মতামত

রিজার্ভের টাকা হ্যাকারের পকেটে কেন?

ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ গত ৫ ফেব্রুয়ারি হ্যাক করেছে চীনভিত্তিক হ্যাকার গ্রুপ। চক্রটি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে এ অর্থ সরিয়ে নিয়েছে শ্রীলংকা ও ফিলিপাইনে। এই অর্থের পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য এটি ভয়ানক দুঃসংবাদ। দেশের মানুষের কষ্টার্জিত টাকা যদি এভাবে হ্যাকারদের পকেটে চলে যায় এরচেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে তরিৎ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে অর্থ ফেরত আনা যায়। কারো কোনো যোগসাজশ বা গাফিলতি থাকলেও সেটির ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিতে হবে। সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতের প্রতি অনাস্থা দেখা দেয় এমন পরিস্থিতি যাতে কোনোভাবেই সৃষ্টি হতে না পারে সেজন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বেশ কিছুদিন আগে এই ঘটনা ঘটলেও গণমাধ্যমে বিষয়টি এসেছে সম্প্রতি। তাও নানা রকম ভাষ্য শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। অর্থমন্ত্রী বলছেন, তিনিও বিষয়টি জানতেন না। এখন অবশ্য হ্যাকড হওয়া অর্থ উদ্ধারে মামলা করার কথা বলছেন তিনি। মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা অ্যাকাউন্ট থেকে চুরির অর্থ উদ্ধারে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।  অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এখানে কোনো রকমের দোষ নেই। এটা ফেডারেল রিজার্ভের, যারা এটা সেখানে হ্যান্ডেল করেন, তাদের কোনো গোলমাল হয়েছে। যদিও তারা বলছেন, তাদের কোনো দায়িত্ব নেই।অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো দোষ না দেখলেও কেন্দ্রীয় এই ব্যাংকের আট কর্মকর্তা গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। তারা সবাই ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেট ডিপার্টমেন্টের ব্যাক অফিসের (সিলিং) কর্মকর্তা। তাদের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব কর্মকর্তার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে র‌্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন একটি কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ‘এধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে’ বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। স্বীকার-অস্বীকার যাই করা হোক না কেন বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের প্রায় ৮০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তচক্র। প্রযুক্তির মাধ্যমে হ্যাকাররা বাংলাদেশের মানুষের কষ্টার্জিত টাকা লুট করে নিয়েছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে। সেই সঙ্গে আসছে নতুন চ্যালেঞ্জও। হ্যাকড হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য প্রথম হলেও বিশ্বে এ ধরনের অপরাধ কিন্তু নতুন নয়। আমাদের কি সেই প্রস্তুতি ছিল? এতগুলো টাকা তো কোনো মামুলি বিষয় নয়। তাছাড়া ভবিষ্যতেও যে এ ধরনের অঘটন ঘটবে না সেজন্যই বা কি প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে, প্রশ্ন উঠছে সে বিষয়েও। এছাড়া সর্ষের মধ্যে ভূত আছে-এমন গুরুতর অভিযোগও কিন্তু উঠেছে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে  এর সুষ্ঠু সমাধান না হলে ব্যাংকিং  ক্ষেত্রসহ সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এবং তা হবে সুদূরপ্রসারী। এটা কারো জন্যই মঙ্গলজনক হবে না। এইচআর/পিআর

Advertisement