ব্যবস্থাপনা খাতে মাত্রাতিরিক্ত খরচ করার পাশাপাশি জীবন তহবিল গঠন করতে না পারা এবং ব্যাপক অনিয়ম সংগঠিত হয়েছে নতুন প্রজন্মের জীবন বিমা কোম্পানি স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটির নতুন বিমা পলিসি ইস্যুর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
Advertisement
সম্প্রতি এই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)-কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে স্বদেশ ইসলামী লাইফসহ ১৩টি কোম্পানির সক্ষমতা যাচাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ভিত্তিতেই স্বদেশ ইসলামী লাইফে তদন্ত করে আইডিআরএ। তদন্তে কোম্পানিটির আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করেই এ সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ।
এর আগে আইডিআরএ’র তদন্তে স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার তথ্য বেরিয়ে আসে। আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ ব্যয় করার পাশাপাশি কোম্পানিটিতে মাত্রাতিরিক্ত কমিশন ব্যয় হয়েছে। এমনকি কোম্পানির গ্রাহকের প্রিমিয়ামের টাকা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)-এর ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসেবে লেনদেন হয়েছে। সেই সঙ্গে নিয়োগের শর্ত অমান্য করে ইনসেন্টিভ বোনাস গ্রাহণ করেছেন সিইও। অন্তঃদ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন কোম্পানিটির পরিচালকরা।
Advertisement
জাগো নিউজের নিজস্ব অনুসন্ধান এবং বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। এ ধরনের অনিয়মের জড়ানোর কারণে কোম্পানিটি থেকে গ্রাহকদের বিমা দাবির টাকা পাওয়া ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। এ নিয়ে জাগো নিউজে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বদেশ লাইফের সিইও ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে কোম্পানির গ্রাহকদের প্রিমিয়ামের অর্থ লেনদেন হয়েছে।দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে একটি ব্যাংক হিসাবে এ ধরনের ৫৯টি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ইসলামী ব্যাংকের খিলগাঁওয়ের নবীনবাগ শাখায় থাকা ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব (হিসাব নং-২০৫০৬৩৩০২০০০৭৩৮১৮) এই লেনদেন হয়।
২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এই ব্যাংক হিসাবটি খোলেন ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন। ব্যাংক হিসাব খোলার পর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এই ৫৯টি লেনদেন সম্পন্ন হয়। বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র তদন্তেও ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনের ব্যক্তিগত এই ব্যাংক হিসাবে কোম্পানির প্রিমিয়ামের টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে।
কোম্পানির প্রিমিয়ামের টাকা সিইও’র ব্যক্তিগত হিসাবে লেনদেন হওয়াকে গুরতর অপরাধ বলছেন বিমা খাত সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে একাধিক বিমা কোম্পানির সিইও বলেন, কোম্পানির প্রিমিয়ামের টাকা সিইও’র ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করার সুযোগ নেই। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সেটিকে মানিলন্ডারিং বা অর্থ পাচারের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এভাবে স্বদেশ লাইফ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না, তা সংশ্লিষ্টদের ক্ষতিয়ে দেখা উচিত।
Advertisement
ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে কোম্পানির প্রিমিয়ামের টাকা লেনদেনের পাশাপাশি স্বদেশ লাইফের সিইও অবৈধভাবে টার্গেট ইনসেন্টিভ নিয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই ইনসেন্টিভ নেন তিনি। যা সিইও’র নিয়োগের শর্তের পরিপন্থি।
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বার্ষিক ব্যবসা সংগ্রহের টার্গেট দিয়ে অবৈধভাবে সিইওকে টার্গেট ইনসেন্টিভ দিয়েছে বলে আইডিআরএ’র তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকার করেন ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন। তিনি তদন্ত দলকে জানান, পরিচালনা পর্ষদ তাকে তার টার্গেট পূর্ণ করার জন্য ২ শতাংশ ইনসেন্টিভ বোনাস দিয়েছে। তার বেতন-ভাতাদি কম হওয়ায় তাকে এ সুবিধা দিয়েছে বোর্ড। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনজন সিইও’র জন্য কোম্পানি সর্বমোট ব্যয় করেছে ২ কোট ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
‘অথচ তিনি তিন বছরে কোম্পানির ব্যবসা বৃদ্ধি ও সারা দেশে সংগঠন তৈরি করেছেন। তার সম্মানি (২০২০ সালের ৯ জুন থেকে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত) ইনসেন্টিভসহ ৮০ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ টাকা। তিনি ইনসেন্টিভ বাবদ ২০২০ সালে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ওপর ১৫ লাখ ১৮ হাজার ৭৩২ টাকা কোম্পানি থেকে গ্রহণ করেছেন। ২০২১ সালের প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম ও নবায়ন প্রিমিয়ামের ওপর ২৬ লাখ ৩৭ হাজার ৭৭৩ টাকা গ্রহণের অপেক্ষায় আছেন’। আইডিআরএ’র তদন্ত দলকে এমন তথ্য দিয়েছেন ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন।
আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, তদন্তে স্বদেশ লাইফে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়, মন্দা ব্যবসা, মাত্রাতিরিক্ত কমিশন ব্যয়, সিইও’র ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে কোম্পানির গ্রাহকের প্রিমিয়ামের টাকা লেনদেন, সিইও নিয়োগের শর্ত অমান্য করে ইনসেন্টিভ বোনাস গ্রহণ করার মত অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে বিমা আইন ২০১০ এর ৫৮, ৫৯, ৮০ ধারা এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা ২০১২ এর ১৮ ধারার নির্দেশনা লঙ্ঘিত হয়েছে। এ বিষয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবার আইডিআরএ থেকে কোম্পানির বক্তব্য চাওয়া হয়, কিন্তু এখনও কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো জবাব দেওয়া হয়নি।
আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ ব্যয়
এদিকে, ২০২২ সালে স্বদেশ লাইফ ব্যবস্থাপনা খাতে আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৬৮ হাজার ৪২১ টাকা ব্যয় করেছে। আগের বছর ২০২১ সালে এ খাতে অবৈধভাবে ব্যয় করা হয় ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৭ টাকা। তার আগের বছর ২০২০ সালে ব্যবস্থাপনা খাতে অবৈধভাবে অতিরিক্ত ব্যয় করা হয় ৩ কোটি ৪০ লাখ ২২ হাজার ৮৯২ টাকা।
এ ছাড়া ২০১৯ সালে ১ কোটি ৮৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫০৮ টাকা, ২০১৮ সালে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫ টাকা, ২০১৭ সালে ২ কোটি ৩২ লাখ ২৭ হাজার ৫০৫ টাকা, ২০১৬ সালে ১ কোটি ৮৮ লাখ ২৬ হাজার ৯৭৭ টাকা, ২০১৫ সালে ২ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ১২০ টাকা এবং ২০১৪ সালে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৮৭ হাজার ৩৮ টাকা ব্যবস্থাপনা খাতে আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ব্যয় করেছে কোম্পানিটি।
অতিরিক্ত এজেন্ট কমিশন
কোম্পানির এজেন্ট কমিশন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৪ বছরে এজেন্ট কমিশন বাবদ ব্যয় করেছে ৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। কোম্পানি গড়ে প্রতি বছর ১০০ টাকার প্রিমিয়াম আদায় করতে প্রায় ১১৬ টাকা ব্যয় করছে। কোম্পানি মাত্রারিক্ত কমিশন ব্যয় করেছে বলে প্রিমিয়াম আদায়ের এত বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে বলে অভিমত দিয়েছে আইডিআরএ তদন্ত দল। এ ছাড়া কোম্পানির উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতাদি বাবদ ২০২০ ও ২০২১ সালে সর্বমোট ৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে, যা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার পরিপন্থি বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।
মন্দা ব্যবসা
কোম্পানিটি ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম বাবদ ২৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যবসা করেছে, যা গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। কিন্তু দ্বিতীয় বর্ষে এ সব পলিসি থেকে গড়ে ২৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ নবায়ন প্রিমিয়াম অর্জন করেছে। অর্থাৎ গড়ে প্রতি বছর নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা।
আইডিআরএ’র তদন্ত দলের অভিমত, কোম্পানির প্রথম বর্ষের ব্যবসা মূলত টার্গেট পূরণের লক্ষ্যেই হয়ে থাকে। এ ব্যবসাগুলো আসলে কাগুজে ব্যবসা, যার প্রায় ৭৫ শতাংশ পলিসির নবায়ন হয় না। এতে কোম্পানি আর্থিকভাবে হুমকির মুখে পড়ে এবং গ্রাহক ক্ষতিগ্রন্ত হচ্ছে। অথচ জীবন বিমা কোম্পানির মূল ব্যবসা বা প্রাণই হচ্ছে যথাযথ নবায়ন অর্জন। এর স্টান্ডার্ড হচ্ছে ৬০ শতাংশ নবায়ন অর্জন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে স্বদেশ লাইফ সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। মেয়াদপূর্তিতে বিমা দাবি পরিশোধে কোম্পানিটি সফল হবে না মর্মে প্রতীয়মান হয়।
আইডিআরএ তদন্তে বেরিয়েছে এসেছে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কোম্পানির চলমান পলিসির সংখ্যা ১৮ হাজার ২৯২টি। কিন্তু এ সময়ে কোম্পানির প্রায় ২৭ হাজার ৯১০টি পলিসি তামাদি হয়েছে। এখানে চলমান পলিসির চেয়ে তামাদি পলিসির সংখ্যা বেশি। প্রতি বছর নতুন পলিসি ইস্যুর প্রবৃদ্ধি ৪২ দশমিক ৯৬ শতাংশ, সেখানে তামাদি পলিসির প্রবৃদ্ধি ৪৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ব্যবস্থাপনা ত্রুটি
কোম্পানির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কোম্পানিটির সার্বিক ব্যবস্থাপনা ত্রুটিপূর্ণ ছিলো বলে অভিমত দিয়েছে আইডিআরএ তদন্ত দল। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ অবৈধ ব্যবসা, মাত্রাতিরিক্ত এজেন্ট কমিশন প্রদানসহ অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে। কোম্পানির পরিচালকদের মধ্যে পারস্পরিক চরম অসন্তোষ ও অন্তঃদ্বন্দ্ব বিদ্যমান। প্রতিষ্ঠার ৫ বছরের মধ্যে শেয়ার বাজারে অন্তর্ভুক্ত হতে না পারা, পরিশোধিত মূলধন থেকে উত্তোলন করা ৫ কোট টাকা পুনঃভরণ না করা, কোম্পানির দায় মূল্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণে ব্যর্থতার জন্য পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে দায়ী।
তদন্ত দলের সুপারিশ
অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করায় স্বদেশ লাইফের বিরুদ্ধে বিমা আইন ২০১০ এর ১০ (ঘ), (ছ) ধারা অথবা ১৩০ (খ) ও ১৩৪ ধারার বিধান মোতাবেক কোম্পানি ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। সেই সঙ্গে সিইও’র ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে কোম্পানির গ্রাহকের প্রিমিয়ামের টাকা লেনদেন হওয়ায় বিমা আইন ২০১০ এর ৮০ ধারা এবং মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা অনুযায়ী সিইও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে আইডিআরএ’র অনুমতি ছাড়া নিয়োগের শর্ত অমান্য করে ইনসেন্টিভ বোনাস গ্রহণ করায় বিমা আইন ২০১০ এর ৮০ ধারা এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপরারণ প্রবিধানমালার ৮(৩) ধারা মোতাবেক সিইও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
যা বলেছেন কোম্পানির সিইও
স্বদেশ লাইফের সিইও ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন আইডিআরএ’র তদন্ত কমিটির কাছে দেয়া বক্তব্যে বলেন, তিনি ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর কোম্পানি ডিএমডি হিসেবে যোগদান করেন। কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আলম চৌধুরী তার সময়কালে (২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত) ৩ জন সিইও নিয়ুক্ত করেন। কিন্তু তারা কেউই ন্যূনতম সন্তোষজনক ব্যবসা অর্জনে সক্ষম হননি, বরং কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন থেকে ৫ কোটি টাকা খরচ করেছেন। যার এক তৃতীয়াংশ ব্যবসাও তারা অর্জন করতে পারেননি।
তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান বোর্ড যখন নুরুল আলম চৌধুরীকে প্রশ্ন করেন যে, কোম্পানির শুরু থেকে আপনি চেয়ারম্যান ছিলেন। বোর্ড কোনো ব্যাপারে প্রশ্ন ও হস্তক্ষেপ করেনি। তাহলে কোম্পানির এই দুরাবস্থা কেন এবং কোম্পানির গচ্ছিত তহবিলের খরচ করা ৫ কোটি টাকা এবং মুনাফা ও অন্যান্যসহ আরও ৩ কোটি টাকা অর্থাৎ ৮ কোটি টাকা কোম্পানির হিসাবে জমা প্রদান করেন। এ পরিস্থিতিতে নুরুল আলম চৌধুরী ওই টাকা জমা বা সঠিক হিসাব না দিয়ে স্বেচ্ছায় ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে কোম্পানির চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন বলেন, বর্তমান বোর্ড যখন তাকে দায়িত্ব দেয় তখন কোম্পানি ছিল মৃত প্রায়। ২০১৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার সময় পাঁচ বছর বয়সী কোম্পানির নবায়ন প্রিমিয়াম ছিলো মাত্র ৮১ লাখ ৭৮ হাজার ৩৮৩ টাকা, যার মধ্যে তার সৃষ্ট সংগঠনের নবায়ন ছিলো ৫৪ লাখ ৩৫ হাজার ৭১৩ টাকা। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর সর্বমোট ব্যবসা করেন ৬ কোটি ২ লাখ ১৩ হাজার ৪১০ টাকা, যার মধ্য নবায়ন ১ কোটি ৬১ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩০ টাকা। এ ছাড়া ২০২০ সালে ২ কোটি ৫০ লাখ ৬৯ হাজার ৯৪৭ টাকা নবায়নসহ মোট প্রিমিয়াম আয় করেন ১০ কোটি ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৪ টাকা। ২০২১ সালে ৪ কোটি ১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৮৭ টাকা নবায়নসহ মোট ১৫ কোটি ১৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৮৩ টাকা প্রিমিয়াম আয় হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সিইও হিসেবে নিয়মিত বেতন-ভাতা না নিয়ে এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এককালীন বেতন-বাতা না দিয়ে ভেঙে ভেঙে বেতন ভাতা দিয়ে মাঠ পর্যায় থেকে প্রথম বর্ষের প্রিমিয়াম ও নবায়নের অর্থ দিয়ে এসবি ও মৃত্যু দাবি পরিশোধ করে গ্রাহক সেবা সুনিশ্চিত রেখে কোম্পানির সুনাম রক্ষা করে চলেছেন এবং প্রতিনিয়ত ব্যবসা ও সংগঠন বৃদ্ধি করে চলেছেন।
এমএএস/এসএনআর/এমএস