জাতীয়

করোনা নিষেধাজ্ঞা ওঠায় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের সুযোগ তৈরি হয়েছে

‘আমাদের মনে রাখতে হবে এই আনন্দের খবর কিন্তু গোটা বিশ্বের জন্যই। সুতরাং, চ্যালেঞ্জটাও সবার জন্য বাড়িয়ে দেবে।’

Advertisement

করোনা মহামারি রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত বিধি-নিষেধ প্রত্যাহারের পরিপ্রেক্ষিতে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও বাংলাদেশের করণীয় প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘করোনা মহামারি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেসব বিধি-নিষেধ দিয়েছিল, তা আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণা গোটা বিশ্বের জন্য একটি স্বস্তির খবর বটে। যদিও বেশ আগে থেকেই করোনার প্রভাব কমে গেছে এবং মানুষ এসব বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করেই জীবনযাপন করে আসছে।’

আরও পড়ুন>> করোনায় বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি ২৮ ট্রিলিয়ন ডলার

Advertisement

‘করোনা পুরো দুটো বছর পৃথিবীকে স্তব্ধ করে দেয়। এমন বিপর্যয় আগে কখনই দেখা যায়নি। এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার নিরন্তর চেষ্টা করছে মানুষ। পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি এখনো। কারণ করোনার যে প্রভাব, তা বহু বছর মানুষকে মূল্য দিতে হবে। এমন অভিঘাত অল্প সময়ে শেষ হয়ে যায় না।’

‘আবার করোনার মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ববাসীকে আরও হতবাক করেছে। এই যুদ্ধ ঘিরে নানা রকম নিষেধাজ্ঞা মানুষের জীবনযানকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে করোনা মহামারির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা মানে কিছুটা আনন্দের খবর দিচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে এই আনন্দের খবর কিন্তু গোটা বিশ্বের জন্যই। সুতরাং, চ্যালেঞ্জটাও সবার জন্য বাড়িয়ে দেবে।’

বাংলাদেশের জন্য নানা চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে এই বিশ্লেষক বলেন, ‘রপ্তানি আয় আমাদের অর্থনীতিকে সচল রাখছে। কিন্তু আমরা একমুখী রপ্তানির ঘর থেকে বের হতে পারছি না। তৈরি পোশাক রপ্তানি ছাড়া কোনো খাত নিয়ে গর্ব করতে পারছি না। আমাদের আরও বহু খাত রয়েছে, যেখানে সরকারের নজর দেওয়া উচিত ছিল। পোশাক রপ্তানির জন্য আমাদের ইউরোপ-আমেরিকার ওপর নির্ভর করতে হয়। এর বাইরেও বাজার রয়েছে। আমরা সেখানে জোর দিতে পারিনি। এটিও কিন্তু আমাদের জন্য এক প্রকার চ্যালেঞ্জ। অন্যরা বসে থাকবে না। কোনো না কোনোভাবে এ ঘাটতি তারা পূরণ করেবে।’

আরও পড়ুন>> রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একগুচ্ছ পদক্ষেপ

Advertisement

‘আর আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্স না এলে বাংলাদেশের অবস্থান কী হতো তা বলা বাহুল্য। করোনার মধ্যেও রেমিট্যান্সের প্রবাহ ছিল। এখন আবার ভাটা পড়েছে। রিজার্ভ সহনীয় পর্যায়ে নেই। রেমিট্যান্স বাড়াতে সরকার যে খুব তৎপর তাও নয়। শ্রমবাজার নিয়ে আমরা উদ্যোগী হতে দেখিনি। বরং শ্রমিকদের নানাভাবে হয়রানি হতে দেখি। দেশে এবং বিদেশে শ্রমিকদের নানাভাবে হয়রানি রেমিট্যান্সের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ে। প্রবাসী শ্রমিকরা ভালো থাকলে, তারা ভালোভাবে দেশের বাইরে যেতে পারলে রেমিট্যান্স বাড়বেই। আগামীর জন্য এসবই বড় চ্যালেঞ্জ।’

করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রপ্তানির অন্য খাতে জোর দিতে হবে। পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্র বাড়ুক। কিন্তু সবাই তো এ খাতের সঙ্গে যুক্ত নয়। ইলেকট্রনিক্স পণ্য, হস্তশিল্প, ওষুধ, চা, পাট শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। করোনা মহামারির নিষেধাজ্ঞা ওঠায় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আবার চ্যালেঞ্জও বাড়ছে।

রেমিট্যান্স কীভাবে বাড়ানো যায় তা এখনই সরকাকে ভাবতে হবে। নতুন বাজার ধরতে হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের যথার্থ মূল্যায়ন করতে হবে। পশ্চিমা বিশ্বে হয়তো শ্রমবাজার বাড়ানো মুশকিল। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে তো আরও চেষ্টা করা যেতে পারে। এই বাজার আমরা না ধরতে পারলে ভারত-পাকিস্তান ধরেবে। শ্রমিকের মানও বাড়াতে হবে।’

‘বহু অর্থ বাইরে পাচার হয়ে গেছে। সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে এই অর্থ ফেরত আনতে। কিন্তু কাজে আসেনি। অর্থ ফেরত আসেনি। এজন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’

আরও পড়ুন>> রমজান ঘিরে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য, দিশেহারা মানুষ

‘যেসব উদ্যোগ নেওয়ার কথা বললাম, তার জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা দরকার সবার আগে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায় না। আর সুশাসন না থাকলে বিনিয়োগ বাড়বে না। দারিদ্র্যের হার বাড়ছে, বেকারত্বের হার বাড়ছে। বিনিয়োগ না থাকার কারণেই এমন হচ্ছে।’

সুশাসন ও জবাবদিহিতা ঘাটতি চরমে। সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা আছে। কিন্তু তাদের আসলে কাজ কী, বোঝা যায় না। এক কেজি পেঁয়াজ উৎপাদন করতে কত খরচ হচ্ছে, কৃষক বিক্রি করছে কত টাকায় আর ভোক্তা কিনছে কত টাকায়- এর হিসাব সরকারের কাছে থাকার কথা। কিন্তু নেই। রোজায় জিনিসের দাম বাড়ানো হলো। রোজার পর আরও বাড়লো। সাধারণ মানুষ না বাঁচলে কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না।’ বলছিলেন, ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

এএসএস/এএসএ/এমএস