প্রবাস

যুক্তরাষ্ট্রে শেষ হলো দুদিনের বর্ণাঢ্য রবীন্দ্রজয়ন্তী

যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণাঢ্যভাবে উদযাপিত হয়েছে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মদিন। উত্তর আমেরিকা রবীন্দ্র উৎসব আয়োজিত নিউইয়র্কের জ্যামাইকা পারফর্মিক আর্ট সেন্টারের শেষ দিন রোববার (৭মে) ছিল হাজারো মানুষের উপস্থিতি।

Advertisement

রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ৬ মে বিকেলে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। এর কোনো প্রবেশ মূল্য ছিল না। নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের আনন্দ মন্দিরে ৭ মে কবি প্রণাম নামে দিনব্যাপী ছিল আরেকটি উৎসব। শান্তিনিকেতন আশ্রম সম্মিলনী ইন্টারন্যাশনাল দর্শনির বিনিময়ে ১২ বছর ধরে বর্ণাঢ্যভাবে এ আয়োজন করছে।

উত্তর আমেরিকার রবীন্দ্র উৎসব প্রাঙ্গণ সাজানো হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিকৃতি ও নিজের আঁকা ছবি দিয়ে। উৎসব প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়েছিল রবি ঠাকুরের অস্থায়ী একটি রেপ্লিকা। নতুন প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ তর্কে-বিতর্কে এবং বিদেশিদের চোখে রবীন্দ্রনাথ শীর্ষক তিনটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আনন্দ মন্দিরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ২০ ফুট বড় ভাস্কর্য

Advertisement

রক্ত করবী’, ‘ভানু সিংহের পদাবলী’ গীতি নৃত্যনাট্যের অংশবিশেষ মঞ্চস্থ করা হয়। মহিতোষ তালুকদার তাপসের নেতৃত্বে প্রদীপ জ্বেলে শত কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের গান মানুষের মনে দাগ কেটেছে। এছাড়াও প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ছিল লাগাতার নানা অনুষ্ঠান।

উৎসবের মিডিয়া সমন্বয়ক পিনাকী তালুকদার জানান, প্রথম বছর আয়োজনে দর্শকের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আগামী দুই বছর পর আবার আরও বড় পরিসরে রবীন্দ্রনাথের জন্ম উৎসব উদযাপন করা হবে।

সংস্কৃতিকর্মী ও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট তানভীর কায়সার অনুষ্ঠানের সমালোচনা করে বলেন, বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৫ ফিট বড় যে রেপ্লিকাটি করা হয়েছে তা মোটেও রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেনি। কালো পোশাক পরা বিকৃত পথিকৃতির এই রেপ্লিকা রবীন্দ্রনাথকে একপ্রকার অবমাননা করার শামিল।

তিনি বলেন, নিউইয়র্কের জনসমাজের গুটিকয়েক চিহ্নিত সাম্প্রদায়িক মানুষকে এ আয়োজনে অর্থের জন্য সম্পৃক্ত করা ও অতিথি হিসেবে সম্মানিত করা সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং রবীন্দ্র চেতনা বিরোধী বলে মনে হয়েছে। রবীন্দ্র উৎসব হলেও আয়োজনটি হয়ে গেছে ৩২ বছর ধরে হয়ে আসা নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলার সম্পূর্ণ কপি একটি অনুষ্ঠান।

Advertisement

উৎসবে রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা উৎসবের শেষ শিল্পী হিসেবে গেয়েছেন অপ্রচলিত কিছু রবীন্দ্র সংগীত । সঙ্গে বর্ণনা করেছেন সে গান লেখার প্রেক্ষাপট ও কবির চিন্তা চেতনার কথা।

তার কণ্ঠে পিন পতন নীরবতায় দর্শক উপভোগ করেছে শুধু যাওয়া আসা, এসো নব নব রূপে, বধু মিছে রাগ করো না, হেলা ফেলা সারা বেলা, আমি চিনি গো চিনি ও গো বিদেশিনী, ওলো সই, ওলো সই আমার ইচ্ছে করে তোদের মতো মনের কথা কই, কৃষ্ণকলি এবং গ্রাম ছাড়া ওই। উৎসবে রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী শ্রেয়া গুহঠাকুরতার গাওয়া গান মানুষকে মুগ্ধ করে। ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার, প্রাবন্ধিক ও বক্তা চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা মানুষের মনে বাঙালি চেতনার শক্তি সঞ্চার করে।

উত্তর আমেরিকার রবীন্দ্র উৎসবে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

উত্তর আমেরিকার রবীন্দ্র উৎসবে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম এবং ভারতের কনসাল জেনারেল রণধীর জয়সুয়াল। ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাষাবিজ্ঞানী ড. পবিত্র সরকার আজীবন সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রবাসী সংগীত শিল্পী সেলিমা আশফাকের হাতে।

উৎসব আহ্বায়ক হাসানুজ্জামান সাকীর সঞ্চালনায় আয়োজক কমিটির সঙ্গে এ সময় মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন উৎসবের উপদেষ্টা সাংবাদিক ও কলাম লেখক হাসান ফেরদৌস ও ডাক্তার জিয়াউদ্দিন আহমেদ এবং টিবিএন২৪ টেলিভিশনের কর্ণধার আহমেদুল বারো ভূঁইয়া পুলক।

উত্তর আমেরিকা রবীন্দ্র উৎসব প্রাঙ্গণে ৫ ফিট বড় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রেপ্লিকা

শান্তিনিকেতন আশ্রম সম্মিলনী ইন্টারন্যাশনাল এর সমন্বয়ক ও অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সুদীপ্তা ভঞ্জ জানান, নিউ জার্সির আনন্দ মন্দিরে রবি ঠাকুরের ২০ ফুট বড় ভাস্কর্যের সামনে খোলা আকাশের নিচে বৈতালিক গান ওই আসছে মহামানব দিয়ে শুরু হয় আমাদের উৎসব।

কলামন্দিরের মা ও প্রকৃতি, ড্যান্স অ্যান্ড মিউজিকের লহ প্রণাম এবং খামখেয়ালি প্রযোজিত নাটক সাধারণ গল্পসহ রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানা পরিবেশনা দর্শক মন্ত্রমুক্তের মতো উপভোগ করেছে। বিকেল সাড়ে চারটায় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অনুষ্ঠানের জন্য টিকিট কাটতে মানুষের ছিল দীর্ঘ লাইন। কণ্ঠসঙ্গীত শ্রেয়া চৌধুরী মানুষকে মুগ্ধ করে রেখেছেন তার কণ্ঠে।

এমআরএম/জিকেএস