ইসরায়েলে ইউরোপ দিবস উদযাপনে একটি কূটনীতিক অনুষ্ঠান বাতিল করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। মূলত ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রী ইতামার বেন-গিভির এতে অংশ নেবেন, এমন তথ্য জানার পর গোটা অনুষ্ঠানই বাতিল ঘোষণা করেছে ইইউ। আয়োজকরা বলছেন, তারা এমন কাউকে জায়গা দিতে চান না, যার মতাদর্শ তাদের মূল্যবোধের বিপরীত।
Advertisement
এর আগে ইসরায়েলি সরকারের পদধারী প্রতিনিধি হিসেবে বেন-গিভির জোর দিয়েই বলেছিলেন, মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে তিনি রীতি অনুযায়ী ভাষণ দেবেন। অনুষ্ঠানটি বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ইইউ’র বিরুদ্ধে ‘অকুটনৈতিক কণ্ঠরোধ’-এর অভিযোগ তুলেছেন এ ইসরায়েলি নেতা।
এটি স্পষ্ট যে, ইসরায়েলি সরকারের মন্ত্রিসভা কোনো কুটনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তৈরি করা মন্ত্রীদের তালিকা অনুযায়ী তার পালা আসার কারণেই বেন-গিভিরের নাম সুপারিশ করেছে।
ইইউ এবং সংস্থাটির উল্লেখযোগ্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে কট্টর ডানপন্থি মতবাদে বিশ্বাস করেন না এমন কোনো মন্ত্রীকে পাঠানোর অনুরোধ করা হলেও বেন-গিভির জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি ওই অনুষ্ঠানে যাবেন।
Advertisement
ইতামার বেন-গিভির
জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক এই মন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি তার বক্তৃতায় ‘জিহাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম’ করার আহ্বান জানাবেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের বলবেন, ‘ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সৈন্য ও ইসরায়েলি নাগরিকদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপে অর্থায়ন করা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর জন্য সমীচীন নয়।’
তবে কট্টরপন্থি এ নেতার অংশগ্রহণের পরিকল্পনার কথা জেনে বেশ কয়েকজন ইইউ প্রতিনিধি ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হওয়ার হুমকি দেন। পরে ইসরায়েলে নিযুক্ত বেশ কয়েকজন ইইউ রাষ্ট্রদূতের বৈঠকে অনুষ্ঠানটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ইসরায়েলি মিডিয়ার দাবি, শুধু হাঙ্গেরি এবং পোল্যান্ডের মতো দুটি রক্ষণশীল ও ইসরায়েলপন্থি দেশ এ বিষয়ে ভিন্নমত দিয়েছে।
Advertisement
এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে ইসরায়েলে নিযুক্ত ইইউ প্রতিনিধি বলেছেন, তারা বার্ষিক একটি অনুষ্ঠানের মতোই মঙ্গলবার ইউরোপ দিবস উদযাপন করবে।
এর প্রতিক্রিয়ায় বেন-গিভিরের দপ্তর ইইউ’র কড়া সমালোচনা করে বলেছে, যে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গণতন্ত্র ও বহু সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব’ করার দাবি করে, তারা ‘অকূটনৈতিকভাবে কণ্ঠরোধের’ চর্চা করা ‘লজ্জাজনক’।
ইসরায়েলের বর্তমান সরকারকে বলা হয় এযাবৎকালের সবচেয়ে কট্টরপন্থি সরকার। গত বছরের শেষের দিকে এটি ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে অনেক ইউরোপীয় দেশের সরকারি প্রতিনিধি বেন-গিভির ও তার আরেক সহযোগী অতি-জাতীয়তাবাদী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকার করেছেন।
সম্প্রতি অধিকৃত পশ্চিম তীরের বেথলেহেমের কাছে ইইউ’র অর্থায়নে ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য নির্মিত প্রাথমিক বিদ্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, ওই অবকাঠামোটি ইসরায়েলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন পশ্চিম তীরের একটি অংশে নির্মিত হয়েছিল, যা ‘অবৈধ ও অনিরাপদ’ ছিল।
ফিলিস্তিনিদের জন্য ইইউ প্রতিনিধি দল টুইটারে বলেছে, এই পদক্ষেপে তারা হতবাক। এর কারণে ৬০ জনের বেশি শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এমন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
সূত্র: বিবিসি বাংলাকেএএ/