদন বলছে, মার্চ শেষে অর্থবছরের ৯ মাসে সেবাখাত থেকে দেশের আয় হয়েছে ৬৫০ কোটি ডলার। একই সময়ে সেবাখাতে ব্যয় হয়েছে ৯৪০ কোটি ডলার। এসময়ে সেবাখাতে ২৮৯ কোটি ডলার ঘাটতি দাঁড়িয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৭৯ কোটি ডলার।
চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা মানে নিয়মিত লেনদেনে কোনো ঋণ করতে হয় না দেশকে। আর ঘাটতি থাকলে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সে হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের জন্য চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। তবে আমাদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স এখন ঋণাত্মক। তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি হয়েছে ৩৬৪ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৪৩৪ কোটি ডলার।
আরও পড়ুন: চার মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ৯৫৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার
আলোচিত সময়ে দেশ সামগ্রিক লেনদেনেও বড় ঘাটতিতে পড়েছে। মার্চ শেষে সামগ্রিক লেনদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮১৬ কোটি ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে (ঋণাত্মক) ছিল ৩০৯ কোটি ডলার। তবে চলতি অর্থবছরের এ সময়ে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই বেড়েছে। আলোচিত ৯ মাসে এফডিআই এসেছে ৩৭৮ কোটি ডলার, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ছিল ৩৫৩ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ এফডিআই বেড়েছে।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বাজেটের ঋণ সহায়তা হিসেবে ৫০৭ মিলিয়ন ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। এ অর্থ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হয়েছে। এ কারণে মাত্র একদিনের ব্যবধানে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের রিজার্ভ। বুধবার (১০ মে) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩০ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।
আরও পড়ুন: ঋণপত্রে জটিলতা থাকলেও বেড়েছে আমদানি
সবশেষ গত সোমবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধে বড় চাপে পড়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মজুত। আকুর দায় বাবাদ ১১৮ কোটি ডলার (১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধের পরে রিজার্ভ নামে ২৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে, যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মানদণ্ড অনুযায়ী গণনা করায় রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে দেশের ব্যবহারযোগ্য মোট রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
ইএআর/এমকেআর/এএসএম